|
|
|
|
|
আপনি কি ওয়াটার অব ইন্ডিয়া? |
তেষ্টা পাক, বা না পাক হাতে বোতল মানেই ঢক ঢক। কিন্তু আপনার শরীরযন্ত্রটি
এত জলের ধাক্কা সইবে তো? কী কী ক্ষতি হতে পারে লাগামছাড়া জল খেলে, জেনে নিন। |
কয়েক বছর আগের কথা। ক্যালিফোর্নিয়ায় এক আজব প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। জল খাওয়ার প্রতিযোগিতা। যে সবচেয়ে বেশি জল খেতে পারবে, সে পাবে একটা ভিডিয়ো গেম মেশিন। তবে টয়লেট যাওয়া চলবে না। চলল ঢকঢকিয়ে জল খাওয়া। কিছু ক্ষণ পর থেকেই কিন্তু প্রতিযোগীদের মধ্যে দেখা গেল একটা উসখুস ভাব। অনেকেরই চোখেমুখে ফুটে উঠল অস্বস্তির ছাপ। বিশেষ পাত্তা দিল না উদ্যোক্তাদের কেউ। কষ্ট বেড়ে যাওয়ায় প্রতিযোগীদের এক জন বাড়িও ফিরে গেলেন। পরে, বাড়ি থেকে উদ্ধার হল সেই আঠাশ বছরের মেয়েটির মৃতদেহ। মৃত্যুর কারণ, ওয়াটার ইনটক্সিকেশন।
জলের বিষক্রিয়া। আশ্চর্য কথা, না? জলই তো জীবন। জল কখনও এ ভাবে মৃত্যুর কারণ হতে পারে নাকি? জলের কত গুণ! সেই ছোট্টবেলা থেকে পড়ে আসছি, শুনে আসছি, জেনে আসছি যে, পরিমিত জল খেলে মাথা ধরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ (মূলত ডিহাইড্রেশন-এর কারণে) আটকানো যায়, কিডনি ভাল থাকে, শরীর থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ইউরিনের মাধ্যমে বেরিয়ে যায় বলে ইউরিনারি ইনফেকশন-এর ভয় কমে, খসখসে ভাব চলে গিয়ে ত্বক মোম-মাজা হয়, আরও কত কী! এর কোনওটাই তো আর ‘মিথ’ নয়! তবে? বিশেষজ্ঞরা কিন্তু বলছেন এক অন্য কথা অতিরিক্ত জল পান শরীরের ক্ষতি তো করেই, সময় সময় মৃত্যুরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
|
|
আপনার তেষ্টা পেয়েছে? জল খান আশ মিটিয়ে। কিন্তু মোটেই তেষ্টা পায়নি, অথচ কেউ বলল, আর আপনি ঢক ঢক করে জল খেতে শুরু করলেন, এমন হলে ক্ষতি তো হবেই। ক্যালিফোর্নিয়ার ওই মেয়েটি নাকি প্রতিযোগিতায় জল খেয়েছিল দুই গ্যালন। এত জল এক সঙ্গে শরীরে ঢুকলে তা উপকার তো করবেই না, বরং মারাত্মক ক্ষতি করবে। কী ভাবে?
