প্রশ্ন: হাওড়া শহরে এক বছর পুলিশ কমিশনার হিসাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা কী রকম?
উত্তর: হাওড়া শহরের দায়িত্ব নিঃসন্দেহে আমার কাছে খুব বড় চ্যালেঞ্জ। এ শহরের জনসংখ্যার ভার, এক কালের ‘শেফিল্ড’-এ একের পর এক বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা, বেকারত্ব, রেলের ছাঁট এবং লোহার নিলাম নিয়ে গোলমাল তো ছিলই। পাশাপাশি ছিল রাস্তার সংখ্যা কম হওয়ায় শহর জুড়ে তীব্র যানজট। নাগরিক পরিষেবার অভাব কমিশনারেটের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা সেই চ্যালেঞ্জের অনেকটাই মোকাবিলা করতে পেরেছি। আর তা সম্ভব হয়েছে হাওড়ার মানুষদের অকৃত্রিম সহযোগিতার জন্য।
প্রশ্ন: কলকাতার পাশেই হাওড়া। আপনার কী মনে হয় এই শহর দীর্ঘ দিন ধরেই উপেক্ষিত?
উত্তর: অবশ্যই। এই শহরে যে ভাবে উন্নয়ন হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি। গঙ্গার ও পারে সৌন্দর্যায়ন হলেও এ পারে হয়নি। অথচ হাওড়া শহর থেকে কলকাতা মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে। মহাকরণ মাত্র দশ মিনিটের পথ।
প্রশ্ন: পরিকাঠামোর কোনও উন্নতি না করে এত তাড়াহুড়ো করে কমিশনারেট তৈরি হওয়ায় কী সমস্যা হচ্ছে?
উত্তর: কিছু সমস্যা তো হচ্ছেই। পশ্চিমী দেশগুলিতে পরিকাঠামো তৈরি করে আইনের শাসনকে বলবৎ করা হয়। কিন্তু এখানে আইনের শাসন বলবৎ করে ধীরে ধীরে পরিকাঠামো তৈরি হয়। ফলে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়। তবে হাওড়ায় কাজ শুরু করার মতো বাহিনী প্রথমে দেওয়া হয়েছিল। সেই নিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে। পুলিশে আরও লোক নিতে হবে। তাঁদের ঠিকঠাক প্রশিক্ষণও দিতে হবে।
প্রশ্ন: কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে আপনি কোন বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ছিলেন?
উত্তর: প্রথম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল ট্রাফিক ব্যবস্থার উপর। এর পরেই জোর দেওয়া হয়েছে পুলিশের প্রশাসনিক ভবন তৈরি ও পুলিশের আধুনিক সরঞ্জামের উপর। এ বছরের মধ্যেই হাওড়ায় ট্রাফিক গার্ডের অফিস, সিটি পুলিশের গোয়েন্দা দফতরের অফিস, এডিসি ও এসিদের বসার অফিস, কম্পিউটারাইজড কন্ট্রোল রুম, ১০০ ডায়াল, ট্রাফিক সিগন্যালের উন্নতি, উন্নত রেডিও ট্রান্সমিটার সেট, এক হাজার সিভিক পুলিশ নিয়োগ-সহ কমিশনারেট ভবনের সংস্কারের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। |
প্রশ্ন: হাওড়ার বহু থানা আজও ভগ্নপ্রায়। পুলিশ ব্যারাকগুলির অবস্থাও শোচনীয়। এ গুলির সংস্কার নিয়ে কী ভাবছেন?
উত্তর: কয়েকটি থানা ও পুলিশ ব্যারাকের অবস্থা সত্যিই খুব খারাপ। আমরা রাজ্য সরকারকে সব জানিয়েছি। অর্থের সমস্যার জন্য কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছে না।
প্রশ্ন: হাওড়া শহরে মূল সমস্যা হল সপ্তাহের দু’দিন হাট ও লাইসেন্সহীন রিকশা। এ দু’টি সমস্যা সমাধানে কমিশনারেটের ভূমিকা কী?
