ভ্রাম্যমাণ যৌনকর্মীদের আড্ডার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাগনান রেল স্টেশনের ওভারব্রিজ। যে রেল স্টেশনকে ‘মডেল স্টেশন’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ, সেখানকার ওভারব্রিজে যৌনকর্মীদের অবাধ যাতায়াতে ক্ষুব্ধ নিত্যযাত্রীরা। তাঁরা এ ব্যাপারে রেল পুলিশের উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন। অথচ, বাগনান স্টেশনেই রয়েছে রেল পুলিশ এবং আরপিএফের ফাঁড়ি।
১৯৯৮ সালে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখার বাগনান স্টেশনকে ‘মডেল স্টেশন’ হিসেবে ঘোষণা করেন রেল কর্তৃপক্ষ। সাজানো হয় বহু টাকা খরচ করে। হাওড়া-খড়্গপুর শাখার অন্যতম ব্যস্ত স্টেশনগুলির মধ্যে বাগনান অন্যতম। প্রতিদিন কয়েক হাজার নিত্যযাত্রী ওই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেন। তাঁদের ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু সকাল থেকেই ওই ওভারব্রিজে ভিড় করতে দেখা যায় যৌনকর্মীদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁরা যেমন দাঁড়িয়ে আড্ডা মারেন, তেমন অনেককে সিঁড়িতেও বসে থাকতে দেখা যায়। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, সরে যেতে বললেও যৌনকর্মীরা কথা শোনেন না। তাঁদের আড্ডায় অসামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত লোকজনও ভিড় করে।
বাগনানে রয়েছে বেশ কয়েকটি হাইস্কুল এবং একটি কলেজ। বৃত্তিমূলক শিক্ষার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। সেই সব প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার পড়ুয়া বাগনান স্টেশনের ওভারব্রিজ হয়ে যাতায়াত করেন। ওভারব্রিজের উপরে প্রকাশ্যে যৌনকর্মীরা আড্ডা মারতে দেখে অস্বস্তিতে পড়েন অভিভাবকেরা। তাঁদের অভিযোগ, অনেক সময় যুবকদের সঙ্গে দৃষ্টিকটূ ভাবে হাসিঠাট্টা করতে দেখা যায় যৌনকর্মীদের।
অভিভাবকদের বক্তব্য, শুধু ওভারব্রিজই নয়, স্টেশন সংলগ্ন কিছু এলাকা, বাগনান বাসস্ট্যান্ড-এর কিছু জায়গাতেও যৌনকর্মীদের আনাগোনা রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে অসামাজিক কাজকর্মে জড়িতদের আড্ডা চলে। তাতে জড়িয়ে পড়েন অনেক স্কুল-কলেজের ছাত্রেরাও। তাঁদেরই কেউ কেউ রাস্তার বিভিন্ন বয়সের মহিলাদের উদ্দেশ্যে কটূক্তি করে। ইভটিজিংয়ের শিকার হয় ছাত্রী-কিশোরীরা। কয়েক দিন আগে বাগনানের এনডি ব্লকে এক কিশোরীকে কটূক্তির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ইভটিজারের হাতে বেধড়ক মার খান তার মাসতুতো দাদা। এনডি ব্লক, বাগনান বাসস্ট্যান্ড প্রভৃতি এলাকায় জেলা পুলিশের কোনও নজরদারি নেই বলে অভিযোগ।
উলুবেড়িয়া জিআরপি থানার দাবি, বাগনান স্টেশনের ওভারব্রিজে ভ্রাম্যমাণ যৌনকর্মীদের আড্ডা বন্ধ করতে জোরদার অভিযান চালানো হবে। হাওড়া জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য বলেন, “অপরাধমূলক কাজকর্ম কোথাও হচ্ছে খবর পেলেই অভিযান চালানো হয়।” এ ছাড়া বাগনানে ইভটিজিংয়ের ঘটনার পর থেকে শহরের কয়েকটি এলাকা চিহ্নিত করে সাদা পোশাকে নজরদারি চালানো হচ্ছে বলে তাঁর দাবি। |