রাজ্যের সঙ্কটকে ‘আলাদা’ মানতে নারাজ
পশ্চিমবঙ্গকে সাহায্যে আগ্রহী মনমোহন
মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার পর থেকেই রাজ্যের ঋণের বোঝা নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ জন্য কেন্দ্রের কাছ থেকে লাগাতার ‘বিশেষ আর্থিক সাহায্য’ও দাবি করেছেন তিনি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলেছেন। এই প্রথম বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। আজ তেহরান থেকে ফেরার পথে তাঁর বিশেষ বিমানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যে সব রাজ্য আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন, তাদের সকলকেই সাহায্য করার ব্যাপারে আমরা আগ্রহী। পশ্চিমবঙ্গও এর ব্যতিক্রম নয়।”
মমতা মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক সঙ্কটের সঙ্গে অন্য রাজ্যের সমস্যার তুলনা হয় না। যদিও প্রধানমন্ত্রীর এ দিনের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, সাহায্যের জন্য প্রস্তুত হলেও পশ্চিমবঙ্গের সমস্যাটি তিনি ‘বিশেষ আর্থিক সঙ্কট’ বলে মনে করেন না। এই সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ দিন বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের সঙ্কটমুক্তিতে
বিমানে সাংবাদিকদের
সামনে।
সাহায্যের জন্য বাস্তবসম্মত, যুক্তিনিষ্ঠ এবং কার্যকরী ব্যবস্থার পথ খোঁজার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি।” প্রধানমন্ত্রী সচিবলায়ের কর্তাদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গকে সাহায্য দিতে প্রস্তুত। কিন্তু অন্য রাজ্যে যাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি না হয়, তা মাথায় রেখেই সুকৌশলে কাজটি করতে চাইছেন।
মমতাও এ ব্যাপারে সাবধানে পা ফেলছেন। প্রধানমন্ত্রীর আজকের মন্তব্য নিয়ে সরাসরি কোনও কথা এ দিন বলতে চাননি তিনি। তবে ক’দিন আগেই কলকাতা থেকে দিল্লি আসার আগে এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, “আমরা ঘরপোড়া গরু। না আঁচালে বিশ্বাস নেই। কেন্দ্র যে টাকাটা দেওয়ার কথা ভাবছে, সে কথা তো আপনারা অনেক বার লিখে ফেললেন। কিন্তু আমরা টাকাটা তো পেলাম না।” এ দিনও ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেছেন, রাজ্যের মানুষের জন্য প্যাকেজের দাবি তিনি তুলবেনই।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেই স্পষ্ট, তিনি পশ্চিমবঙ্গকে আর্থিক সাহায্য করতে চাইছেন না, এমন নয়। একাধিক বিষয়ে কংগ্রেস এখন একটু চাপে রয়েছে। এই অবস্থায় শরিকদের তো পাশে চাইবেই কংগ্রেস। জোট রাজনীতির স্বার্থেই মমতাকে খুশি রাখতে চান প্রধানমন্ত্রী।” ওই নেতা জানান, সনিয়া গাঁধী নিজেও মমতাকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পুলক চট্টোপাধ্যায়ও সক্রিয় ভাবে মমতাকে সাহায্যের চেষ্টা করছেন।
আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্কট যে অন্যদের তুলনায় বড়, তা কেন মানতে রাজি হলেন না প্রধানমন্ত্রী? তাঁকে আজ সরাসরি প্রশ্ন করা হয়, “আপনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোরাটোরিয়ামের সুযোগ করে দেবেন কি?” জবাবে প্রধানমন্ত্রী ‘মোরাটোরিয়াম’ নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি।
কংগ্রেস নেতারা বলছেন, মনমোহন মমতাকে সাহায্য করবেন ঠিকই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুধু মাত্র একটি রাজ্যের সঙ্কট নিয়ে তিনি কথা বলতে পারেন না। কারণ, তা হলে অন্য রাজ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। মুলায়ম সিংহ, নীতীশ কুমার, জয়ললিতার মতো অ-বিজেপি, অ-কংগ্রেসি নেতা-মুখ্যমন্ত্রীদের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে তাঁকে। তাই মমতার রাজ্যের জন্য প্রকাশ্যে নিজেকে দাতা-কর্ণের ভূমিকায় দেখাতে চান না প্রধানমন্ত্রী। প্রণববাবু যখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তখন অর্থ কমিশন তিনটি রাজ্যকে সবথেকে বেশি ঋণগ্রস্ত বলে চিহ্নিত করেছিল। এ গুলি হল, কেরল, পঞ্জাব ও পশ্চিমবঙ্গ। সুমিত বসুকে দিয়ে কমিটি গড়ে বিষয়টি পর্যালোচনার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী কৌশলে এর সরাসরি জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন।
আবার এর একটি অন্য দিকও রয়েছে। মমতার আপত্তিতেই বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা এবং সীমান্ত চুক্তি রূপায়ণ আটকে রয়েছে। ফলে তেহরানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে এই চুক্তি রূপায়ণের প্রশ্নে যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে মনমোহনকে। মমতার আপত্তিতে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিষয়টিও আটকে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, বিদেশসচিব থেকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার মতো শীর্ষ আমলা অনেকেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অবস্থানে ক্ষুব্ধ।
বিদেশ মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা প্রশ্ন তুললেন, সীমান্ত চুক্তি (ল্যান্ড বর্ডার এগ্রিমেন্ট) পশ্চিমবঙ্গ সরকার লিখিত ভাবে আগেই মেনে নিয়েছে। তার ভিত্তিতেই মন্ত্রিসভায় যাওয়া হয়েছিল। আর তার ভিত্তিতেই প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় গিয়ে সেটি রূপায়ণের কথা বলে এসেছিলেন। এত দিন পরে কেন তা নিয়ে আপত্তি তোলা হচ্ছে? মমতা সরকারের যুক্তি, চিঠি পাঠানো হয়েছিল বাম আমলে। এখন তাঁরা তড়িঘড়ি কোনও চুক্তি সই করতে নারাজ। তিস্তার ক্ষেত্রে বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, চুক্তি না থাকায় বর্ষায় প্রচুর জল এমনিতেই বাংলাদেশে চলে যাচ্ছে। বরং চুক্তিটা থাকলে ভারত জল নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পেত।
মমতার যুক্তি, তিন বছর মোরাটোরিয়াম দিলে রাজ্যের আর্থিক উন্নতি হবে। আর এই অর্থ রাজ্য ফেরতও দেবে। কেন্দ্রের পাল্টা যুক্তি, এ ভাবে মোরাটোরিয়াম দিলে অন্য রাজ্য রে-রে করে উঠবে। তার বদলে এই অর্থটাই কৌশলে অন্য ভাবে দেওয়া যেতে পারে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.