৫টি পঞ্চায়েতের প্রায় শ’ দু’য়েক গ্রামের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটিই মহকুমা শহর রামপুরহাটে পৌঁছনোর একমাত্র উপায়। কিন্তু শুক্রবার বিকেল থেকে সেতুটির একাংশ ভেঙে পড়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। স্থানীয় বাসিন্দারা অসুবিধার মধ্যে পড়ছেন রামপুরহাট শহরে বাজার, মহকুমা হাসপাতাল, স্টেশন, স্কুল-কলেজ বা নানা প্রশাসনিক দফতর যাওয়ার ক্ষেত্রে।
রামপুরহাট-দুনিগ্রাম-চাঁদপাড়া পাকা সড়কের উপর জয়কৃষ্ণপুর দিঘি লাগোয়া ক্যানাল পাড়ে ওই সেতুটি অবস্থিত। দখলবাটি পঞ্চায়েতের অধীনস্থ ওই সেতুটি কালুহা, দুনিগ্রাম, হাঁসন ১ ও ২ পঞ্চায়েতগুলির যোগাযোগ-ব্যবস্থার একমাত্র রাস্তা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, শুক্রবার একটি ধান বোঝাই লরি পার হওয়ার সময় সেতুটির একাংশ ভেঙে পড়ে। তারপর থেকেই ওই সেতুর উপর দিয়ে বাস, লরি যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। সেতুর অন্য পাড়ে আটকা পড়ে রামপুরহাট-দুনিগ্রাম ও চাঁদপাড়া রুটের বাস। যদিও ওই ভাঙা সেতু দিয়েই ট্রেকারের মতো কিছু ছোট গাড়ি বিপজ্জনক ভাবে যাতায়াত করছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, এরফলে যেকোনও সময় পুরো সেতুটি ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। |
এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, সেতুটির ভেঙে পড়া অংশ ছাড়াও বাকি অংশের অবস্থাও ভাল নয়। বেশ খানিকটা অংশ বিপজ্জনক ভাবে টিকে আছে। অবিলম্বে সংস্কারের ব্যবস্থা না নিলে সেতুটির বাকি অংশেরও ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। জয়কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা আতাউর রহমান, গোষ্ঠগোপাল মেহেনা, কদর আলি, রফিকুল শেখদের অভিযোগ, “দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে প্রশাসনকে বারবার বেহাল ওই সেতুটির সংস্কারের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু পূর্ত দফতর (সড়ক) ও সেচ দফতরের টানাপোড়েনে সংস্কার হয়নি। কেউই ওই সেতুর দায়িত্ব না নেওয়ায় সাধারণ মানুষকে ভুগতে হচ্ছে।”
রামপুরহাট-দুনিগ্রাম রাস্তাটি পূর্ত দফতরের (সড়ক) রামপুরহাট শাখার মধ্যে পড়ে। পূর্ত দফতর সম্প্রতি ১০ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৩ কিমি দীর্ঘ ওই রাস্তাটি সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। কিন্তু ওই রাস্তার মধ্যেই পড়া সেতুটির সংস্কার দফতরের পরিকল্পনার মধ্যে নেই। দফতরের সংশ্লিষ্ট সহকারি বাস্তুকার সুজয় রায় প্রতিহার বলেন, “সেতুটি সেচ দফতরের। তাই আমাদের কিছু করার নেই।” সেচ দফতরের ময়ূরাক্ষী উত্তর ক্যানালের রামপুরহাট শাখার সহকারি বাস্তুকার জয়দেব মুখোপাধ্যায় বলেন, “সেতুটি সংস্কারের জন্য প্রাথমিক ভাবে একটি নির্মাণ খরচ তৈরি করা হয়। তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জমাও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই পরিমাণ ব্যয়ভার বহণ করা দফতরের পক্ষে সম্ভব না থাকায় সংস্কারের কাজ হয়নি।” সেচ দফতরের ময়ূরাক্ষী উত্তর ক্যানালের নির্বাহী বাস্তুকার তরুণ রায়চৌধুরী বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
সেতু-বিপর্যয়ে গত দু’দিন ধরে ওই বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে যে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে তার সমাধান যে কবে হবে তার উত্তর মিলছে না। |