রাজস্থান ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টিভাল
রাজকাহিনি পড়লেই, আস্ত রাজপুতানাটা সেঁধিয়ে যায় ঘুমের স্বপ্নে, আর জাগা মনের খেয়ালখুশিতেও। বাপ্পাদিত্য রাণা প্রতাপরা টগবগ করে ঘোড়া ছোটায় ঘাসখড়ের রুখা জমিতে। ভীষণ যুদ্ধ করে শ্রান্ত হয়ে ফিরে আসে উঁচা উঁচা পাথুরে দুর্গে। তার অন্দরে বিচিত্র রাগরাগিণী গুনগুনিয়ে ঘুরছে। আশপাশের গ্রামগুলোয় ঝিঁঝির ডাকের ফাঁকে ফাঁকে মেঠো বীণার মিঠে সুর ভেসে উঠছে।
রাজস্থানের নাচ গান জীবন নিয়ে ভারী নরম আমরা। টিভিতে আয়োরে আয়োরে আয়োরে মারো ঢোলনা শুনলেই চ্যানেল ঘোরাতে ভুলে যাই। রাজস্থানি ফোক সং-এ ভূতের রাজার জাদু। আরও কাছ থেকে পরশ চান? তবে দুর্গাপুজোটা পেরোলেই ডেস্টিনেশন জোধপুর। কোজাগরী লক্ষ্মীপূর্ণিমার জোছনা ঢালা রাতে সেখানে বসবে রাজস্থানি গানবাজনার আসর, রাজস্থান ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টিভাল।
পাঁচ দিনের ডে-নাইট জলসা। ২৬ অক্টোবর থেকে শুরু। গোটা মারওয়াড় ঢুঁড়ে ২৫০ ওস্তাদকে বাছাই করা হয়। মেহরনগড় দুর্গের চাতালে কার্তিক মাসের পহেলা রোদ্দুরে ঠেস দিয়ে বসেন তাঁরা। আর পরম মমতায় ছড় বুলাতে থাকেন বাজনার পাঁজরায়, চাপড়ে চাপড়ে জাগিয়ে তোলেন ঢোল-করতালের গমগমে জওয়ান বোল, দম নিংড়ে শিঙা ফুঁকে বাতাসকে কাঁপিয়ে অস্থির করে তোলেন। কেউ অন্তরের অন্তরস্থল থেকে বাহির করে আনেন সাত সুর।
কখনও সুফি সাধকরা গান গেয়ে ভোর আনেন, কখনও তন্ডুরা ঝাঁঝ বাজিয়ে নৃত্য করেন মারওয়াড়ের মেঘওয়ালরা। ভোঁপু বাজিয়ে, দুন্দুভি পিটিয়ে সে কী জশন-উল্লাস। বেদুইন মেয়েরাও চলে এক হাত গয়না পরে, টিকলি নথের বাহার দেখিয়ে ঢোলক-থালি নৃত্যে চোখ ঠিকরে দেন অতিথিদের। দেওতা তেজাজি’র উদ্দেশ্যে নজরানা পেশ করা হয় স্পেশ্যাল নাচ-গানা। কোনও কোনও দল এসে পশু পাখিদের ছদ্মবেশ ধরে হইহল্লা করে যায়। তার নামই স্বর্গনৃত্য। কারা জানি এসে আবার রাজপুতানার বীরদের গাথা-কাব্য নাচ গান অভিনয় করে দেখায়। গানের সঙ্গে সঙ্গে রাজস্থানি ইতিহাসের পাতাগুলোও উড়ে বেড়ায়। মেওয়ার, চিতোর, গেরিলা-যুদ্ধ, সেই জোধা-আকবর, জওহর ব্রত। নিঃশ্বাস থমকে আবার শুনতে থাকে একবিংশ দুনিয়া।
রাতের ব্যাপারখানাই আলাদা। কখনও দুর্গের ভেতরমহলে, কখনও খোলা মহল্লায় মাচা বেঁধে উঠে পড়ে আধুনিক পপস্টাররা। গিটারবাদক, জ্যাজগায়কদের বিদেশি সরগমেই তাল ঠুকে ঠুকে নাচে গাঁও কি গোরিগণ।
চাঁদনি রাতে এ সব দেখলে কার না ঘোর লাগে? মরুদেশের ঘুরঘুট্টি অন্ধকারে শহরিয়া বাবুজিটি তখন কেল্লার নিস্তব্ধ পাথরে ছেলেবেলার নিষিদ্ধ চিত্রহার শুনছেন। ‘মোরনি, বাগামা বোলে আধি রাত মা/ ছনন ছন চুড়িয়া খনক গয়ি দেখ সাহিবাঁ...
কল্পনার শ্রীদেবী না ক্ষুধিত পাষাণের বুকে ঘুমিয়ে থাকা ষড়বিংশ শতাব্দীর হুর-পরি? নিজ মুলুকে ফিরে এলে শুধু স্বপ্নরা সেই আর্তি বুঝবে ‘এক বার দেখা হ্যায়, দুসরি বার দেখনে কি তমান্না হ্যায়’।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.