ভুয়ো ব্যবসা দেখিয়ে ৪০০ কোটির ব্যাঙ্ক-ঋণ |
আদতে ডাল আমদানির ব্যবসা করেন তাঁরা। সেই ব্যবসাকেই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বিরাট করে দেখিয়ে চারটি ব্যাঙ্ক থেকে চারশো কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন পিতা-পুত্র। তার পরে সেই টাকায় নেমেছিলেন জমি-বাড়ির ব্যবসায়। তার জন্যও আবার ঋণ নিয়েছেন দেদার। সিবিআই সূত্রের খবর, কলকাতা শহরে এত বড় ব্যাঙ্ক-প্রতারণা সাম্প্রতিক কালে ঘটেনি।
শুক্রবার বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার সাউথ এন্ড পার্কের বাসভবন থেকে পুত্র আনন্দ কোঠারি (৪০)-কে ধরে সিবিআই। শনিবার সকালে তাঁকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। আনন্দের ডান পা ভাঙা ছিল। ১৭ অগস্ট তাঁর বাড়িতে হানা দিয়েছিলেন সিবিআই অফিসারেরা। কিন্তু শেষ মূহূর্তে বাড়িরপিছনের জানলা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে পালিয়ে যান আনন্দ। তখনই তাঁর ডান পা ভাঙে। শুক্রবারে শরৎ বসু রোডের একটি হোটেল থেকে ধরা পড়ে যান তিনি। আনন্দের বাবা রঞ্জিত সিংহ কোঠারি (৬৫) অবশ্য এখনও বেপাত্তা।
সিবিআই সূত্রের খবর, ‘প্রাইম ইমপেক্স’ সংস্থার নামে কোঠারি পরিবারের ডাল-এর ব্যবসা বহু দিনের। তাঁরা কানাডা-অস্ট্রেলিয়া থেকে মটর ডাল আমদানি করতেন। মুগ ও মুসুরও আমদানি করা হত। অভিযোগ, মাঝে ১০-১২টি সংস্থা তৈরি করেন তাঁরা। কাগজে-কলমে দেখানো হয় ‘প্রাইম পালস লিমিটেড’, ‘মেহুল ওভারসিজ লিমিটেড’ সংস্থাগুলিও বিদেশ থেকে ডাল আমদানি করছে। প্রাইম ইমপেক্স যে ডাল আমদানি করছিল, একই ডাল অন্য সংস্থাও আমদানি করেছে বলে কাগজপত্র তৈরি করা হয়। তদন্তে জানা যায়, এই সংস্থাগুলি আদতে ডাল আমদানিই করেনি।
সিবিআই সূত্রের খবর, কোঠারি পরিবার প্রায় ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা করতেন। কাগজে-কলমে সেই ব্যবসার আয়তন দেখানো হয়েছিল ১১০০ কোটি টাকারও বেশি। এই ভুয়ো কাগজ দেখিয়ে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ২০১১ সালে ডাল আমদানি-র জন্য ৪০০ কোটি টাকা তুলে নেন তাঁরা। ব্যাঙ্কের অভিযোগ পেয়ে ২০১১ সালের জুন মাসে তদন্তে নামে সিবিআই। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চার ব্যাঙ্কের বেশ কিছু অফিসারকে ইতিমধ্যেই বদলি করা হয়েছে। কয়েক জনের পদোন্নতিও আটকে দেওয়া হয়েছে।
তদন্তে সিবিআই জানতে পারে, ৪০০ কোটি টাকা নিয়ে কোঠারি পরিবার প্রধানত জমি-বাড়ির ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু, প্রতিটি সম্পত্তি নির্মাণের সময়ে তার কাগজপত্র দেখিয়েও ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছেন। সব মিলিয়ে ঋণের পরিমাণ ৫০০ কোটিও বেশি বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের ধারণা। |