বুসান জগালছি মার্কেট
মাছের বাজার। শুনলেই সব কেমন খিঁচড়ে ওঠে। কী অপমান! আমরা কি এতই ইয়ে? খুব হুল ফোটে তো গায়ে? আজ এমন এক মাছের বাজারের গল্প শোনাব যে রূপকথা বলে ধাঁধা লেগে যাবে। আর সে বস্তু এই দুনিয়াতেই বিদ্যমান। কোরিয়াতে। সেখানে বুসান রাজ্যের সমুদ্রপাড়ে বি-শা-ল এক মাছের বাজার আছে। হোলসেল মার্কেট যেমন হয়। এর ওর গায়ে পড়া নৌকো (ওদের অবশ্য হলিউড স্টাইলের মোটর বোট), খপাখপ লাফাচ্ছে বড় বড় মাছ, স্কুইড, চিংড়ি আর হাজারো ‘জলখাবার’। বাতাসে আঁশটানি গন্ধ, নোংরা কাদামাখা সমুদ্রতীর। সেখানে হাটুরে সেলর প্যান্টস পরা, গায়ে ছ্যাতলাবিশিষ্ট খেটে খাওয়া মানুষগুলো দাপিয়ে বেড়ায়। পাশে অবশ্য শপিং মলের মতো দেখতে বিশাল ফিশ প্রসেসিং কমপ্লেক্স। তবে যেমন জমজমাট ওদের মাছের বাজার, তেমনি গরমাগরম ওদের প্রতিটা দিন। ফি সন্ধে মোচ্ছব। আর ওদেরও সব থেকে বড় উৎসব শরৎকালে। অক্টোবরের মাঝামাঝি পাঁচ দিনের জন্য মার্কেটের চার দিক ব্যানার, ফেস্টুন, লাল নীল কাগজে মুড়ে সাজিয়ে ফেলা হয়। তার পর সেখানে শুরু হয় সি-ফুড ফেস্টিভাল।
আর সে শুধু খাই খাই নহে। কোরিয়া দেশটার সঙ্গে আমাদের ভারী মিল। পাহাড়, প্রকৃতি, সমুদ্র ইত্যাদি নিয়ে ওদেরও প্রচুর কল্পনা। সেই স্বপ্নই জড়িয়ে আছে এই মহান মৎস্যোৎসবকে ঘিরে। ইন্টারন্যাশনাল মেছো পাবলিকের অবাধ নেমন্তন্ন। ফেস্টিভালের স্লোগান-এই সেই ‘মাই ডিয়ার’ ভঙ্গিটি টের পাওয়া যায়। ওইসো! বোইসো! সাইসো! বাংলা করলে এসো, বসো জাতীয়ই কিছু একটা হচ্ছে। এটা হল, এসো, দেখো আর মজা করো।
উৎসবের শুরুতেই কোরিয়ান সমুদ্রদেবতার উদ্দেশ্যে একটা প্রার্থনা চলে। তার পরই যে সব মাছ পরিবারদের মেরে ফেলা হচ্ছে, তাদের বিদেহী আত্মার জন্য একটা স্মরণসভা বসে। মাছকুমারদের ছবি টাঙিয়ে প্রদীপ, মোমবাতিও জ্বালানো হয়। এ সব করে-টরে, পাপ-পুণ্য গুছিয়ে, শান্ত মনে সবাই ঘুমোতে চলে যায়। আসল খেল শুরু পর দিন সকালে।
মার্কেট চত্বর ভর্তি বিশাল বিশাল স্টেজে। এটাই তখন দেখ বাবাজি দেখবি নাকি এরিয়া বা এদের ভাষায় ‘বোইসো প্লাজা’। তার চার পাশ দিয়ে বড়সড় শোভাযাত্রা করে, আকাশে বাজির খেলা দেখিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। স্টেজের ওপর বা আশপাশে ঘটে তাজ্জব সব ব্যাপার-স্যাপার। কখনও লাঠির বদলে জ্যান্ত ইল মাছ আর অক্টোপাস নিয়ে রিলে রেস চলে, কখনও মেছুনিরা গলা ফাটিয়ে ধরে জেলেপাড়ার গান ধরে। আর পাঁচ দিনই হঠাৎ হঠাৎ শুরু হয়ে যায় মাছের নিলাম। ওই ইভেন্টটার নামই সারপ্রাইজ অকশন। কখন হবে কেউ জানে না, কিন্তু দিনে এক বার হবেই।
