স্কুলের পোশাক পরা বছর দশ-বারো বছরের একটি ছেলে টাকি রোডের পাশে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করছে। অত রাতে সে ওই এলাকায় কী করছে, কোথা থেকে এসেছে, কী হয়েছে কিছুই জানতে না পেরে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা নাগাদ স্থানীয় কয়েকজন ফোন করেন বসিরহাট থানায়। পুলিশ গিয়ে সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
বসিরহাট থানার এসআই চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, “স্কুলে দুষ্টুমি করায় শিক্ষক এবং বাবার বকুনির ভয়ে স্কুল থেকে বাড়ি না ফিরে এ দিন সাইকেল নিয়ে উল্টো রাস্তা ধরেছিল তন্ময় দাস নামে পূর্ব বারাসত আদর্শ বিদ্যাপীঠের ওই ছাত্র।” পৌঁছে যায় প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে বসিরহাটের পুলিন গ্রামের কালীবাড়ি এলাকায়। ভয়ে টাকি রাস্তার ধারেই দাঁড়িয়ে কাঁদতে শুরু করে বারাসতের বিজয়নগরের ওই কিশোর।
এরপরেই বসিরহাট থানা থেকে খবর দেওয়া হয় বারাসত থানায়। এ দিকে, ছেলে বাড়ি ফিরছে না দেখে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন তন্ময়ের বাবা তারকনাথ দাস। শেষে বারাসত থানায় নিখোঁজ অভিযোগ করেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ বারাসত থানার পুলিশ তারকবাবুকে জানায়, তাঁর ছেলে বসিরহাট থানায় আছে। ওই রাতেই বসিরহাট গিয়ে ছেলেকে নিয়ে আসেন তারকবাবু। |
তারকবাবুর অভিযোগ, স্কুলের শিক্ষকেরা তাঁর ছেলের উপর মানসিক চাপ বাড়াচ্ছেন। সামান্য ঘটনায় তন্ময়কে অতিরিক্ত শাস্তি দেওয়া হচ্ছে বলে সে এ দিন এমন কাজ করেছে। এ দিকে, প্রধান শিক্ষক তা মানতে নারাজ। প্রধান শিক্ষক অশোক সাহা-র কথায়, “ছেলেটি প্রায়ই দুষ্টুমি করে। বিষয়টি আগেও তার অভিভাবককে জানানো হয়েছিল। কোনও ছাত্রের প্রতি শিক্ষকের দুর্ব্যবহারের প্রশ্নই ওঠে না। অতিরিক্ত শাসনের জন্য সে বাবা-মাকে ভয় পেত। মনে হচ্ছে তার জেরেই ওই ছাত্র এ কাজ করেছে।” তা অবশ্য মানতে চাননি তারকবাবু।
অশোকবাবু জানান, এ দিন তন্ময় বেঞ্চে সহপাঠীর বসার জায়গায় পেন উচু করে রেখেছিল। সহপাঠী সেখানে বসতে গেলে তার ব্যাথা লাগে। এ দিকে, এ দিন তন্ময়ের বিরুদ্ধে ওঠা অন্য একটি অভিযোগের জন্য ডাকা হয়েছিল তারকবাবুকে। সেই সময়ে তাঁকে এ দিনের ঘটনাটিও জানানো হয়। তারকবাবুর কথায়, “দুপুরে আমায় স্কুলে ডেকেছিলেন প্রধান শিক্ষক। তিনি আমাকে ওই সময়েই ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। বলেছিলাম, আজ স্কুল করুক। স্কুল শেষের পরে ও বাড়ি ফিরে যাবে। বিকেল সাড়ে ৪টার পরেও ছেলে বাড়ি না ফেরায় খোঁজ করি। স্কুলেও যাই। সেখান থেকে জানানো হয়, ছেলে বাড়ি চলে গিয়েছে। রাতে বারাসত থানায় বিষয়টি জানাই।” |