দফায় দফায় নয়। গাড়ি কিনলে এ বার এককালীন কর মিটিয়ে দেওয়া যাবে এ রাজ্যেও। তাতে গাড়ির দাম ও করের হার অনুযায়ী বেশ কিছুটা ছাড় পাবেন ক্রেতা। দিল্লি-সহ অনেক রাজ্যে এক দফায় ‘আজীবন কর’ মেটানোর ব্যবস্থা আগেই চালু হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে গাড়ির নতুন করের হার বলবৎ করতে চলেছে রাজ্য সরকার।
এত দিন পর্যন্ত ইঞ্জিনের ‘অশ্বশক্তি’ অনুযায়ী গাড়ির কর ধার্য করা হত। ৩ সেপ্টেম্বর, সোমবার থেকে গাড়ির কর ধার্য হবে তার ‘এক্স-শো-রুম প্রাইস’ বা প্রস্তুতকারকের নির্দিষ্ট করে দেওয়া দামের ভিত্তিতে। এ বার থেকে গাড়ি কেনার সময়েই ‘আজীবন (১৫ বছর) কর’ মিটিয়ে দিতে পারবেন ক্রেতারা। তবে পুরনো নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ বছর অন্তর কর দেওয়ার নিয়মও চালু থাকছে। সে-ক্ষেত্রেও অবশ্য করের হার ধার্য হবে প্রস্তুতকারকের নির্দিষ্ট করে দেওয়া দাম অনুসারেই। যাত্রিবাহী সব যানবাহনকে নতুন আইনের আওতায় আনা হয়নি। তবে লাক্সারি ট্যাক্সি এবং ১৪ আসন পর্যন্ত চুক্তির ভিত্তিতে চলা যাত্রিবাহী যানবাহনকে নতুন করের আওতায় আনছে সরকার।
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র শুক্রবার মহাকরণে বলেন, “অতীতে বাম সরকার যে-‘আজীবন কর’-এর কথা ঘোষণা করেছিল, আদপে তা ‘আজীবন’ ছিল না। নতুন আইনে গাড়ির মালিককে এক বারই কর দিতে হবে।” পরিবহণসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকার দাবি, “এককালীন কর মেটানোর সুযোগের সঙ্গে গাড়ির ক্রেতাদের আরও কিছু সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। গাড়ির অডিও-ভিডিও, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার জন্য আর কর দিতে হবে না। নতুন আইনে এ-দিক থেকেও লাভবান হবেন গাড়ি-মালিকেরা।”
পরিবহণ দফতরের এক মুখপাত্র জানান, এককালীন কর আদায়ের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পুরনো নিয়মে অর্থাৎ পাঁচ বছর অন্তর কর মেটাতে চাইলে তুলনায় বেশি টাকা দিতে হবে গাড়ি-মালিকদের। সরকার কেন এককালীন কর ব্যবস্থা চালু করছে, তা-ও ব্যাখ্যা করেন ওই মুখপাত্র। তিনি বলেন, “নতুন নিয়মে আখেরে আয় বাড়বে সরকারের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতি মেনে সরকার যাত্রী-ভাড়া বাড়াতে পারছে না। এই অবস্থায় নতুন আইন পরিবহণ দফতরের আয় বাড়াতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে।” আদালতের নতুন নির্দেশ অনুযায়ী, ১৫ বছর পরে গাড়ির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তাই এক দফায় ‘আজীবন কর’ মেটানো মানে সেটা ১৫ বছরের জন্যই নেওয়া হচ্ছে বলে ধরে নেওয়া যায়। ওই মুখপাত্রের কথায়, “সাধারণ ভাবে এখন যাঁরা গাড়ি কেনেন, তাঁদের অনেকেই চার-পাঁচ বছর পুরনো হলে গাড়ি বিক্রি করে দেন। সে-ক্ষেত্রে পাঁচ বছর অন্তর কর দেওয়ার নিয়ম মানলে তাঁকে বেশি টাকা দিতে হবে। পাঁচ বছর অন্তর কর মেটালে এখন যে-টাকা দিতে হয়, নতুন আইনে তার থেকে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি দিতে হতে পারে।”
সরকারি সূত্রের খবর, নতুন আইন অনুযায়ী গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষমতা ৯০০ সিসি-র মধ্যে হলে প্রস্তুতকারকের নির্দিষ্ট করে দেওয়া দামের ১০ শতাংশ বা ৪০ হাজার টাকার মধ্যে যেটা বেশি হবে, ‘আজীবন কর’ হিসেবে সেটাই দিতে হবে মালিককে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয়, এমন গাড়ির মালিকেরা অবশ্য এ ক্ষেত্রে করের উপরে ১০ হাজার টাকা ছাড় পাবেন। একই ভাবে ৯০০ সিসি থেকে ১৪৯০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির ক্ষেত্রে করের হার ১০ শতাংশ বা ৫৫ হাজার টাকা। ১৪৯০ সিসি থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির কর হচ্ছে প্রস্তুতকারকের নির্দিষ্ট করে দেওয়া দামের ১০ শতাংশ বা ৮০ হাজার টাকা। গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষমতা ২০০০ সিসি-র বেশি হলে করের পরিমাণ বেড়ে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। একই ভাবে পাঁচ বছর অন্তর কর দেওয়ার ক্ষেত্রে চারটি ধাপে কর ধার্য হয়েছে ১৭ হাজার, ২৫ হাজার, ৩৫ হাজার এবং ৪৫ হাজার টাকা। ৯০০ সিসি-র গাড়ি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয়)-র ক্ষেত্রে পাঁচ বছর অন্তর করের হারে তিন হাজার টাকা ছাড় দেওয়া হবে। অন্য তিন ধাপে অবশ্য কোনও ছাড় নেই। |