বহিষ্কার-পর্ব শেষ করে দলে ফিরেছেন, তা-ও এক বছর হল। কিন্তু কাজকর্মে আগের সেই স্ফুলিঙ্গ কোথায়? প্রচারের আলো থেকেও নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন সযত্নে।
কিন্তু আর কত দিন?
রাজনৈতিক অলিন্দে নতুন অভিষেকের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার কাজ শুরু করে দিয়েছেন তিনি। বিজেপি-র ‘অগ্নিকন্যা’ উমা ভারতী। আর এই কাজে দেশের জাতীয় নদী গঙ্গাকেই হাতিয়ার করছেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গাসাগর থেকে উত্তরাখণ্ডের গঙ্গোত্রী পর্যন্ত ‘গঙ্গা সমগ্র যাত্রা’য় বেরোচ্ছেন উমা। এ মাসের ২১ তারিখ থেকে শুরু হবে তাঁর এই যাত্রা। চলবে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে। গঙ্গার দূষণ রোধ ও তার স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখার দাবিতে এই যাত্রাকে উমা ‘অরাজনৈতিক’ আন্দোলন বললেও আসলে একে কাজে লাগিয়ে নিজের রাজনৈতিক ভিত শক্ত করার কাজটিও তিনি সেরে ফেলতে চান। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি রাহুল সিংহ-সহ সব রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে এখন প্রায় নিঃশব্দে নিয়মিত যোগ রেখে চলেছেন তিনি। উমার নিজের কথাতেই, “বিজেপিতে ফিরে আসার আগেই গঙ্গা নিয়ে আমার আন্দোলন চলছিল। ফলে এই কাজটি আমাকে সম্পূর্ণ করতে হবে। সাধু-সন্তরাই এই আন্দোলনের পুরোধা হবেন। কোনও দলের ব্যানার এতে ব্যবহার করা হবে না। দল আমাকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এই কাজ করার ছাড়পত্র দিয়েছে। তার পর যা রাজনৈতিক গতিবিধি হবে, তা উত্তরপ্রদেশের মাটিতে দাঁড়িয়েই হবে।”
বিজেপির এক নেতার মন্তব্য, “গঙ্গা নিয়ে সকলেরই উদ্বেগ রয়েছে, কিন্তু এ ধরনের আন্দোলন কেউ আগে করেননি। উমা এমন এক বিষয়কে বেছে নিয়েছেন, যাতে সব দলের নেতারই নৈতিক সমর্থন আছে। ১৯৮৫ সালে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী ‘গঙ্গা-অ্যাকশন প্ল্যান’ গঠন করেছিলেন। এখন মনমোহন সিংহ জাতীয় গঙ্গা অববাহিকা কর্তৃপক্ষের প্রধান। ফলে সঙ্ঘ ও বিজেপির সমর্থন নিয়ে এই ‘অরাজনৈতিক’ আন্দোলনেও উমার রাজনৈতিক গুরুত্বই ফের প্রতিষ্ঠিত হবে।” বিজেপি নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, যে উত্তরপ্রদেশ এখন তাঁর কর্মভূমি, এই যাত্রার মাধ্যমে সেখানে শক্তিপরীক্ষার সুবর্ণ সুযোগ পাবেন উমা। আর গঙ্গা যে হেতু জাতীয় বিষয়, তাই একে কাজে লাগিয়ে জাতীয় স্তরে সকলের নজর কাড়ার কাজটিও সুকৌশলে সেরে ফেলবেন তিনি। ওই নেতার কথায়, “গত বছর তিনি দলে ফিরেছিলেন বটে, কিন্তু প্রকৃত অর্থে গঙ্গা আন্দোলনের মাধ্যমেই ঘরে ফিরবেন উমা।”
বিজেপিতে ফের যোগ দেওয়ার পরে উত্তরপ্রদেশ থেকে বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। লালকৃষ্ণ আডবাণী, নিতিন গডকড়ীরা চাইলেও নেতাদের কোন্দলের জন্য উত্তরপ্রদেশে তাঁকে দলের মুখ হিসেবে তুলে ধরা যায়নি। এখন উমা নিজেকে কেবল মাত্র উত্তরপ্রদেশের গণ্ডিতেই বেঁধে রাখতে চান না। জাতীয় রাজনীতিতেও ধীরে ধীরে ছাপ ফেলতে চান। আর সে কারণেই সঙ্ঘ ও বিজেপি নেতৃত্বের অনুমোদন নিয়ে গঙ্গা অভিযান করছেন। আরএসএস নেতা রাম মাধব বলেছেন, “উমা ভারতীর এই যাত্রায় সঙ্ঘের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।” এই যাত্রার মাধ্যমে শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যেও তিনি ঘুরবেন। এই দীর্ঘ যাত্রার অর্ধেকটা সময়ই তিনি কাটাবেন উত্তরপ্রদেশে। ২ ডিসেম্বর গঙ্গাসাগর থেকে গঙ্গোত্রী পর্যন্ত মানব-শৃঙ্খল রচনার ব্যাপারে উদ্যোগী হবেন তিনি।
উমা-ঘনিষ্ঠ এক নেতার বক্তব্য, বিজেপিতে গত বছর ফিরে আসার আগে থেকেই গঙ্গার দূষণ রোধ নিয়ে আন্দোলন করছিলেন উমা। একের পর এক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও নদীগর্ভ থেকে অবৈধ ভাবে বালি তুলে নেওয়ার জন্য গঙ্গার যে ক্ষতি হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে অনশনে বসেছেন। সব দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। এমনকী দশ জনপথে গিয়ে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গেও দেখা করে এসেছেন তিনি। গঙ্গার প্রতি খোদ জওহরলাল নেহরুর যে বিপুল শ্রদ্ধা ছিল, সনিয়া সে কথা উমার কাছে উল্লেখও করেছিলেন। এখন দল-মত-নির্বিশেষে সব সাংসদের কাছে গঙ্গাজল পাঠিয়ে তাঁর এই আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন উমা। এ নিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখাও করেছেন তিনি। উমা নিজে অবশ্য দাবি করছেন, “আমি এই যাত্রা নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি করার পক্ষপাতী নই। গঙ্গা সকলের বিষয়। আমি চাই, সংসদে একটি প্রস্তাব পাশ হোক। আইন সংশোধন হোক। নদীগুলি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রক হোক। এই কাজের জন্য অরাজনৈতিক হতেও আমি রাজি।”
|