পুরসভা থেকে লোকসভা, জলপাইগুড়িতে টানা তিন দশক যে কোনও ভোটেই ডান-বাম সব দলই সার্কিট বেঞ্চকেই প্রধান ইস্যু করেছে। শহরবাসীর আবেগজড়িত সেই সার্কিট বেঞ্চের স্থায়ী ভবনের শিলান্যাসের আগের সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনে নেমে মানুষের ভিড়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনে মুখ্যমন্ত্রীর মত কোনও ভিভিআইপি আসার ঘটনাও এই প্রথম। শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীকে নিয়ে আসা স্পেশাল ট্রেন স্টেশনে থামতেই শঙ্খ আর উলুধ্বনি শুরু হয়। স্টেশনের প্রায় দুশো মিটার দূরে ব্যারিকেড তৈরি করা ছিল। মুখ্যমন্ত্রী স্টেশনের বাইরে পা রাখতেই সেই ব্যারিকেড যেন উধাও! |
বিকেল থেকে স্টেশনের সামনে অপেক্ষা করা ভিড় হামলে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির সামনে। তরুণ তরণী থেকে শুরু করে মধ্যবয়স্ক এমনকি বৃদ্ধাদেরও ছুটে আসতে দেখে মুখ্যমন্ত্রী বলতে থাকেন, “আরে ব্যথা পাবেন। পড়ে যাবেন।” ভিড়ে চাপে ছিটকে পড়লেন এল পুলিশ কর্মী। মুখ্যমন্ত্রী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্মী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। বেগতিক দেখে মুখ্যমন্ত্রীকে কোনওমতে গাড়িতে তুলে দিলেন নিরাপত্তাকর্মীরা। সামনের আসনে বসে তখন মুখ্যমন্ত্রী বলে ওঠেন, ‘সাবধানে আস্তে গাড়ি চালান। কেউ যেন চোট না পায়।”
টাউন স্টেশন থেকে পোস্টঅফিস মোড় প্রায় চারশ মিটার রাস্তার চারদিকে তখন কালো মাথার ভিড়। প্রায় ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলছে। গাড়ির পাশে ছুটে চলেছেন জেলা পুলিশ সুপার সুগত সেন থেকে শুরু করে পদস্থ পুলিশ কর্তারা। পোস্ট অফিস মোড়ের ভিড় থেকে গৃহবধূ বাসন্তী দত্ত চিৎকার করে বললেন, “দিদি আমরা সার্কিট বেঞ্চ চাই। জলপাইগুড়ি শহরকে একটু দেখুন।”
এ দিন সার্কিট বেঞ্চের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ে শহরে মশাল মিছিল করে যুব তৃণমূল। আজ, শনিবার সকাল ১১টায় সার্কিট বেঞ্চের শিলান্যাসের আগে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ন পটেল সহ পাঁচ বিচারপতির প্রতিনিধিদল সার্কিট বেঞ্চের অস্থায়ী ভবন পরিদর্শন করবেন। চা শ্রমিকদের করম পুজোয় ছুটি-সহ বোনাসের দাবিতে এদিন আদিবাসী বিকাশ পরিষদের পাঁচ প্রতিনিধি দল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে জলপাইগুড়িতে এসেছিলেন। পরিষদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মুকুল রায়, আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব সার্কিট হাউসে বৈঠক করেন। বৈঠকের পরে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাজেশ লাকড়া বলেন, “আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর করম পুজোয় ছুটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রীরা আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী বিধানসভার মরশুমে বিষয়টি তোলা হবে।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “গতবারও এই ছুটি নিয়ে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়েছিল। এবারও আমরা বিষয়টি দেখব।” সার্কিট বেঞ্চের শিলান্যাস মঞ্চ তথা স্পোটর্স কমপ্লেক্সের মাঠে মঞ্চ এবং অনান্য প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে শুক্রবার রাতে মাঠে গিয়ে তদারকি করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। |