এক দিনের ধাক্কায় কাজ হয়নি। এ বার তা-ই ‘জোড়া ধাক্কা’র পরিকল্পনা! জনজীবন তাতে বিপর্যস্ত হলে হোক!
ইউপিএ সরকারের আর্থিক নীতি এবং লাগামছাড়া দুর্নীতির প্রতিবাদে আগামী বছর ২০-২১ ফেব্রুয়ারি, টানা দু’দিন দেশ জুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের পরিকল্পনা নিচ্ছে বাম-অবাম ট্রেড ইউনিয়নগুলি! দেশের প্রথম সারির শ্রমিক নেতৃত্বের একাংশের মতে, স্বাধীন ভারতে এমন দু’দিন ব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট নজিরবিহীন! তা-ও আবার রাজনৈতিক অনুমোদন নির্বিশেষে সবক’টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের আয়োজনে। চলতি বছরেই ২৮ ফেব্রুয়ারি একই সংগঠনসমূহের ডাকে একই দাবিতে দেশ জুড়ে সাধারণ ধর্মঘট হয়েছিল। তাতে অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্মঘট-অবরোধের রাজনীতির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন। তাকে কেন্দ্র করে ধর্মঘটকারীদের সঙ্গে তাঁর সংঘাতও বেধেছে। কিন্তু এত সবের পরেও দেখা যাচ্ছে, ধর্মঘটের রাজনীতি রয়েছে অপরিবর্তিতই!
কেন্দ্রীয় সরকারের স্বীকৃত ১১টি ট্রেড ইউনিয়ন কাল, মঙ্গলবার দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে একটি শ্রমিক কনভেনশন ডেকেছে। সেখানেই ধর্মঘট-সহ অদূর ভবিষ্যতের ‘বৃহত্তর আন্দোলনে’র কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়ার কথা। ওই কনভেনশনে পেশ হওয়ার জন্য যে খসড়া দলিল তৈরি হয়েছে, তাতেই ২০-২১ ফেব্রুয়ারি ৪৮ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘটের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তার আগে এই বছরেরই ১৮-১৯ ডিসেম্বর সারা দেশে আইন অমান্য আন্দোলনের কর্মসূচি ‘অনুমোদন’ করাতে চাওয়া হচ্ছে কনভেনশন থেকে। আর ২০ ডিসেম্বর বড় আকারে ‘সংসদ চলো’ অভিযানের পরিকল্পনা রাখা হচ্ছে।
সর্বভারতীয় একটি শ্রমিক সংগঠনের শীর্ষ নেতার কথায়, “কংগ্রেস, বিজেপি এবং বামেদের অনুমোদিত ইউনিয়নগুলি একজোট হয়ে ২০১১ সাল থেকেই টানা কর্মসূচি নিয়ে চলেছে। এর বাইরেও বিমা, প্রতিরক্ষা, টেলিকম, ব্যাঙ্কের মতো ক্ষেত্রে যে সহ অননুমোদিত ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কিছু স্বতন্ত্র ইউনিয়ন আছে, সকলে মিলে এই বৃহত্তর আন্দোলনে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আমরা বলছি, মানুষ যখন আহত, তখন সরকারকে পাল্টা আঘাত করতে হবে!”
আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং ১০ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি, সব অংশের শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, বোনাস বা মহিলা শ্রমিকদের উপযুক্ত মাতৃত্বকালীন সুবিধার দাবি এ বারের প্রস্তাবিত ধর্মঘটের অঙ্গ। যা গত ফেব্রুয়ারিতেও ছিল। ধর্মঘট ডেকে যখন দাবি আদায় হলই না, তা হলে একই দাবিতে আবার ধর্মঘট কেন? ওই শীর্ষ শ্রমিক নেতার ব্যাখ্যা, “এক দিন ধর্মঘট করে যখন সরকাররে নড়াতে পারিনি, তখন আরও বৃহত্তর প্রতিবাদের পথে যেতে আমরা বাধ্য হচ্ছি!”
শ্রমিক সংগঠনগুলি বারেবারে দাবি এবং প্রতিবাদ জানানো সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী কেন তাঁদের ডেকে আলোচনায় বসছেন না অথচ শিল্পপতিদের সঙ্কট মোচনে বৈঠক করছেন, তা নিয়ে সাম্প্রতিক কালে সংসদের ভিতরে-বাইরে সরব হয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরি, গুরুদাস দাশগুপ্ত, তপন সেনেরা।
এ বারের আইন অমান্য এবং ধর্মঘটের কর্মসূচিতে বামেদের সিটু, এআইটিইউসি-র সঙ্গেই কংগ্রেস-প্রভাবিত আইএনটিইউসি, বিজেপি-র বিএমএস বা ডিএমকে-র এলপিএফ থাকছে। কংগ্রেস বা ডিএমকে-র অনুমোদিত সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কর্মসূচি কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্ব অবশ্য সে সব বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সার্বিক ভাবে দুর্নীতির প্রতিবাদের কথা বলা হলেও নির্দিষ্ট করে কয়লা কেলেঙ্কারি বা টু-জি কেলেঙ্কারি (যাতে ডিএমকে-র নেতা-মন্ত্রীরা অভিযুক্ত) ধর্মঘট বা আইন অমান্যের দাবিসনদে উল্লিখিত হবে না বলেই শ্রমিক সংগঠন সূত্রে খবর।
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস সর্বভারতীয় স্তরেই পরীক্ষার মরসুম। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় বাজেটের আগে প্রতিবাদের নামে কেন ওই সময় ধর্মঘটের পরিকল্পনা হবে, এর কোনও জুতসই ব্যাখ্যা শ্রমিক নেতৃত্বের কাছে নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতার কড়া অবস্থানের মুখে পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিক নেতৃত্বই বা শেষ পর্যন্ত কী করবেন, তার উত্তর অবশ্য সময়ই দেবে! |