সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার মোড়কে এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের মোকাবিলায় নামছে সিপিএম। আর এ কাজের মুখ্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। ‘সাম্রাজ্যবাদ-লগ্নিপুঁজি-মার্কিন আগ্রাসন’ এই শব্দগুলির অর্থ বহু বাম কর্মী-সমর্থকের কাছেই স্পষ্ট নয়। ‘পরিবর্তন’-পরবর্তী জমানায় দলের কর্মীদের নতুন করে এই শব্দগুলির অর্থ বোঝাতে এ বারে ‘সক্রিয়’ হয়েছে আলিমুদ্দিন।
এই পরিস্থিতিতে গত এক বছর পাম অ্যাভেনিউয়ের দু-কামরার ফ্ল্যাট আর আলিমুদ্দিনের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখা বুদ্ধবাবুকে নিতে হয়েছে ‘শিক্ষকে’র ভূমিকা। ছাত্র-যুব থেকে আরম্ভ করে কলকাতা ও সংলগ্ন জেলায় সাম্রাজ্যবাদের উপরে রীতিমতো ‘পার্টি-ক্লাস’ নিচ্ছেন বুদ্ধবাবু। কেবল লগ্নিপুঁজির অর্থই তিনি ব্যাখ্যা করছেন না, বোঝাচ্ছেন প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস। বলছেন, ইউপিএ-২ সরকারের উপরে আমেরিকার প্রভাব ও মমতা-হিলারি ক্লিন্টন বৈঠকের কথা। বুদ্ধবাবুর কথায়, “দলীয় কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবেই আমি এ কাজ করছি। সহজ-সরল করে সাম্রাজ্যবাদের বিপদ বোঝানোর চেষ্টা করছি। এক জন সাধারণ কর্মীও যাতে বুঝতে পারেন, সেই চেষ্টাই করছি।”
নতুন করে ‘সাম্রাজ্যবাদ’ নিয়ে সিপিএম কর্মীদের মধ্যে এত প্রচারের প্রয়োজন কী? বিশেষ করে যখন শিলাদিত্য-কাণ্ড, নারী নিযার্তন, ডেঙ্গি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমালোচনার কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর মতো বিষয়ের অভাব নেই।
সিপিএম নেতাদের বক্তব্য, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ বা পেনশন বিলের বিরোধিতা করে যে ভাবে মমতা নিজের ‘বামপন্থী ভাবমূর্তি’ তুলে ধরতে তৎপর হয়েছেন, সর্বস্তরে তার বিরোধিতা করতে হবে। শুধু জনসভা করে মানুষকে বোঝানোই নয়, পার্টির মধ্যে কোনও ‘কমরেড’ যাতে মমতার আচরণে বিভ্রান্ত না হন, সে দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। সে কাজই করছে আলিমুদ্দিন। বুদ্ধবাবু ছাড়াও দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু, নিরুপম সেন, গৌতম দেব, সূর্যকান্ত মিশ্র সকলেই কমবেশি সভা করে সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে বোঝাচ্ছেন।
পাশপাশি আরেকটি যুক্তিও রয়েছে। আলিমুদ্দিনের নেতারা বুঝতে পারছেন, এখনই পথে নেমে মমতা-সরকারের সমালোচনা করলে মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং মমতা প্রসঙ্গে আপাতত ‘চুপ’ থাকাই শ্রেয়। এই পরিস্থিতিতে একদিকে দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা রাখা, অন্য দিকে তাঁদের সঙ্গে ‘সংযোগ’ রক্ষার মাধ্যম হিসেবে আলিমুদ্দিন বেছে নিয়েছে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী কর্মসূচিকেই। বিমানবাবুর দাবি, গত ৫০ বছর ধরে তাঁরাই একমাত্র ধারাবাহিক ভাবে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করে আসছেন। বস্তুত, সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতায় সিপিএমের ‘একচেটিয়া অধিকার’ কোনও ভাবেই ছাড়তে নারাজ বিমানবাবুরা।
সে কারণেই অসুস্থ শরীর নিয়েও বুদ্ধবাবু প্রতি সপ্তাহেই দলীয় সভায় সাম্রাজ্যবাদের ‘বিপদ’ বোঝাচ্ছেন। নতুন করে তাঁর এই ‘শিক্ষকে’র ভূমিকা নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। আজ, শনিবার ধর্মতলা থেকে উত্তর কলকাতার দেশবন্ধু পার্ক পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী মিছিলের পরেও বুদ্ধবাবুর বক্তৃতা দেওয়ার কথা। বিমানবাবু জানিয়েছেন, সহজ, প্রাঞ্জল ভাষায় সাম্রাজ্যবাদ বোঝানোর জন্য বুদ্ধবাবু ‘স্পেশালাইজেশন’ করেছেন। তিনি বলেন, “সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে আমরা ধারাবাহিক প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বুদ্ধ এ ব্যাপারে বিশেষ দায়িত্ব নিয়েছেন। ওঁর শরীর খুব একটা ভাল নয়। তা-ও বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দলীয় কর্মীদের এ ব্যাপারে বোঝাচ্ছে।” |