১) ব্লাড ভেসেল-এর মধ্যে জলীয় পদার্থের পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দেবে। আমাদের শরীর তো আর বেলুন নয়, যে অতটা জলীয় পদার্থ বাড়লেও জায়গায় কুলিয়ে যাবে। তাই, বাড়তি রক্ত হার্ট আর রক্তকোষের ওপর চাপ তৈরি করবে।
২) অল্প সময়ে অনেকটা জল শরীরে ঢুকলে কিডনির ওপরেও প্রচুর চাপ পড়বে। কারণ, সারা শরীরে জলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ জল শরীর থেকে বার করতে হবে। ফলে কিডনিদের অতিরিক্ত খাটতে হবে। এতে ক্ষতির সম্ভাবনা এড়ানো যাবে না।
কিন্তু বেশি জল খাওয়ার সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, মস্তিকের ‘সোয়েলিং’। সেটা কী? আমরা জানি, আমাদের শরীরে যে জল ঢোকে তা মূলত ইউরিন আর ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। অল্প পরিমাণ জল বেরোয় স্টুল-এর সঙ্গেও। কম সময়ে অনেকটা জল খেয়ে ফেললে সেই জল শরীর থেকে বের করার জন্য যতটা দ্রুত কিডনিকে কাজ করতে হবে, কিডনি তা করতে পারে না। ফলে, রক্তে ঘনত্ব কমবে, কমবে এতে থাকা নুনের পরিমাণও। রক্তের এই বাড়তি জল গিয়ে পৌঁছবে শরীরে অন্যান্য কোষে। ফেঁপে উঠবে কোষগুলো। আমাদের মগজের কোষও যদি ঠিক একই ভাবে ফেঁপে ওঠে, তা হলে মাথায় প্রবল চাপ পড়বে। দেখা দেবে নানা সমস্যা মাথার যন্ত্রণা থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত। ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিযোগীদেরও কিন্তু প্রথম দিকে এই মাথার যন্ত্রণাই দেখা দিয়েছিল।
এ তো গেল বড় বড় ক্ষতির কথা। বেশি জল খাওয়ার তাৎক্ষণিক ক্ষতি কী হতে পারে? খুব সহজ। কিছু সময় পর পরই টয়লেট দৌড়নো। বিরক্তিকর তো বটেই, ঘুমেরও দফারফা।
তা হলে ঠিক কতটা পরিমাণ জল খাব, জানব কী করে? আপনার খাওয়াদাওয়া, সারা দিনের পরিশ্রম, যে জায়গায় থাকেন তার আবহাওয়া, অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করবে সারা দিনে আপনাকে কতটা জল খেতে হবে। বলা হয়, প্রতি দিন যদি আপনি প্রচুর সবজি, ফল খান তা হলে আপনার জলের দরকার কম পড়বে। কারণ, এই সব খাবারদাবারেই প্রচুর জল আছে, যা চাহিদার অনেকটাই মিটিয়ে দেবে। কিন্তু যদি তেল-মশলা দেওয়া খাবার বেশি খান, তা হলে জলও বেশি খেতে হবে।
হয়তো সারা দিনে আপনি প্রচুর পরিশ্রম করেন, বা এমন জায়গায় থাকেন, যেখানে ঘাম বেশি হয়। এই সব ক্ষেত্রে শরীরে জলের প্রয়োজনীয়তাও বাড়বে। অন্য দিকে ঘাম যাঁদের কম ঝরে, তাঁদের শরীরে জলের চাহিদাও স্বাভাবিক ভাবেই কম। আবার, যাঁদের ডিহাইড্রেশন-এর প্রবণতা আছে, তাঁদের সব সময়ই মনে হতে পারে, একটু জল পেলে ভাল হয়। জল খাওয়ার ব্যাপারে প্রায় কোনও সময়ই তাঁদের আপত্তি দেখা যায় না। এই সব নানা বিষয়ের ওপর নির্ভর করে শরীরে জলের প্রয়োজন কতটা।
অনেকের ধারণা, ইউরিনের রং দেখে বোঝা যায়, আমাদের শরীরে জলের প্রয়োজন আছে কি না। ইউরিনের রং হলুদ? বিপদসংকেত। কমছে শরীরে জলের পরিমাণ। কিন্তু এখানে মনে রাখতে হবে, কিছু খাবারে মেশানো সিন্থেটিক পদার্থ বা অত্যধিক আয়রন সমৃদ্ধ খাবার থেকেও ইউরিনের রং পরিবর্তন হতে পারে। ডা. শান্তনু নন্দী জানাচ্ছেন, কিডনি ও হার্টের কিছু রোগেও নিয়ন্ত্রিত হারে জল খাওয়া উচিত। তাই এ সব বিষয় ধর্তব্যের মধ্যে না রেখে আচমকা নিজে থেকেই জল খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে যাওয়া মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আর অবশ্যই, জল খান সইয়ে সইয়ে, আস্তে আস্তে। ঢক ঢক করে অনেকটা জল এক সঙ্গে গিলে নিলে কিন্তু শরীরের পুরো সিস্টেম-এর তালটাই যাবে কেটে। |
|
|
|
|
|