বিধি ভেঙে ‘পদোন্নতি’। তারই জেরে অভিযোগের আঙুল উঠেছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের পরিচালন সমিতির এক সদস্যের বিরুদ্ধে।
মিহির গোস্বামী নামে ওই সদস্য জেলা তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতাও।
অভিযোগ, মিহিরবাবুর ‘ঘনিষ্ঠ’ দুই বাস কন্ডাকটারকে নিয়মবিরুদ্ধে ভাবে ‘লোয়ার ডিভিসন ক্লাকর্’ করা হয়েছে। সিটু ও আইএনটিইউসি প্রভাবিত সংস্থার কর্মী সংগঠন তো বটেই, এমনকী ওই নিয়োগের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠনের নেতৃত্বও। ঘটনার জেরে জেলা তৃণমূলে শুরু হয়েছে চাপান উতোর। অভিযোগ, নিয়ম না মেনে ওই দুই কন্ডাকটারকে করণিকের পদে নিয়োগ করা হয়েছে। যদিও সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি মুরুগণ বলেন, “পরিচালন বোর্ডের সিদ্ধান্ত মেনে দুই কণ্ডাকটারকে ওই পদে নিয়োগ করা হয়েছে।”
যদিও ম্যানেজিং ডিরেক্টরের ওই বক্তব্য পরিচালন বোর্ডের অন্যতম সদস্য তথা তৃণমূল নেতা আবদুল জলিল আহমেদ মেনে নেননি। তাঁর দাবি, “বোর্ড মিটিংয়ে শিলিগুড়ির শুধু একজন কর্মীর পদ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে জানতে পারি ওই তালিকায় আরও একজনের নাম ঢুকেছে। কেমন করে এটা হল বুঝতে পারছি না।”
এনবিএসটিসি ড্রাইভার্স অ্যান্ড তৃণমূল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আবদুর রহমানের ক্ষোভ, “কিছুদিন আগে নিগমের চেয়ারম্যান কোচবিহারে এসে বেআইনি পদোন্নতির ঘটনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তার পরপরই এ ভাবে নিয়ম মেনে পরীক্ষা না নিয়ে দু’জন কন্ডাকটারকে ক্লার্ক পদের দায়িত্ব দেওয়ার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।” তাঁর অভিযোগ, “ওই দুই কর্মীর একজন পরিচালন বোর্ডের সদস্য, তৃণমূল নেতা মিহির গোস্বামীর ঘনিষ্ঠ।” ওই ঘটনায় দলের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে আবদুর সাহেবের দাবি। যদিও মিহিরবাবু ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “আমার নয়, ওই কর্মী জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ঘনিষ্ঠ।”
যদিও কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা নিগমের প্রাক্তন চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথবাবু পাল্টা অভিযোগ করেন, “মিহিরবাবুর অনুরোধেই ওই কর্মীকে পুরভোটে টিকিট দেওয়া হয়েছিল। দলের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার বদলে উনি মিহিরবাবুর পেছনেই বেশি ঘুরে বেড়াতেন।” তিনিও সি মুরুগণের বক্তব্যের বিরোধিতা করে অভিযোগ করে বলেন, “সংস্থার বোর্ড মিটিংয়ে দু’জন কন্ডাকটারের পদ পরিবর্তনের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।” এ দিকে যাঁকে নিয়ে এই বিতর্ক সেই কর্মী অবশ্য বলেন, “১৯৯১ সালে পদ পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছিলাম। রাজনৈতিক বিষয়ে কিছু বলার নেই। যা বলার কর্তৃপক্ষ বলবেন।” তবে মিহিরবাবুরা যাই বলুন না কেন সংস্থার কর্মী সংগঠনের নেতৃত্ব তা মানছেন না। সিটুর এনবিএসটিসি এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক জগতজ্যোতি দত্ত বলেন, “পরীক্ষা নিয়ে যোগ্যদের দায়িত্ব বদল করাটাই নিয়ম। এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। কেমন করে ওই দুই কর্মীর পদ পরিবর্তন হল তার জবাব কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে।” প্রতিবাদে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে ইনটাক প্রভাবিত এনবিএসটিসি ওয়ার্কাস অ্যাসোসিয়েশন। |