জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চের স্থায়ী পরিকাঠামোর কাজ দু’বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা না হওয়া পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের ছ’টি জেলার মানুষের সুবিধার্থে আপাতত জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয়, অস্থায়ী ভবনেই বেঞ্চ চালুর আর্জিও জানালেন তিনি।
শনিবার, তাঁর তিন দিনের উত্তরবঙ্গ সফরের শেষ অনুষ্ঠান, সার্কিট বেঞ্চের স্থায়ী ভবনের শিলান্যাস করে, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ পটেলকে আপাতত অস্থায়ী ভবনেই সার্কিট বেঞ্চ চালুর অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমরা দু’বছরের মধ্যেই স্থায়ী ভবন তৈরি করে দেব। পাশাপাশি একটি অস্থায়ী ভবনও রয়েছে জলপাইগুড়িতে। মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে আমাদের অনুরোধ দ্রুত সেই ভবনে সার্কিট বেঞ্চের কাজ চালু হোক।”
|
তবে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এই শিলান্যাস অনুষ্ঠান রাজ্য সরকারের প্রথম বড় পদক্ষেপ।
রাজ্য সরকার আমাদের বলেছে, দু’বছরের মধ্যে স্থায়ী ভবনের কাজ সম্পূর্ণ হবে। তা হয়ে গেলে স্থায়ী ভাবে সার্কিট বেঞ্চ চালু হবে জলপাইগুড়িতে।” তবে তিনি জানান, ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের তরফে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়ে বেঞ্চ চালু করার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনুরোধ করা হয়েছে। এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত। তিনিও বলেন, “সব কিছুরই একটা সময় আছে। পরির্পূণতা আছে। সেই নির্ঘণ্ট মেনেই সার্কিট বেঞ্চের কাজ শুরু হবে।”
শিলান্যাস অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে প্রধান বিচারপতি-সহ আইন বিভাগের কর্তারা অস্থায়ী ভবনটি ঘুরে দেখেন। সেখানে কয়েকটি ঘরের পরিসর বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি, এজলাস ও অনান্য অফিসের আসবাব কেমন হবে সে ব্যাপারেও মতামত দেন তাঁরা।
উত্তরবঙ্গের দীর্ঘ দিনের চাহিদা সার্কিট বেঞ্চকে ঘিরে এ দিন সকাল থেকেই আবেগে ভেসেছে জলপাইগুড়ি। ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যেও শহর জুড়ে ছিল উৎসবের মেজাজ। অনুষ্ঠান শুরুতেই তাই চাক বেঁধে থাকা ভিড় থেকে বেজে উঠেছে শাঁখ, মহিলারা দিয়েছেন উলু। |
শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: অশোক মজুমদার |
সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন বাম আমলেই সার্কিট বেঞ্চ তৈরির পরিকাঠামো তৈরি হয়েছিল। তিনি বলেন, “অস্থায়ী ভবনেই আপাতত বেঞ্চ চালু হবে কি না তা স্পষ্ট হল না। আমাদের দাবি মানুষের কথা ভেবে অস্থায়ী ভবনেই কাজ শুরু হোক। তবে, বামফ্রন্টের আমলেই বেঞ্চ গড়ার যাবতীয় পরিকাঠামো তৈরি হয়েছিল। ফলে, নিছক শিলান্যাসেই যেন কাজ থমকে না যায়।”
বামফ্রন্টের শাসনকালেই পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য পাহাড়পুরে স্থায়ী পরিকাঠামোর জন্য জমি অধিগ্রহণ করলেও সে কাজ অবশ্য শুরু হয়নি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের কটাক্ষ, “আমরা কাজ ফেলে রাখি না। সার্কিট বেঞ্চের শিলান্যাস করে উত্তরবঙ্গের মানুষকে ভালবাসার বার্তা পৌঁছে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।”
|
• ১৯৬৩ |
সার্কিট বেঞ্চ তৈরির দাবি জলপাইগুড়ি বার আসোসিয়েশনের |
• ১৯৭৫ |
প্রস্তাব গৃহীত |
• ১৯৯৩ |
শিলিগুড়ি না জলপাইগুড়ি, তা নিয়ে বিতর্ক |
• ১৯৯৪ |
দু’শহর ঘুরে দেখলেন হাইকোর্টের তিন বিচারপতি |
• ১৯৯৮ |
জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চ গড়ার মত প্রতিনিধিদলের |
• ২০০০ |
জলপাইগুড়ি- শিলিগুড়ির মাঝামাঝি বেঞ্চ গড়ার প্রস্তাব তৎকালীন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রাম জেঠমলানির |
• ২০০১ |
জলপাইগুড়িতে বেঞ্চ হবে, সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টের |
• ২০০৬ |
সবুজ সঙ্কেত কেন্দ্রের |
• ২০০৭ |
স্থায়ী ভবন তৈরিতে ৪০ একর জমি অধিগ্রহণ |
• ২০১১ |
৮০ কোটি বরাদ্দ রাজ্যের |
• ২০১২ |
বেঞ্চের স্থায়ী পরিকাঠামোর শিলান্যাস |
|