ভাইচুং ভুটিয়াকে ছোঁয়া এবং টপকে যাওয়া। আজ, রবিবার নেহরু কাপের ফাইনালে সুনীল ছেত্রীর সামনে হাজির এই জবরদস্ত জোড়া সুযোগ!
নেহরু কাপে ১৯ ম্যাচে ৮ গোল আছে ভাইচুংয়ের। সুনীল ১৩ ম্যাচেই করে ফেলেছেন ৮ গোল। আজ আর একটা করলেই প্রাক্তন অধিনায়ককে টপকে যাবেন বর্তমান। দ্বারকার ফুটবল হাউসে ঢোকার মুখে সাজানো আছে ছবিটা-- দ্বিতীয়বার খেতাব জিতে হাসিমুখে কাপ হাতে ভাইচুং। ক্যামেরুনকে হারিয়ে হ্যাটট্রিকটা করতে পারলে, প্রাক্তনকে ছোঁওয়ার পাশাপাশি ওখানেও জায়গা হয়ে যাবে সুনীলের।
পর্তুগাল-ফেরত নতুন ভারত অধিনায়কের এই সব রেকর্ড-টেকর্ড আপাতত মাথায় নেই। তবে হ্যাঁ, ট্রফি নিয়ে ছবিটা অবশ্যই চান। বললেন, “হ্যাঁ, ট্রফি নিয়ে ছবিটা অবশ্যই তুলতে চাই। তবে সেটা দলের বাকি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে।” এর পরে যোগ করলেন, “ভাইচুং আর গত দু’বার এই ট্রফি জেতা দলের প্রত্যেকে চাইছে আমরা ট্রফিটা পাই। ভাইচুং, রেনেডিরা কিন্তু ড্রেসিংরুমে না থেকেও আছে।” ক্যামেরুনকে হারানো কঠিন কাজ মেনে নিলেও ঘরের মাঠে ট্রফি জেতার সুযোগটা হাতছাড়া করতে রাজি নন সুনীল। “আট বছর জাতীয় দলে খেলছি। কখনও এত শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে খেলিনি। জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার কথা মাথায় রেখেই বলছি। কিন্তু এটাই বলছি, ওদের হারানো সম্ভব। শুক্রবার গোলের সুযোগ তো আমরাই বেশি পেয়েছি। ওদের গোলটা তো হাফ চান্স থেকে।” আত্মবিশ্বাসী শোনায় সুনীলকে।
ফাইনালে ওদের দলে সেরা আট জন ঢুকবে। তা সত্ত্বেও জেতার কথা বলছেন? জেপি গ্রিনে অনুশীলনের শেষে প্রশ্নটায় সুনীল বেশ শান্ত গলায় বললেন, “জিততে হলে প্রতিটা বল দখলের জন্য ঝাঁপাতে হবে। কোনও বলেই হেরে যাওয়া চলবে না। আর ওই ১৭ নম্বরকে (কিঙ্গু এমপোন্ডো) খেলতে দেওয়া যাবে না। যত আক্রমণ সব ওর পা থেকেই শুরু হয়।” কোভারম্যান্স ব্রিগেডের নেতা মনে করছেন, যুদ্ধের প্রস্তুতি মন্দ হয়নি। “কোচ স্ট্র্যাটেজি তৈরি করছেন। ফুটবল মাঠে কেউ অজেয় নয়। সিরিয়ার বিরুদ্ধে আগের দু’টো নেহরু কাপ ফাইনালে সবাই আমাদের আন্ডারডগ ধরেছিলেন। আমরাই কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হই।”
পুরো দলকে একসঙ্গে নিয়ে চলার চেষ্টা করছেন সুনীল। টিম সূত্রের খবর-- সুব্রত পাল, রহিম নবি, গৌরমাঙ্গী সিংহ, মেহতাব হোসেনের মতো সিনিয়রদের গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ দিনও দেখা গেল অনুশীলনের পর তিন জন সিনিয়রের সঙ্গে ক্যামেরুন ম্যাচ নিয়ে কথা বলতে বলতে টিম বাসের দিকে এগোচ্ছেন জাতীয় দলের হয়ে ৩৬টি গোল করে ফেলা সুনীল। বলছিলেন, “আমাদের টিমের রিজার্ভ বেঞ্চ বলে কিছু নেই। সবাই সেরাটা দিতে তৈরি। শুক্রবার প্রস্তুতি ম্যাচে সেটা প্রমাণিত। কোচ এটাই চাইছেন। দলে যেন রির্জাভ বেঞ্চ আর প্রথম একাদশের মধ্যে ফারাক না থাকে। আমি সেই ভাবনার সঙ্গী।”
অধিনায়ক হিসাবে বাড়তি চাপ? মাথা নাড়েন সুনীল, “না না। সিনিয়র-জুনিয়র মিলে আমাদের টিমটা বেশ ব্যালান্সড। আমি আলাদা কেউ নই। সবার ভাবনাই এক, ট্রফি চাই।” দিল্লিতে থাকেন সুনীলের পরিবার। তাঁর বাবা-মা-বোন নিয়মিত আসছেন মাঠে। আত্মীয়রাও। ভাইচুং নেই। তাই সুনীলের ১১ নম্বর জার্সি পরে মাঠে দেখা যাচ্ছে বহু ছেলে-মেয়েকে। জার্সি বিকোচ্ছেও দেদার। কেমন লাগছে? স্মার্ট, বুদ্ধিমান কোভারম্যান্সের টিমের ক্যাপ্টেনের ঝটিতি জবাব, “ট্রফিটা না জিতলে এ সবের কোনও মূল্য নেই।”
সুনীল সত্যিই নিজেকে বদলে ফেলছেন! |