কলকাতা পুরসভার প্রস্তাব ছিল টালা পার্কে ঝিলের মাঝে দ্বীপের মতো অংশে রেস্তোরাঁ গড়ে তোলার। পরিবেশগত কারণে রাজ্য পরিবেশ দফতর তা বাতিল করে দেয়। পরে ওই দ্বীপে খাবারের ভ্রাম্যমাণ গাড়ি রাখার পরিকল্পনা করেছিল পুরসভা। পরিবেশগত দিক খতিয়ে দেখে তা-ও বাতিল করল পুরসভা।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান ও বাজার) দেবাশিস কুমার বলেন, “ওখানে রেস্তোরাঁ বা খাবারের ভ্রাম্যমাণ গাড়ির পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। তবে এই অংশটিকে আধুনিক ভাবে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে।” কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্প (কেইআইপি) ২০০৩-’০৪-এ ঝিল সমেত টালা পার্কের সংস্কার করা হয়। এ ক্ষেত্রে পরিবেশের ভারসাম্যের কথা মাথায় রাখা হয়েছিল। এই সময় ঝিলের ভিতরের দ্বীপে যাওয়ার জন্য একটি রেলিং দেওয়া কংক্রিটের সেতু তৈরি করা হয়। এতে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। |
সেই সময়ে দ্বীপের মতো অংশটি পরিষ্কার করে পাড় বাঁধিয়ে নানা ফুলের গাছ লাগানো হয়। এখানে একটি পুরনো আমগাছ ছিল। অনেক চেষ্টা করেও পোকা লাগা গাছটিকে বাঁচানো যায়নি। রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের সাংসদ তহবিল এবং স্থানীয় বিধায়ক মালা সাহার বিধায়ক তহবিলের টাকায় দ্বীপের মধ্যে একটি আধুনিক ফোয়ারা বসানো হয়।
২০০৫-এ বামবোর্ড ক্ষমতায় আসার পরে পুরসভা ওই দ্বীপে একটি আধুনিক রেস্তোরাঁ তৈরির পরিকল্পনা করেছিল। তৎকালীন স্থানীয় কাউন্সিলর মালা সাহা বলেন, “রেস্তোরাঁ তৈরির পরিকল্পনা রাজ্য পরিবেশ দফতরকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু পরিবেশ দফতর অনুমতি দেয়নি।”
কেন প্রকল্প বাতিল হয়েছিল? |
রাজ্য পরিবেশ দফতরের এক আধিকারিক জানান, ওখানে রেস্তোরাঁ তৈরি হলে দ্বীপের আশপাশ নোংরা হত। বর্জ্য ফেলারও জায়গা নেই। ঝিলে বর্জ্য পড়ে জল দূষিত হতে পারত। এর পরে এখানে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খাবারের ভ্রাম্যমাণ গাড়ি রাখার এবং দ্বীপটিকে আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু বর্তমান কাউন্সিলর এবং কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তৃণমূলের তরুণ সাহা বলেন, “পরিবেশ দফতর যে কারণে এখানে রেস্তোরাঁ তৈরির অনুমতি দেয়নি, সেই কারণে এখানে খাবার বিক্রিরও অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। বর্জ্য ফেলার জায়গা না থাকলে এই ধরনের প্রকল্প অর্থহীন। রয়েছে নিরাপত্তার প্রশ্নও।”
অভিযোগ, পার্কের এই অংশটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা আছে। যেমন, রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে ছোটরা সহজে গলে যেতে পারে। বসার জন্য বেঞ্চ নেই। পাখিদের অসুবিধার জন্য বেশি আলো লাগানো বারণ। তাই ফোয়ারাটিকে তেমন সুন্দর দেখায় না। যে আলো আছে তা-ও খারাপ। তা ছাড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা পাকাপাকি না হওয়া পর্যন্ত এখানে কাউকে ঢুকতে দেওয়া সম্ভব নয় বলেও পুরসভার উদ্যান দফতর জানিয়েছে।
তরুণবাবু বলেন, “এই অংশটিকে আধুনিক করার পরিকল্পনা রয়েছে। বসার জায়গা তৈরি এবং সেতুর রেলিংয়ে যাতে ফাঁক না থাকে তার ব্যবস্থা করা হবে। নিরাপত্তার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এখন সেতুটির গেটে তালা দেওয়া রয়েছে যাতে দ্বীপটিতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে। এই অংশের আলো খারাপ হয়ে গিয়েছে। দ্রুত মেরামতি করা হবে।”
|