আজ নেহরু কাপ ফাইনাল
‘অদম্য সিংহ’ বশ মানাতে নবিদের অস্ত্র মনের জোর
‘অদম্য সিংহ’ বনাম ‘নীল বাঘ’!
আফ্রিকার শক্তি আর স্ফূর্তির মিশেলের বিচ্ছুরণ বনাম ডাচ ঘরানার পাসিং ফুটবল!
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে লড়াই অবশ্য আদপে ৫৯ বনাম ১৬৮-র!
এ রকম একটা মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে নেহরু কাপ জয়ের ঐতিহাসিক হ্যাটট্রিক কি সুনীল ছেত্রী-নবি-সুব্রত পালদের পক্ষে সম্ভব?
আবেগ বলছে সম্ভব। অঙ্ক বলছে খুব কঠিন!
ভারতের নতুন ডাচ কোচ উইম কোভারম্যান্স বলছেন, “ক্যামেরুনের শক্তি জানি। দুর্বলতাও। আমার ছেলেরা আমার মতোই জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।”
ক্যামেরুন কোচ ইমানুয়েল বোসো-র পাল্টা, “আমরা ঠিক কেমন খেলি সেটা ফাইনালে বোঝাব। আণরা কাপ জিততে না পারলে সেটা অঘটন হবে।”
জেপি গ্রিন মাঠে শনিবার দুপুরে ফাইনালের চূড়ান্ত প্রস্তুতির পর ‘নতুন ভারত’-কে দেখে মনে হল, নিজেদের ছাপিয়ে যাওয়ার অদম্য তাগিদ যেন টগবগ করছে পুরো দলে! ‘দেখে নেব’ মানসিকতা যেন সত্যিই কাজ করছে নবিদের কথাবার্তা, হাঁটাচলায়।
আফ্রিকার দলের বিরুদ্ধে ভারতের খেলার সুযোগ কমই হয়। এএফসি কাপ বা এশিয়াডের দৌলতে ‘নীল বাঘের’ ঘোরাফেরা জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া বা অস্ট্রেলিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে বহু বছর। ফলে ভাইচুং ভুটিয়া বা তাঁর পরবর্তী-জমানায় আফ্রিকান সিংহদের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রায় ঘটেইনি। রবিবার কোভারম্যান্স যে ব্রিগেড নিয়ে নামবেন তাঁরাও একযোগে জানাচ্ছেন, কখনও ক্যামেরুনের মতো শক্তিশালী দলের মুখোমুখি হননি।
কিন্তু শুধু ইচ্ছেশক্তি আর ‘হার মানব না’ মনোভাব নিয়ে কি এ রকম প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারানো সম্ভব? এক দিন আগে ফাইনালের মহড়ার ম্যাচে যাঁরা খেলেছিলেন, তাঁদের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে পাওয়া গেল ইতিবাচক তথ্যই।
নবি: ওদের দুটো উইং আটকে দিলেই শেষ হয়ে যাবে। নিজেদের আমাদের মাঝমাঠটা জমাট রেখে পাল্টা আক্রমণে গেলে গোল পাওয়া সম্ভব।
ভারতের দুই ভরসা সুনীল-নবি।
আমাদের মাঝমাঠে মেহতাব এবং লেনির সঙ্গে ডিফেন্সের ফাঁক হলেই ওরা গোলের সুযোগ পাবে। আমরা সেটা আগের দিন ৮৮ মিনিট হতে দিইনি। ফাইনালে পুরো ম্যাচ হতে দেব না।
মেহতাব: ওদের সেট পিস মুভমেন্ট ভাল নয়। এ ছাড়া প্রতিটা বলে আমাদের ট্যাকলে যেতে হবে।
লিগে ক্যামেরুন তিনটে গোল খেয়েছে। পাল্টা আক্রমণে গেলে ওদের ডিফেন্সে প্রচুর ফাঁকফোকর তৈরি হয়। সেটা আমাদের কাজে লাগাতেই হবে।
