কেটে গিয়েছে ২৫ বছর। অথচ নিকাশি ব্যবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। আর এর জেরে ভোগান্তি চরমে পানিহাটি পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সারদানগর এলাকায়।
বর্তমানে সারদানগরে প্রায় ৩৫০টি পরিবারের হাজার দেড়েক মানুষ বাস করেন। নিচু চাষের জমি কিনে মূলত ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীদের বসবাস শুরু হয় এখানে। ছোট-বড় প্লটে পাকা বাড়ি তৈরি করে বসবাসের জন্য পুরসভা থেকে মিউটেশনও পেয়েছেন বাসিন্দারা। কিছু প্লট খালি থাকলেও প্রায় গোটা এলাকা জুড়েই রয়েছে দোতলা ও তিনতলা বাড়ি। কিন্তু অভিযোগ, পুরসভার পক্ষ থেকে এলাকায় যে উন্নয়ন হওয়ার কথা, তা আদৌ হয়নি।
যাতায়াতের রাস্তা ১২-১৪টি। এর মধ্যে শুধু এলাকায় ঢোকার রাস্তাটি পাকা। বাকি সবই কাঁচা। পাকা রাস্তার পাশের নর্দমাটি পাকা করা হলেও এলাকার বাকি সব নর্দমাই কাঁচা। পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় এবং এলাকাটি নিচু হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই নর্দমা ছাপিয়ে জল জমছে রাস্তায়। |
বর্ষায় একহাঁটু নোংরা জলের মধ্য দিয়ে বাসিন্দাদের যাতায়াত করা দুরূহ হয়ে ওঠে। বাড়ির বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষদের কোথাও নিয়ে যেতে হলে কোলে করে নিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। পাশাপাশি, বর্ষায় জল জমে মশা-মাছির প্রকোপ বাড়ে, দেখা দেয় নানা রকম চর্মরোগ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে পা রাখা যায় না। নিজেদের উদ্যোগে বাসিন্দারা রাস্তায় রাবিশ ফেলে সাময়িক বন্দোবস্ত করলেও কাঁচা রাস্তা ও নিকাশির উন্নয়নের জন্য পুরসভার তরফে ব্যবস্থা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ।
তবে দুর্ভোগের এখানেই শেষ নয়। এলাকার খালি প্লট ও কাঁচা রাস্তার দু’ধারে গজিয়ে উঠেছে বড় বড় ঘাস, আগাছা। আর এরই মধ্যে বেড়ে ওঠে নানা রকম কীটপতঙ্গ। স্থানীয় বাসিন্দা দীপু সেনের কথায়: “বর্ষায় ঘরে জল ঢুকে পড়ে। সাপ, ব্যাঙ উঠে আসে। চূড়ান্ত হয়রানি হয়। পুরসভা তবু কোনও ব্যবস্থা নেয় না।” |
এ ছাড়া, এলাকায় পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হলেও তাতে জলের চাপ অত্যন্ত কম থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের। স্থানীয় কাউন্সিলর, তৃণমূলের কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়ের কথায়: “পুরসভার পক্ষ থেকে একটি পাম্প বসানো হবে। তবে রাস্তাঘাট আর নিকাশি উন্নয়নে পুরসভার আর্থিক সাহায্য পাই না। যতটুকু নিজের উদ্যোগে করতে পেরেছি, সেটুকুই উন্নতি হয়েছে।”
সারদানগর উন্নয়ন সমিতির সদস্য তথা স্থানীয় বাসিন্দা রবীন ঘোষ বলেন, “দীর্ঘ দিন পরিকল্পিত উন্নয়নের অভাবে এ ভাবেই ভুগতে হচ্ছে। প্রতি বছর বর্ষায় ভোগান্তি চরমে ওঠে। কাউন্সিলর নিজের উদ্যোগে একটি রাস্তা ঢালাই করে দিয়েছেন। বাকি সব রাস্তাই কাঁচা। নর্দমাও কাঁচা। পুরসভার কোনও উদ্যোগ নেই।”
পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান, সিপিএমের চারণ চক্রবর্তী বলেন, “সারদানগরের উন্নয়নে বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু পুরসভা স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তাই টাকার অভাবে ব্যয়বরাদ্দে জটিলতা হয়। আমরা বিইউসিপি প্রকল্পের অধীনে ওই এলাকার উন্নয়নে টিম তৈরি করেছি। আশা করছি, সমস্যার সমাধান করা যাবে।”
|