নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
গর্ত আর খানাখন্দে ভরা রাস্তা। তার উপর বর্ষায় জল জমে একাধিক রাস্তা তো প্রায় পুকুর। দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। এটাই পশ্চিম মেদিনীপুরেরর অধিকাংশ রাস্তার ছবি। সাধারণ মানুষ থেকে বাস মালিক সবাই বারবার প্রতিবাদ করেছেন, রাস্তা সংস্কারের দাবিতে বাস বন্ধের ঘটনাও ঘটেছে। সম্প্রতি এক বৈঠকে জেলাশাসকের কাছে রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন জেলার বিধায়কেরাও। জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত বলেন, “দ্রুত গতিতে রাস্তা সংস্কারের জন্য পূর্ত দফতরকে বলা হয়েছে। তারাও শীঘ্র সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছে।”
জেলার ২৯টি ব্লকের বেশিরভাগ রাস্তাই বেহাল। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ভেঙেচুরেও গিয়েছে। জেলা প্রশাসনের কাছে এখনও পর্যন্ত ৩১টি রাস্তা নিয়ে লিখিত অভিযোগ এসেছে। যার মোট দৈর্ঘ্য ২৬১ কিলোমিটার। দ্রুত রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে বাস মালিকেরা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই রাস্তাগুলির মধ্যে ডেবরার নন্দবাড়ি থেকে মলিঘাটি, কেশপুরের মুগবসান থেকে খেতুয়া, নেড়াদেউল থেকে কালিকাপুর, গড়বেতা ও চন্দ্রকোনা রোডের চন্দ্রকোনা রোড থেকে কাদম্বিনী রেল গেট, চন্দ্রকোনা থেকে ডুকি, গোয়ালতোড়-সারেঙ্গা রোড, সবংয়ের বুড়াল থেকে মোহাড়, ডেবরা থেকে তেমাথানি, চাঁদকুড়ি থেকে পটাশপুর, বেলদার ঠাকুরচক থেকে জাহালদা, সোনাকনিয়া থেকে সোলপাট্টা, ঘাটালের সুলতানপুর থেকে চাইপাট, বরোদা চৌকান থেকে মাগরুল, দাসপুর থেকে বৈকুন্ঠপুর, চন্দ্রকোনা টাউন থেকে ক্ষীরপাই, গোপীবল্লভপুরের ছাতিনাশোল থেকে পণ্ডাছেঁচা, নয়াগ্রামের রামেশ্বর থেকে নয়াগ্রাম, বিনপুরের রথবেড়া থেকে মাগুরা, বেলপাহাড়ি থেকে কাঁকড়াঝোর, বিনপুর থেকে বক্সী, পুখুরিয়া থেকে চন্দ্রী ইত্যাদি রাস্তা সারানোর দাবি রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, যে সব রাস্তায় বেশি বাস চলাচল করে বা বেশি মানুষের যাতায়াত সেই সব রাস্তা নিয়েই বেশি অভিযোগ এসেছে। তবে এর বাইরেও আরও অনেক রাস্তা বেহাল। |
খড়্গপুর শহরের গোলবাজারের বেহাল রাস্তার ছবিটি তুলেছেন কিংশুক আইচ। |
সম্প্রতি বিধায়কদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকা খরচ নিয়ে একটি বৈঠকে ডেকেছিলেন জেলাশাসক। সেখানে বিধায়কেরাও রাস্তা সংস্কারের উপরেই জোর দেন। বিশেষত, পুজোর আগে অন্তত ভাঙাচোরা রাস্তায় বোল্ডার মোরাম ফেলে যাতে চলাচলের উপযোগী করা হয় সেই দাবি জানানো হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, বর্ষায় রাস্তার আগাগোড়া সংস্কার করা মুশকিল। কারণ তাতে শুধু খরচই বাড়ে। আর বর্ষা ফুরোলেই ফের ভেঙে পড়ে সেই রাস্তা। কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই বলেন, “বর্ষায় রাস্তার পুরো কাজ করা সম্ভব নয় এটা ঠিক। কিন্তু যাতে খানাখন্দ বুজিয়ে তা চলাচলের উপযোগী করা হয় সেই দাবি জানিয়েছি। কারণ, এখন রাস্তার যা দশা তাতে যাতায়াত করাই মুশকিল। যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।” জেলার প্রতিটি রাস্তাই এমন বেহাল বলে অভিযোগ তাঁর। একই কথা বলেন তৃণমূলের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো। তিনি বলেন, “জেলার রাস্তাগুলির অবস্থা খুবই খারাপ। দ্রুত সংস্কারের কথা জানানো হয়েছে।”
জেলাশাসকও সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তারপরেই পূর্ত দফতরকে বিষয়টি জানান তিনি। যে’কটি রাস্তা নিয়ে অভিযোগ এসেছে তার বাইরে আর কোন কোন রাস্তা বেহাল, বেহাল রাস্তার পরিমাপ কত সেই বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বড় বড় গর্তগুলো বোল্ডার মোরাম ফেলে সংস্কারেরও কথাও বলা হয়েছে। বর্ষা পেরোলেই যাতে সমস্ত বেহাল রাস্তারই কাজ শুরু করা হয় সে জন্য পূর্ত দফতরকে আগে প্রস্তুত থাকার কথাও জানানো হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলার ৪০ শতাংশ বেহাল রাস্তা সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। তার মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে কাজ শুরু হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বানের কাজ চলছে। তবে বর্ষায় কাজের দ্রুত উন্নয়ন করা যাচ্ছে না। কিন্তু বর্ষা পেরোলেই যাতে সমস্ত বেহাল রাস্তা সংস্কার করা যায়, তার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। |