কিন্তু প্রথম দলের আট জনকে বিশ্রাম দিয়ে শুক্রবার ফাইনালের রিহার্সাল দিতে নেমেছিল ক্যামেরুন। তাতেই ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছিল! এ দিন প্র্যাক্টিসের আগে কথাটা শুনে চটে যান কোভারম্যান্স। “ওদের রিজার্ভ বেঞ্চের সঙ্গে মূল টিমের পার্থক্য কিন্তু খুব বেশি নয়। আমরাও তো সুনীল-সুব্রতকে খেলাইনি,” বলার পর ভারতের কোচ যোগ করেন, “আফ্রিকার সঙ্গে এশিয়ার দেশগুলোর স্কিলের কিন্তু খুব একটা তফাত নেই।” কাদের নিয়ে তিনি চূড়ান্ত যুদ্ধে নামতে চলেছেন তা অবশ্য ফাইনালের ২৪ ঘণ্টা আগেও বলতে চাননি সুনীলদের কোচ। চ্যানেলের লোকজনকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘এখন যত পারুন ছবি তুলুন। বল নিয়ে প্র্যাক্সিস শুরু হলে ক্যামেরা গুটিয়ে নিতে হবে।” তার পরেও পেনাল্টি প্র্যাক্টিস, পাসিং বৈচিত্রের অনুশীলন করিয়ে নবিদের সবাইকে সাঁতারের পুলে পাঠিয়ে দেন কোভারম্যান্স।
যা খবর, তাতে রজার মিল্লার দেশের ৩-৫-১-এর বিরুদ্ধে ৪-৪-১-১ ফর্মেশনে টিম নামাতে পারেন কোভারম্যান্স। সুনীল ছেত্রীকে একমাত্র স্ট্রাইকার রেখে সিরিয়া-মলদ্বীপের বিরুদ্ধে যে দল খেলেছিল সেই ‘উইনিং কম্বিনেশন’ অটুট রাখতে চাইছেন। হোটেলে ফিরে রাতের টিম মিটিংয়ে এ বারের নেহরু কাপে ক্যামেরুনের চারটে ম্যাচের সিডি দেখিয়ে ডাচ-কোচ মেহতাবদের বুঝিয়ে দিয়েছেন, ঠিক কোথায় এই টিমটাকে ‘মারা’ সম্ভব। নিজের ফুটবলারদের জন্য কোভারম্যান্সের চার টোটকা
১) বিপক্ষের উইং-কে খেলতে দিও না।
২) নিজেদের গোলমুখ জমাট রাখো। সুযোগ পেলেই প্রতি-আক্রমণে যাও।
৩) গোলের সুযোগ আসবেই, কাজে লাগাও।
৪) একটা ভুল করলে মাথা নিচু করে না থেকে আর কোনও পরেরটা ভুল না হয় সেই চেষ্টা করো। মুখে বিপক্ষের টিমগেমের কথা বললেও ক্যামেরুনের দুই ফুটবলারের দিকে আলাদা নদর রাখার কথা বলেছেন। ১৭ নম্বর জার্সির এমপোন্ডো আর ১৩ নম্বর জার্সি পরা থিয়েরি।
ক্যামরুন কোচ জানেন, নেহরু স্টেডিয়ামে শুধু ভারতের এগারো ফুটবলার নয়, সঙ্গে তিরিশ হাজার দর্শকের শব্দব্রহ্মকেও সামাল দিতে হবে। নাগাড়ে বলে যাচ্ছেন, “ভারত ভাল খেলছে। কিন্তু রজার মিল্লা দেখতে চান আমাদের ক্লাব ফুটবলাররাও বিদেশে গিয়ে ট্রফি জিততে পারে। বিশ্বফুটবলে আমাদের একটা নিজস্ব ব্র্যান্ড আছে, সেটা দেখাতে চাই।” তাঁর নিশানায় ভারতের চার জনসুব্রত, সুনীল, নবি এবং লেনি।
গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পর দিল্লি এখন খটখটে। ফাইনালে ভারতের দু-একজন ফুটবলার বৃষ্টি চাইলেও, বিদেশি কোচ চাইছেন না। দলে বড় চেহারার ফুটবলার কম বলেও ভাবিত নন পজেশনাল ফুটবলের ভক্ত কোভারম্যান্স। “আমার ছেলেরা যখন ম্যাচের আগে দেশের জাতীয় সঙ্গীত গায়, তখন ওদের শরীরগুলোকে অনেক বড় মনে হয়।”
দেশাত্মবোধের আবেগে ট্রফি জয় সম্ভব ভারতীয় ফুটবলে ডাচ-যুগের স্বপ্ন!

ভারত ক্যামেরুন
শক্তি: জমাট রক্ষণ। প্রতি-আক্রমণে গোল করার
ক্ষমতা। সেট পিস।

দুর্বলতা: উচ্চতা। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে ফাঁক।
গোলের সুযোগ নষ্ট।

সেরা তিন: সুব্রত পাল, সুনীল ছেত্রী, রহিম নবি।
শক্তি: বড় চেহারা। গতি। থার্ড-ম্যান মুভ থেকে
গোল করতে পারা।

দুর্বলতা: সেট পিস। রক্ষণে ফাঁক। প্রতি-আক্রমণের
সামনে নড়বড়ে।

সেরা তিন: কিঙ্গু পোন্ডো, মেকন থিয়েরি, বেবে কিঙ্গু।
এক্স ফ্যাক্টর: বৃষ্টি। দর্শক সমর্থন।
নেহরু কাপে মুখোমুখি: ১৯৯৩-এ ১-১ এবং ২-২। ২০১২-এ ০-১।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.