একটা ফাঁকা জায়গার নাম সাইসো প্লাজা বা পার্টিসিপেশন এরিয়া। অর্থাৎ, এখানে হাত-পা গুটিয়ে হাঁ করে কী হচ্ছে দেখে না কেউ। নিজেরাও হইহই করে মাঠে নেমে পড়ে। হাঁটু জলে নেমে খালি হাতে মাছ ধরে, তার পর সে সব মাছ রেঁধে খাওয়ান নামীদামি শেফরা। কেউ কেউ রাস্তার বুকে খেয়ালখুশি মতো ছবি আঁকে। সাশিমি (জল থেকে তোলা তাজা মাছ) আর রাইস, ভেজিটেবল দিয়ে কে কত নতুন রকমের পদ রাঁধতে পারে, তার প্রতিযোগিতা চলে। একটা কোনা কচি-কাঁচাদের জন্য আলাদা করে বরাদ্দ করা থাকে। এই কিডস ল্যান্ড-এ তারা নিজেরা নিজেরা মাছ ধরে, ওয়াটার রোবট বাইকে চড়ে অল্প জলে বোঁবোঁ ঘুরে আসে। খেলাধুলোর মধ্যে যথারীতি একটু পড়াশুনা, হাতের কাজও গছিয়ে দেওয়া হয়। মাছের হাড় তেল দিয়ে চাবির রিং, সাবান, মোমবাতি বানায় ওরা। যাই-ই করুক মজায় ঝিকমিক করে মুখগুলো।
সত্যি পড়াশুনা চলে এগজিবিশনগুলোতে। জগালছির ইতিহাস ধরা থাকে ছবিতে, তথ্যচিত্রে। সমুদ্রের ফিরিয়ে দেওয়া, ঢেউয়ের তলা থেকে কুড়িয়ে আনা বা জলজ পণ্য দিয়ে তৈরি শখের সামগ্রীগুলো কেনাবেচার ধুম পড়ে যায়। মাছ, কাঁকড়া আর সমুদ্রজীব ভেজেভুজে থালায় ফেলতেই খাদ্যরসিকদের লাইন লেগে যায়। কখনও আবার সি-ফুড বিনা পয়সাতেই অতিথিদের ডিশে ডিশে তুলে দেওয়া হয়। বিশেষ একটা সময় নৌকো বা লঞ্চে চাপিয়ে অতিথিদের সমুদ্রে ঘুরিয়েও আনা হয়। সেটাও ফ্রি!
এ বার হুল্লোড় শুরুর দিন ঠিক হয়েছে ১০ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর। এ অবশ্য ওদের এখনও পর্যন্ত ঠিক হওয়া দিনপঞ্জি। তারই হিসেব অনুযায়ী, আমাদের মহালয়ার ঠিক আগের দিনই ওনাদের শাটার ডাউন। তাই, পুজোটা মার যাবে না কোনও মতে। বরং, পিতৃপক্ষের শেষ দিকটায় যদি প্যান্ডেলের উঁচিয়ে থাকা পেরেক, গড়িয়াহাটের পকেটমার ভিড়, উল্টোডাঙার ত্রিশঙ্কু জ্যামে কলকাতাকে ভূতের দেশ বলে গালি দিতে ইচ্ছে হয়, বাংলা মায়ের তৈরি করা উদরটি একটু অন্য সোয়াদের মাছের জন্য ককিয়ে ককিয়ে ওঠে, আর মারমেড, বরুণদেওতা, মছলিবাবা ইত্যাদি লোভনীয় ব্যাপারে ইন্টারেস্ট থাকে, তবে আর কী? মছলিপট্টি জিন্দাবাদ। সোঁওওওওও (ওটা প্লেনের আওয়াজ)!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.