আরও দু’টো অলিম্পিকে লড়বেন সুশীল
‘সচিনের এসএমএসে সোনা হারানোর দুঃখ ভুলেছিলাম’
দেশজুড়ে কুস্তির অ্যাকাডেমি করার কাজ শুরু করে দিলেন লন্ডন অলিম্পিকের রুপোজয়ী পালোয়ান সুশীলকুমার। আপাতত লক্ষ্য উত্তর ও মধ্য ভারত। সামনের বছর সোনপতে অ্যাকাডেমির কাজ শেষ করতে চান সেখানকার ভূমিপূত্র।
লন্ডন অলিম্পিকের পতাকাবাহককে দেড় কোটি টাকা, অডি গাড়ি ছাড়াও সোনপতে জমি দিয়েছে হরিয়ানা সরকার। মধ্যপ্রদেশ সরকারও জমির কাগজপত্র পাঠিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছে পরপর দুটো অলিম্পিকে পদক জিতে ভারতীয় খেলাধুলোয় ইতিহাস তৈরি করা সুশীলকে। নিজের রাজ্য দিল্লিও দু’কোটি টাকা পুরস্কার দেওয়ার পাশাপাশি জমিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ছত্রসাল স্টেডিয়ামে বসে সুশীল বলছিলেন, “ফুটবল, হকির মতো দলগত খেলায় ভারত কিছু করতে পারছে না। ব্যক্তিগত খেলা থেকেই পদক আসছে। আসবে। কুস্তি থেকে তো আসবেই। ” শ’খানেক পালোয়ান দাঁড়িয়ে তাঁর চারপাশে। “ছত্রসালে অনুশীলনের ব্যবস্থা ভাল। কিন্তু পড়ুয়া কুস্তিগিরদের স্কুলের জন্য অনেক দূরে যেতে হয়। আমার ইচ্ছে সোনপতে অ্যাকাডেমির সঙ্গেই স্কুল বানানোর। ইচ্ছে আছে শুধু কুস্তিই নয়, পদক আসতে পারে, সে রকম খেলা বক্সিং, ব্যাডমিন্টন, শু্যটিং অনুশীলনেরও ব্যবস্থা রাখার। বিজেন্দ্র, মেরি, সাইনা, গগনদের সঙ্গে কথা শুরু করেছি। দেখা যাক, কী হয়।”
মূল দিল্লি থেকে বহু দূরে ছত্রসাল। লালকেল্লার পিছন দিয়ে মডার্ন টাউনের দিকে যাওয়ার পথে দু’পাশে অন্তত দশ কিলোমিটার জুড়ে অসংখ্য ছবি আর কাট-আউট সুশীলের। রাজধানীর বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রী-প্রতিষ্ঠান নিজেদের ছবির সঙ্গে মহাতারকা সুশীলের ছবি লাগিয়ে ফ্লেক্স আর ব্যানারে ভরিয়ে দিয়েছে সর্বত্র। প্রতিদিন সংবর্ধনার ডাকে উড়ে যেতে হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। শুক্রবারও দিল্লিতে কুস্তি ফেডারেশন সংবর্ধনা দিল সুশীলকে। সময়ই পাচ্ছেন না ছত্রসালের আখড়ার গন্ধ নিতে। নয় বছর বয়সে যেখানে কুস্তির হাতেখড়ি। বিকেলে ন’সিটের বিলাসবহুল বিশাল গাড়িটা (মাথায় নিল আলো লাগানো) স্টেডিয়ামে ঢোকার আগেই হইচই শুরু হয়ে গিয়েছিল। সামনের সিট থেকে পাঁচ ফুট পাঁচের সুশীল নামলেন লাফ দিয়ে। থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট। গায়ে সাদা গেঞ্জি। কমান্ডোরা যেমন ভিভিআইপি-দের সঙ্গে নামেন, তেমনই গাড়ির দু’পাশের দরজা খুলে নেমে এলেন জনা ছয়েক পালোয়ান। আখড়ায় শুয়ে ছিলেন শ’খানেক শিক্ষার্থী কুস্তিগির। মুহূর্তে তারা বিছানা-বালিশ গুটিয়ে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। সুশীলকে প্রমাণ করতে। কুস্তির পৃথিবীতে এটাই নিয়ম। জল, সরবৎ এসে পড়ল গুরু-র জন্য।
অলিম্পিকে অল্পের জন্য সোনা পাননি। তাতেই এহেন বীরবরণ! “ওই সময়ের কথাটা আর মনে রাখতে চাই না। আমি যদি শুরুতেই আক্রমণে যেতাম তা হলে সোনা পেতামই। এখনও আফসোস হয়। ঠিক আছে, চার বছর পর রিওতে শোধ তুলব। বেজিং অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জিতেছিলাম। লন্ডনে রুপো। এক ধাপ এগিয়েছি। লড়াই শেষ হয়ে যায়নি। রিওতে হিসেব মতো আমার সোনা জেতারই কথা। দেশকে সোনার পদক দিতেই হবে,” দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সুশীল। ফাইনালে ডান চোখের ভ্রু ফেটে রক্ত ঝরেছিল, জাপানি প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁকে মাটিতে আছাড় মারাতে। সেই ছবিটা সুশীলের জেদ এবং প্রতিশোধ-স্পৃহা বাড়াতে আখড়ার দেওয়ালে ঝুলিয়ে দিয়েছেন তাঁর কোচ-কাম-শ্বশুর সতপাল সিংহ।
সুশীল বলছিলেন, “অলিম্পিকে সোনা হাতছাড়া হওয়ার পর প্রথম মেসেজটা পেয়েছিলাম কার জানেন? সচিন তেন্ডুলকর।! লিখেছিল, ‘তোমার লড়াই দেখছিলাম। তুমি যা করেছ সেটাই বিশাল ব্যাপার, তোমার জন্য শুধু আমি একা নই, পুরো দেশ গবির্ত।’ মেসেজটা পাওয়ার পর সোনা হারানোর দুঃখ ভুলেছিলাম। নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম এই ভেবে যে, সচিনও তো একশো সেঞ্চুরি করতে গিয়ে কত বার পারেনি! নিরানব্বই থেকে একশো নম্বরে পৌঁছতে কত বার হোঁচট খেয়েছে! শেষ পর্যন্ত কিন্তু সফল হয়েছে। আমিও পারব।”
এখন বয়স ২৯, লড়বেন ৩৭ বছর পর্যন্ত। যার মানে আরও দুটো অলিম্পিক। নিজেই জানালেন, ওটাই কুস্তিগিরদের অবসরের যথার্থ বয়স। “অনেকেই বলছেন এখন কিছু দিন বিশ্রাম নিতে। আমি অবশ্য কাল-পরশুর মধ্যেই অনুশীলন শুরু করব। এক দিনের জন্য বসে থাকলেও পরের অলিম্পিকে সোনা জেতা হবে না আমার।” গোটা সাতেক কর্পোরেট হাউস তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন করার প্রস্তুব নিয়ে হাজির। “তিনটেতে ইতিমধ্যেই সই করেছি। তবে শক্তি দেখানোর বিজ্ঞাপন ছাড়া অন্য কোনও পণ্যের প্রচার করব না,” বলতে বলতেই উঠে পড়েন দিল্লি রাজ্য পরিবহনের সাধারণ বাসচালকের অসাধারণ ছেলে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.