এক পা পিছিয়ে দু’পা এগিয়ে থাকতে চাইছে বিজেপি।
কয়লা ব্লক বণ্টন সংক্রান্ত সিএজি রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ইস্তফার দাবিতে সংসদ অচল করে রেখেছে বিজেপি। সঙ্গে বণ্টিত কয়লা ব্লক বাতিল এবং নিরপেক্ষ তদন্তেরও দাবি তুলে আসছে তারা। কিন্তু ধীরে ধীরে সংসদ অচলের দায় তাদের ঘাড়ে এসে পড়ায় বিরোধীদের মধ্যেও তারা ‘একঘরে’ হয়ে পড়ছিল। কৌশল
বদলিয়ে এখন দল ভারী করার লক্ষ্যে নেমে কংগ্রেসকে নতুন জাঁতাকলে ফেলতে চাইছে প্রধান বিরোধী দল।
সংসদ চালানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার ‘শর্ত’ আপাতত মুলতুবি রেখে বণ্টিত কয়লা ব্লক বাতিল করা এবং সিবিআই-কে বাদ দিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিতেই জোর দিচ্ছেন লালকৃষ্ণ আডবাণী-সুষমা স্বরাজরা। মুলায়ম সিংহ যাদব এবং বাম নেতারা সংসদ চালানোর পক্ষপাতী হয়েও একই ভাবে ব্লক বাতিল করা এবং বিচারবিভাগীয় তদন্তের পক্ষে।
এই পরিস্থিতিতে আগামিকাল তড়িঘড়ি কয়লা ব্লক বণ্টন সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রক কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। কয়লামন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়ালও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে সব সংস্থা এখনও পর্যন্ত কয়লা ব্লক পাওয়া সত্ত্বেও খননের কাজ শুরু করেনি, তাদের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। কিন্তু বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি এখনই মানতে কেন্দ্র নারাজ। জয়সওয়ালের বক্তব্য, সিবিআই ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। তাদের তদন্ত সম্পূর্ণ হলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু আজ আডবাণী যেমন তাঁর ব্লগে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন, মুম্বইয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে সুষমা স্বরাজও স্পষ্ট বলে দিয়েছেন সিবিআই তদন্তের উপরে তাঁদের ভরসা নেই। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, বিরোধীদের দু’টি শর্তই মেনে নিলে তার অর্থ হবে নিজেদের দোষ স্বীকার করে নেওয়া। সে ক্ষেত্রে বিরোধীরা ফের প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে সরব হবে।
বিজেপি কি এখন প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার দাবি একেবারেই ছেড়ে দিচ্ছে? বিজেপির এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, “আমরা শুধু কৌশল বদলিয়েছি। দাবি বদলাইনি।” গোড়ায় বিজেপির তিনটি শর্ত ছিল প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা, বণ্টন করা ব্লক বাতিল করা এবং নিরপেক্ষ তদন্ত। “এখনও আমরা প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার দাবি থেকে সরে আসিনি। কিন্তু সংসদ চালানোর শর্তের সঙ্গে সেটি যুক্ত করছি না।” বাকি যে দুটি শর্ত সরকারের কাছে রাখা হয়েছে, সেগুলি মানলে সংসদে আলোচনা চালাতে প্রস্তুত বিজেপি। সে ক্ষেত্রে তাদের ঘাড় থেকেও সংসদ চলতে না দেওয়ার দায় ঘুচবে। আবার একই সঙ্গে, অন্য দুটি শর্ত মানার অর্থই হল, দুর্নীতির বিষয়টি কবুল করে নেওয়া। সরকার তা করলেই আবার নতুন করে প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার দাবি তোলা হবে বলে বিজেপি নেতারাই জানাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, আপাত ভাবে তাঁরা নমনীয় হয়েছেন বলে মনে হলেও বিষয়টা তা নয়। সুষমা স্বরাজ আজ তাঁর সাংবাদিক সম্মেলনেও এ কথা বলেছেন। কংগ্রেসও এই ভয়টাই পাচ্ছে।
এই অবস্থায় আগামিকাল সংসদের অধিবেশন চলবে কি? যথেষ্ট সংশয় রয়েছে সব পক্ষেরই। বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার আগে সনিয়া গাঁধী কথা বলেছেন সুষমার সঙ্গে। মনমোহন সরকারের একাধিক মন্ত্রীও বিরোধীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করছেন। কিন্তু সংসদের অচলাবস্থা কাটানোর শর্ত মানা যে দুষ্কর, তা তাঁরাও বুঝতে পারছেন। সে কারণে আগামিকাল সংসদ শুরুর এক দিন আগেও কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে প্রকাশ্য তরজা এখনও অব্যাহত। শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল, পবন বনশলরা এক দিকে বিজেপিশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলছেন।
আডবাণী-সুষমারা বলছেন, এই দাবি অযৌক্তিক। কারণ, কয়লা বণ্টন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিজেপির বক্তব্য, সেই কারণেই পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত প্রধানমন্ত্রীর। বিজেপি কর্মীরা আজ জয়সওয়ালের বাড়ির বাইরে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। |