অবরোধের মুখে আটকে পড়ল দুই সচিবের গাড়ি
সাইরেনেই ‘সর্বনাশ’।
শুক্রবার সকালে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের কাছে পানিশালাতে জাতীয় সড়ক আটকে কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন শ’খানেক চাষি। দু’পাশে দাঁড়িয়ে পড়েছিল সার সার গাড়ি। তাতে কোনও হেলদোল ছিল না বিক্ষোভকারীদের। কিন্তু বেলা পৌনে দশটা নাগাদ হঠাৎ সাইরেন বাজিয়ে পুলিশের জিপ এগিয়ে আসতেই জনতার নজর ঘুরে গেল সেই দিকে। জিপটাও তত ক্ষণে ভিড়ের মুখে দাঁড়িয়ে পড়েছে। তার পিছনেই আসছিল একটি গাড়ি। থমকে গেল সেটাও। তার জানলায় পরিচিত মুখ। রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ।
উত্তর দিনাজপুরের পানিশালায় অবরোধ। ছবি: তরুণ দেবনাথ
ওই গাড়িতেই ছিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু তিনি তত পরিচিত মুখ নন। তবে তিনিও যে এক জন ‘ভিভিআইপি’ তা বুঝতে পেরেছিলেন বিক্ষোভকারীরা। স্থানীয় কংগ্রেস নেতা অভিজিৎ সাহা বলেন, “সাইরেন বাজিয়ে গাড়ি আসছে দেখেই বুঝেছিলাম পিছনে কোনও ভিআইপি আছেন। তারপরে গাড়িটা দাঁড়িয়ে যেতে দেখি জানলায় সমরবাবুর মুখ।” এ তো প্রায় পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা। ওই আন্দোলন চলছিল রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল গড়তে দ্রুত জমি অধিগ্রহণের দাবিতে। সেখানে খোদ মুখ্যসচিবকেই আচমকা সামনে পেয়ে যাওয়ায় মুহূর্তে আন্দোলনের তীব্রতা বেড়ে যায়। ঘনঘন স্লোগান শুরু হয়। কেউ কেউ চিৎকার করতে থাকেন, “মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে আপনারা বলুন, চাষিরা জমি দিতে চাইছে। তাড়াতাড়ি জমি অধিগ্রহণ করে তা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে তুলে দিন। হাসপাতাল হোক এখানেই।”
অবরোধকারীদের অনেকেরই লক্ষ্য তখন সমরবাবুদের গাড়ি। সেই গাড়ির অবশ্য কাচ তোলা। তার ভিতরে দেখা যাচ্ছিল মুখ নামিয়ে বসে রয়েছেন সমরবাবু। বাসুদেববাবু অবশ্য চেয়েছিলেন বাইরের দিকে। তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে অবরোধকারীদের মধ্যেও উত্তেজনা তখন বাড়ছে। কেউ কেউ এগিয়েও যাচ্ছিলেন ওই গাড়ির দিকে। পুলিশ তত ক্ষণে অবশ্য নেমে সেই গাড়ির দু’পাশে দাঁড়িয়ে পড়েছে। এমনিতেই প্রচুর মানুষ চারপাশে। তার উপরে রাস্তা জুড়ে গাড়ির জটলা। এর মধ্যে মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া কিন্তু প্রায় অসম্ভব ছিল।
অবস্থা বুঝে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতারাই। রায়গঞ্জ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি লিয়াকত আলি চাষিদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলে দেন। পুলিশ কোনওমতে রাজ্য প্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্তার গাড়ি বার করে দেয় জটলা থেকে। তবে তাঁদের গাড়ি বেরিয়ে যাওয়ার পরেও বেশ কয়েকজন চাষি চিৎকার করতে করতে পিছনে পিছনে ছুটছিলেন।
তবে মিনিট দশ বারোর এই ঘটনা একেবারেই কাকতালীয়। রায়গঞ্জের ওই কংগ্রেস নেতারা দাবি করেছেন, তাঁরা জানতেন না সমরবাবুরা ওই সময়ে ওই রাস্তা দিয়ে যাবেন। আরও আশ্চর্য, পুলিশ-প্রশাসনও জানত না, সমরবাবুদের এই বালুরঘাট থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার পথেই শুরু হয়েছে অবরোধ। কিন্তু অবরোধ তো চলছিল প্রায় দেড় ঘণ্টা আগে থেকে। তাও আবার জাতীয় সড়কের উপরেই। সে খবর কেন পুলিশ-প্রশাসনের কাছে ছিল না? জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “আমি যত দূর শুনেছি, কংগ্রেস নেতৃত্ব আচমকাই চাষিদের নিয়ে পথ অবরোধ শুরু করেন। তবু দেড় ঘণ্টা আগে অবরোধ শুরু হওয়ার পরেও কেন সে খবর পাওয়া যায়নি, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” জেলার পুলিশ সুপার দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “পানিশালায় পথ অবরোধ হচ্ছে, তা আমরা জানতামই না। জানলে ওই রাস্তা দিয়ে কিছুতেই মুখ্যসচিবদের গাড়ি নিয়ে যাওয়া হত না।” তবে সেই সঙ্গেই প্রশাসন জানিয়েছে, শিলিগুড়ি যাওয়ার কোনও বিকল্প রাস্তা এখানে নেই। কিন্তু সেক্ষেত্রেও অবরোধের মুখ থেকে বাঁচাতে সমরবাবুদের পানিশালা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে রায়গঞ্জেই কেন দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল না, সে প্রশ্নেরও জবাব মেলেনি। তবে জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি তথা বর্তমানে রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অসীম ঘোষ বলেন, “চাষিরা স্বেচ্ছায় জমি দিতে রাজি, তা অত্যন্ত ভালো খবর। আমরাও চাই রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি হোক। চাষিদের ইচ্ছের কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হচ্ছে। কিন্তু কংগ্রেস রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাষিদের সামনে রেখে যা করছে, তা সমর্থন করা যায় না।” রায়গঞ্জের সাংসদ কংগ্রেসের দীপা দাশমুন্সি বলেন, “এলাকার মানুষ যখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে জমি দেওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছেন, তখন বোঝা উচিত রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতালের চাহিদা কতটা জরুরি। মুখ্যমন্ত্রী এখানে এসে যে রাজনীতি করে গেলেন তা এলাকার মানুষ পছন্দ করেননি। এটা রাজনীতির বিষয়ও নয়। রাজনীতির ঊধ্বের্র্ উঠে উন্নয়নের কাজ করা উচিত।” ওই বিক্ষোভের পিছনে কংগ্রেস, বিশেষত দীপাদেবীর মদত ছিল বলে তৃণমূলের নেতৃত্বের একাংশের অভিযোগ। দীপা অবশ্য তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। ওই হাসপাতালের দাবিতে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে তাঁরা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। দীপা বলেন, “আমাদের যা বলার ওই আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই বলব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.