রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বালুরঘাট রেল মানচিত্রে জুড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আগামী দিনে জেলায় রেলের কামরা তৈরির কারখানা গড়া হবে। শুক্রবার দুপুরে বুনিয়াদপুরে সেই কারখানার শিল্যানাস অনুষ্ঠানের সাক্ষী হতে উপচে পড়েছিল ভিড়। কাতারে-কাতারে মানুষ। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি পর্যন্ত জনজোয়ারে থমকে যাচ্ছিল বারেবারেই। অনুষ্ঠান মঞ্চের প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়তে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীকে। প্রবল দাবদাহের মধ্যে ওই চার কিলোমিটার রাস্তা স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় হেঁটে সটান মঞ্চে পৌঁছে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘ট্রেড মিল’-এ অভ্যস্ত মুখ্যমন্ত্রী ততটা হাঁপাননি। কিন্তু, তাঁর পুলিশকর্তা, নেতা-আমলাদের অনেককেই দেখা গেল ঘেমেনেয়ে হাঁফাচ্ছেন। প্রবল গরমেও মাঠ ভর্তি জনসমাবেশ দেখে আপ্লুত মুখ্যমন্ত্রী ‘গরমে সকলের কষ্ট হচ্ছে’ উল্লেখ করে অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। |
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রেলের মানচিত্রে এই জেলা ছিল না। আমি না-থাকলে একলাখি-বালুরঘাট রেল হতো না। এই জেলায় কোনও শিল্প-কারখানা নেই। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এখানে ওয়াগান ফ্যাক্টরি গড়ার কথা বলেছিলাম। এতে বহু মানুষের এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এ জেলায় রেলের বাকি কাজ মুকুল রায় করবেন।” বুনিয়াদপুরে রেলের কারখানার শিলান্যাসের পাশাপাশি এক গুচ্ছ রেল প্রকল্প ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি, রেলের ওই মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই জেলায় জেলা পরিষদের রাস্তা, সেতু খারাপ হয়ে আছে। আমরা চেষ্টা করছি ঠিক করার। যে হেতু জেলা পরিষদ। অন্য রাজনৈতিক দলের ফল পঞ্চায়েত ভোটেই আপনারা ঠিক করবেন। মুখ্যমন্ত্রী জনতার উদ্দেশে বলেছেন, যাকে বুঝবেন, তাকেই দেবেন।” সরকারি সভায় মুখ্যমন্ত্রী জেলা পরিষদের সমালোচনা করে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেন কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের সিপিএম পরিচালিত দজেলা পরিষদের সভাধিপতি মাগদালিনা মুর্মু্। তিনি বলেন, “সরকারি অনুষ্ঠান। সেখানে আমাদের সমালোচনা হল। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের কথা তুলে ঘুরিয়ে প্রচার চালানো হল। এটা ঠিক হল না।” |
তাঁর নালিশ, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ সহ অর্থ কমিশনের মতো একাধিক প্রকল্পের টাকা রাজ্যের কাছ থেকে আমরা পাচ্ছি না। মুখ্যমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট ভাবে রাস্তার কথা বললেও কেন তা হচ্ছে না, কোন দফতরে টাকা আটকে রয়েছে সেটা জানাতে পারতাম।” এ দিনের সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাম শরিক আরএসপি-এর সাংসদ প্রশান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী চাষিদের জন্য ভাবছেন। আমাকে যথেষ্ট সম্মান দিয়েছেন এর বেশি কিছু বলার নেই।” এদিনই বালুরঘাট থেকে কলকাতার মধ্যে সপ্তাহে তিন দিন চলা ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি আগামী ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ‘তেভাগা এক্সপ্রেস’ নামে সপ্তাহে ৬ দিন চালুর কথা ঘোষণা করা হয়। বালুরঘাটে গৌড় লিঙ্ক ট্রেনটি সময়মতো চলে না জেনে মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে উপস্থিত রেলের জেনারেল ম্যানেজার সহ পদস্থ কর্তাদের সতর্ক করে বলেন, “সময় মতো গৌড় লিঙ্ক ট্রেন চালাতে হবে।“ পাশাপাশি, ট্রেনটিতে তিনি আরও দুটি এসি কামরা চালু করতে রেলমন্ত্রী মুকুলবাবুকে নির্দেশ দেন।
|