কমিশনারেটের বর্ষপূর্তিতে মত দুর্গাপুরের
উন্নত হয়েছে পরিকাঠামো, তবু বিরাম নেই অপরাধের
পুলিশের সংখ্যা বেড়েছে। ট্রাফিক পরিকাঠামো উন্নত হয়েছে। কিন্তু চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অপকর্মের বিরাম নেই। কিনারা হয়নি বহু অপরাধেরও। কমিশনারেট গঠনের এক বছর কেটে যাওয়ার পরে এমনই অভিজ্ঞতা দুর্গাপুরের বাসিন্দাদের। তাঁদের মতে, অবৈধ কয়লা পাচার কিছুটা কমেছে। পুলিশের উপরে মানুষের আস্থাও আগের থেকে বেড়েছে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যতটা উন্নত হবে বলে আশা করা হয়েছিল, প্রথম বছরে অন্তত ততটা হয়নি। পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ জানান, শুরুর দিকে পরিকাঠামোগত কিছু অসুবিধা ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
২০১১-এর ১ সেপ্টেম্বর কাজ শুরু করে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট। এর পরে অপরাধ রুখতে নানা উদ্যোগ হয়েছে। সিসিটিভি বসানো হয়েছে শপিং মল, হোটেল, জনবহুল মোড়ে। এক হাজার সিভিক পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। বাসিন্দাদের মতে, এই সময়ে কয়লা পাচারও কমেছে। কিন্তু অন্য অপরাধমূলক কাজকর্ম লেগেই আছে। চুরি, ডাকাতি, এমনকী দিনের আলোয় ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটেছে।
গত অক্টোবরে এ-জোনের আশিস মার্কেট সংলগ্ন একটি স্কুলের পাশের জঙ্গল থেকে কয়েকটি তাজা বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। তবে ফেব্রুয়ারিতে পরপর বেশ কয়েকটি ভয়ানক অপরাধের ঘটনা ঘটে। এক গভীর রাতে দুর্গাপুর মহিলা কলেজের নৈশ প্রহরীকে ভোজালি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে দুষ্কৃতীরা। পুলিশি তদন্ত শুরু হয়। তবে এখনও কোনও কিনারা হয়নি। সে মাসেই বিকেলে খেলতে গিয়ে আবর্জনার মধ্যে পড়ে থাকা বোমা ফেটে মৃত্যু হয় রাঁচি কলোনির সাত বছরের এক বালিকার। কলোনির বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, রাতে দুষ্কৃতীরা এলাকায় আসা-যাওয়া করে। প্রতিবাদ করলে তারা হুমকি দেয়। পরে এলাকায় পুলিশি টহল বাড়ানো হয়।
এর দিন কয়েক পরেই ভর সন্ধ্যায় সিটি সেন্টারের উদয়শঙ্কর বীথিতে নিজের বাড়িতেই খুন হন আসানসোলের মহিলা থানার ওসি শম্পা বসুর বাবা, ডিএসপি-র প্রাক্তন কর্মী দিলীপকুমার বসু। পুলিশ তদন্ত শুরু করে। পৌঁছন কমিশনার অজয় নন্দও। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। কিন্তু সেই খুনের কিনারা হয়নি আজও।
জুনে ধান্ডাবাগের একটি স্কুলের পিছনে ফের বোমা ফাটার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায়। বল ভেবে সেটি নিয়ে খেলছিল খুদেরা। তবে কেউ হতাহত হয়নি। এ সব ঘটনা ছাড়াও সারা বছর মোটরবাইকে চড়ে এসে সেপকো, বিধাননগর ইত্যাদি এলাকায় মহিলাদের গলার হার ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার তো বিরাম নেই। বড় ডাকাতির ঘটনা না ঘটলেও লুঠপাটের ঘটনাও লেগে রয়েছে।
তবে কমিশনারেট গঠনের পরে আগের তুলনায় সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলেই মনে করছেন শহরের অনেকে। ‘দুর্গাপুর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর এগজিকিউটিভ সদস্য কবি দত্তের কথায়, “কমিশনারেট হওয়ার পরে পুলিশের উপস্থিতি বেড়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। মানুষের আস্থা বেড়েছে। তবে এক বছর সময়টা তো মোটেই যথেষ্ট নয়।” এ-জোনের বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক দেবেন্দ্র বসুর কথায়, “আগে তো থানায় যাওয়ার আগে অনেকে দু’বার ভাবতেন। এখন সে পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টেছে।” ‘অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’-র দুর্গাপুর শাখার পক্ষে সমীর বসু বলেন, “শিল্পাঞ্চলে গাড়ির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে করে। পৃথক পরিকাঠামো গড়ে ওঠায় ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে।” তবে তাঁর মতে, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নিযুক্ত সিভিক পুলিশকর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশি পরিষেবা আরও ভাল হবে, এমনই আশা দুর্গাপুরবাসীর।

গত ছ’মাসে বেড়েছে অপরাধ, মানলেন কমিশনার
গত ৬ মাসে দুই মহকুমায় অপরাধের মাত্রা বেড়েছে, কমিশনারেটের বর্ষপূর্তিতে এ কথা স্বীকার করেছেন পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ। তিনি আরও জানান, বেশ কয়েকটি ঘটনার কিনারা হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা এখনও হয়নি। শনিবার পুলিশ কমিশনার বলেন, “মহিলা থানার ওসি-র বাবাকে দুর্গাপুরে খুন ও বার্নপুরে সিপিএম কর্মী খুনের কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। এই দু’টির তদন্তভার এখন সিআইডি নিয়েছে।” গত ৬ মাসে অপরাধের সংখ্যা বাড়ল কেন, সে প্রসঙ্গে কমিশনারের দাবি, কমিশনারেট হওয়ার পরে মানুষ ভরসা করে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে আসছেন। তাই সে সব লিপিবদ্ধ হচ্ছে। তাঁর দাবি, এখন অবৈধ খাদানের রমরমা অনেক কমেছে। তিনি জানান, ইসিএলের সাহায্যে অবৈধ খাদানগুলি বুজিয়ে ময়দান গড়ার পরিকল্পনা হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকল্পে ইসিএলের তরফে সাত লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে কমিশনারেটকে। তা দিয়ে অপরাধ রোখার নানা ব্যবস্থা হবে বলে কমিশনারের আশ্বাস। তিনি আরও জানান, আসানসোল ও দুর্গাপুর মহকুমার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফাঁড়িকে থানায় উন্নীত করা হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.