বহু আমানতকারীকে ভুয়ো পাশবই দিয়েই জালিয়াতি হয়েছে, বার্নপুর বাজার ডাকঘরে জালিয়াতির অভিযোগের তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে এমনটাই মনে করছে পাঁচ সদস্যের কমিটি।
আমানতের টাকা নিয়ে ডাকঘরে জমা না করার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ দিন কয়েক আগে সৌমেন রাউত নামে এক এজেন্টকে গ্রেফতার করে। তাঁকে জেরা করার পরে বার্নপুর বাজারের প্রাক্তন পোস্টমাস্টার তথা বর্তমানে কুলটির ভারপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টার তপন মল্লিককে গত সোমবার গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় দেড় কোটি টাকা জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। শনিবার তপনবাবুকে ফের আদালতে তোলা হলে বিচারক জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তবে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় আসানসোল মহকুমা হাসপাতালের পুলিশ সেলে রাখা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জালিয়াতির অভিযোগের তদন্তভার নিয়েছে এনর্ফোসমেন্ট বিভাগ। আসানসোল সিনিয়র সুপারিনটেন্ডেন্ট অব পোস্ট (এসএসপি) তিনকড়ি ঘোষের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গড়ে তদন্ত শুরু করেছেন ডাকঘর কর্তৃপক্ষ। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাসপেন্ড করা হয়েছে অভিযুক্ত পোস্টমাস্টারকে।
আমানতকারীদের অভিযোগ, সৌমেনবাবুর মাধ্যমে তাঁরা ডাকঘরে টাকা গচ্ছিত রেখেছিলেন। মাস দেড়েক আগে কয়েক জন আমানতকারী জানতে পারেন, তাঁদের টাকা ডাকঘরে জমা পড়েনি। দিন পনেরো আগে আরও কিছু আমানতকারী একই কথা জানতে পারেন। তাঁরা হিরাপুর থানায় অভিযোগ করলে সৌমেনবাবুকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ধরা হয় তপনবাবুকে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত আর এক ডাককর্মী পলাতক।
টাকা মার যাওয়া আমানতকারীদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত কমিটির সদস্যেরা জালিয়াতির ধরন বোঝার চেষ্টা করছেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বহু আমানতকারীকে ভুয়ো পাশবই দেওয়া হয়েছে। টাকা জমা নিয়ে সেই বইতে ডাকঘরের শিলমোহর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডাকঘরের খাতায় তার কোনও হিসেব নেই। অনেক সময়ে আমানতকারীদের থেকে টাকা নিয়ে সাধারণ সাদা কাগজে ডাকঘরের শিলমোহর দিয়ে টাকার অঙ্ক লিখে ফেরত দেওয়া হয়েছে বলেও তদন্তকারীরা জেনেছেন। অনেক আমানতকারীর কাছ থেকে আবার ‘বিয়ারার’ চেক নেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি জেনেছে, জাল পাশবইগুলিতে বার্নপুর বাজার ডাকঘরের আসল শিলমোহর রয়েছে। এই শিলমোহর ডাকঘরের পোস্টমাস্টারের অধীনে থাকে। তাই জালিয়াতির ঘটনায় ওই পোস্টমাস্টার জড়িত বলে তদন্ত কমিটির অনুমান। আসানসোলের এসএসপি তিনকড়িবাবু বলেন, “সবিস্তার তদন্ত চলছে। এর বেশি কিছু এখন বলা যাবে না।”
এ দিকে, বার্নপুর বাজার ডাকঘরে প্রায়ই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বহু আমানতকারী। ডাকঘর কর্তৃপক্ষ বৈধ কাগজপত্র দেখে অনেককে টাকা ফেরতের আশ্বাসও দিয়েছেন। আমানতকারীদের অনেকেরই অভিযোগ, টাকা জমা দেওয়ার সময়ে প্রাক্তন পোস্টমাস্টার তপন মল্লিক সব সময় এজেন্ট সৌমেন রাউতের মাধ্যমে আসতে বলতেন। এক আমানতকারী বাসন্তীদেবী বলেন, “অনেক কষ্টে পাঁচ লক্ষ টাকা জমিয়েছিলাম। এখন শুনছি, কিছুই জমা পড়েনি।” শ্রাবণী আইচ নামে আর এক জন বলেন, “আমার ১৪ লক্ষ টাকা গিয়েছে।” স্থানীয় বাসিন্দা প্রতীক গুপ্তের কথায়, “প্রায় দেড় লক্ষ টাকা জমিয়েছিলাম। হঠাৎ জানলাম, কিছুই নেই।” |