উত্তর: আমরা আগেই বঙ্কিম সেতু থেকে বেআইনি হাট সরিয়ে দিয়েছি। এখন যাঁরা সেতুর নীচে বা অন্য রাস্তায় বসেন তাঁদের জন্য রাজ্য সরকার অন্যত্র ব্যবস্থা না করলে হাট তোলা যাবে না। কারণ, এর সঙ্গে অনেক মানুষের রুটিরুজি জড়িত। তবে বেআইনি রিকশা ধরার ক্ষেত্রে পুরসভা আমাদের সাহায্য করলে অবশ্য অভিযান চালাব। তবে পুরসভা বাজেয়াপ্ত করা রিকশা রাখার জায়গা দিতে পারছে না।
প্রশ্ন: হাওড়া শহর এত অপরাধপ্রবণ হওয়ার কারণ কী? শহরে তোলাবাজি ও অপরাধমূলক কাজ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন?
উত্তর: অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, এটা ঠিক নয়। যে কোনও উন্নয়নশীল শহরে তোলাবাজি একটা সমস্যা। যেখানেই বেশি প্রোমোটিং হয়েছে সেখানেই এ ধরনের ‘হোয়াইট কলার ক্রাইম’ বেড়েছে। আগে বড় দুষ্কৃতীদের নামে তোলাবাজি চলত। নাম শুনলে মানুষ ভয়ে টাকা দিত। কিন্তু এখন সেই ধরনের দুষ্কৃতীর সংখ্যা কমে গিয়েছে। ছোটখাটো কিছু অপরাধী এই কাজ করছে। তবে পুলিশের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা এখন বেড়েছে। মানুষ সহজেই অভিযোগ নথিভুক্ত করতে পারছেন এবং অভিযোগ করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন: কমিশনারেট কি নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে পারছে? কোনও রাজনৈতিক চাপ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সমস্যা তৈরি করছে?
উত্তর: আমাদের উপর কখনও কোনও রাজনৈতিক চাপ আসেনি। কাজের ক্ষেত্রে আমাদের যথেষ্ট স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন: অভিযোগ উঠেছে যে কমিশনারেট হওয়ার পরেও থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে সাধারণ মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ সব ক্ষেত্রে অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার বা কর্মীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?
উত্তর: এই অভিযোগ ঠিক নয়। ট্রাফিকের পরে আমাদের দ্বিতীয় সাফল্য ‘রেজিস্ট্রেশন অফ কেসেস’। গত এক বছরে থানায় গিয়ে সাধারণ মানুষ অভিযোগ নথিভুক্ত করতে পারেননি, এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা মাত্র দু’তিনটি। তবে এ সব ক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আসলে কমিশনারেট হওয়ায় বিভিন্ন পুলিশ অফিসারের এলাকা কমে যাওয়ায় নিচুতলার পুলিশকর্মীদের উপর নজরদারি বেড়েছে। পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার ও কর্মীদের দায়িত্ববোধ অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় হয়রানির হাত থেকে মানুষকে অনেকটা রক্ষা করা গিয়েছে।
প্রশ্ন: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশকে বার বার জনসংযোগ বাড়ানোর কথা বলেন। হাওড়া সিটি পুলিশ জনসংযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কতটা সফল?
উত্তর: চেষ্টা চলছে। জনসংযোগ বাড়ানোর জন্য থানার অফিসাররা ‘বিট মিটিং’ করছেন। এডিসি ও এসিরা ‘থানা দিবস’-এ থানায় বসে মানুষের অভিযোগ শুনছেন। তবে এ সবই একটি নিরন্তর প্রয়াস। চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে এক দিনে সব কিছু সম্ভব নয়। আমি এখানে থাকাকালীন পুলিশ কমিশনারেটকে যতটা পারব সাজিয়ে দিয়ে যাব। |