নেহরু কাপ ফাইনালে তীব্র ঝড়ের সামনে পড়ার ইঙ্গিত থাকল সুব্রত পাল-সুনীল-নবিদের জন্য। রিহার্সাল ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে ক্যামেরুনের এক গোলে জয়ের থেকেও যেটা উইম কোভারম্যান্সের কাছে আসল দুশ্চিন্তা।
আবার মহড়া ম্যাচে ‘নতুন ভারত’ও বোঝাল, রবিবার এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ তারাও। শুক্রবার রাউন্ড রবিনের শেষ ম্যাচের পর ভারতের ডাচ-কোচ বলে দিলেন, “ফাইনালে কঠিন লড়াই। ক্যামেরুন সব দিক থেকেই শক্তিশালী। কিন্তু আমরাও সেরাটা দিতে তৈরি হয়েই মাঠে নামব।”আটচল্লিশ ঘণ্টা পরেই কাপ জয়ের লড়াইয়ে নামতে হবে। তাই দুই ফাইনালিস্ট দলের কোচই নিজেদের তাস আস্তিনে লুকিয়ে এ দিন মাঠে টিম নামিয়েছিলেন। ক্যামেরুন তাদের প্রথম দলের আট ফুটবলারকেই নামায়নি শুরুতে। কার্যত দ্বিতীয় দলই নামিয়েছিল ইমানুয়েল বোসোর দল। ভারতও রিজার্ভ বেঞ্চে বসিয়ে রেখেছিল অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী, দেশের এক নম্বর গোলকিপার সুব্রত পাল, উঠতি প্রতিভা লেনি-কে। রাজু গায়কোয়াড় নামেন খেলার শেষের দিকে। গুরবিন্দর চোট পাওয়ার পর। তা সত্ত্বেও তীব্র লড়াই হল ম্যাচে। ফ্রান্সিস বা জুয়েল রাজা গোলের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে ম্যাচটা ভারত জিততেও পারত। শুধু দ্বিতীয়ার্ধেই তিনটে চমৎকার ক্রস থেকে তিনটে হেডে গোলের সুযোগ এসেছিল মেহতাব-নবিদের সামনেও। |
ভারতীয় রক্ষণে হানা ক্যামেরুনের। ছবি: পিটিআই |
খেলা শুরুর দু’মিনিটের মধ্যেই সুব্রত পালের বদলি গোলকিপার করণজিতের দোষে গোল খেয়ে যায় ভারত। সাফ গেমস থেকেই ডোবাচ্ছেন করণ। তবুও শুভাশিস রায়চৌধুরীর জায়গা হয়নি দলে। করণকেই নামানো হয়। তাঁকে কোনাকুনি শটে গোল দিয়ে যান ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ স্যামুয়েল। ভাবা গিয়েছিল শুরুতেই ধাক্কা খাওয়া ভারত পরের দিকে আরও নুইয়ে পড়বে। কিন্তু ওই সময়ই দেখা গেল ডাচ-কোচকে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে পুরো টিমকে উদ্বুদ্ধ করতে। আর কোচের ইঙ্গিত পেয়েই যেন ‘অন্য ভারত’ খেলতে শুরু করল। পাল্টা আক্রমণে নবি, জুয়েল, মেহতাব, ফ্রান্সিসরা বোঝাতে থাকেন হারার আগে হারতে রাজি নন তাঁরা। দ্বিতীয়ার্ধে একটা সময় দেখা যায় পুরো ক্যামেরুন দল নীচে নেমে নিজেদের গোল সামলাচ্ছে। যা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল মাঠে উপস্থিত হাজার কুড়ি দর্শকেরও। ভারতকে ঘুরে দাঁড়াতে দেখে ওঁরা জাতীয় পতাকা ওড়ালেন। দেশের নামে স্লোগানও দিতে শুরু করলেন একযোগে। তবে তার মধ্যেই ইমানুয়েল বোসোর দল একটি পেনাল্টিও আদায় করে নিয়েছিল। প্রতিআক্রমণে গিয়ে। এলান্ডু চার্লসকে নিজেদের বক্সে ফেলে দিয়েছিলেন নবি। স্পট কিকটা সোজা করণজিতের হাতে তুলে দেন এমাঙ্গা বার্টিন। কোভারম্যান্স অবশ্য দাবি করলেন, “ওটা পেনাল্টি ছিল না। রেফারি দিয়েছেন। তাই বলার কিছু নেই।”
রহিম নবিও ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হতে পারতেন। সুনীল না খেলায় গৌরমাঙ্গিকে এ দিন অধিনায়ক করে দিয়েছিলেন ডাচ কোচ। কিন্তু গৌরমাঙ্গি নয়, পুরো দলকে উদ্দীপ্ত করতে নেতৃত্ব দিলেন পান্ডুয়ার বঙ্গসন্তানই। নবির অকুতোভয় মনোভাব আর উঠে গিয়ে একের পর এক গোলমুখী পাস পুরো টিমটাকেই লড়াইতে ফিরিয়ে এনেছিল। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেন সঞ্জু প্রধানও। সুনীলের জায়গায় নেমে ভাল খেললেন মননদীপ সিংহও। গোলের সুযোগ অল্পের জন্য হাতছাড়া হল তাঁরও।
রিহার্সাল ম্যাচে জিতে ফাইনালের জন্য আত্মবিশ্বাস পেলেও ক্যামেরুন কোচ কিছুটা হতাশও। কোভারম্যান্স ভারতের কয়েক জন সেরা ফুটবলারকে বসিয়ে রাখায়। প্রতিপক্ষের পুরো শক্তির আঁচ পেলেন না যে! তবে ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য ম্যাচ শেষে বলে গেলেন, “আমি দ্বিতীয় দল নামিয়েছিলাম। সবাইকে দেখে নিতে। ফাইনালে অন্য ফর্মেশন। অন্য খেলা। আমরা জেতার জন্য তৈরি হয়েই নামব।” ফ্রান্সে দাদার মৃত্যুর জন্য রজার মিল্লা আসবেন না বলে সাংবাদিক সম্মেলনে দুঃখপ্রকাশ করলেন ক্যামেরুন কোচ। “ঠিক আছে, মিস্টার মিল্লা ট্রফিটা দেশেই হয়তো দেখবেন।”
কিন্তু ফিফা র্যাঙ্কিং-এ অনেক অনেক এগিয়ে থাকা ক্যামেরুন তা হলে সত্যিই ট্রফি নিয়ে যেতে পারবে? ‘প্রস্তুতি’ ম্যাচে ভারত যা খেলল সেই ‘লড়কে লেঙ্গে’ মনোভাব অটুট থাকলে বোসোর দলের ট্রফি জয় কিন্তু রবিবার সহজ হবে না।
ভারত: করণজিৎ, ডেঞ্জিল, গৌরমাঙ্গি, গুরবিন্দর (রাজু), নবি, সঞ্জু, জুয়েল, মেহতাব, ক্লিফোর্ড, মননদীপ (রবিন), ফ্রান্সিস (অলউইন)। |