বাবার দায়ে ছেলে আটক, অভিযোগ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার
বাবাকে কাজে ফেরাতে ব্যর্থ হয়ে তাঁর শিশুপুত্রকে তুলে নিয়ে গেল মনিব। শিশুটি তাঁর কাছেই রয়েছে বলে স্বীকার করলেও পুলিশ এখনও পুত্রকে পিতার হাতে তুলে দিতে পারেনি। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এখন শিশুটিকে উদ্ধারে তৎপর হয়েছে। কিন্তু পুলিশের ‘অসহযোগিতায়’ তা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ এনেছে সংস্থাটি।
কাছাড় জেলার আইরংমারায় দিনমজুর অমর পালের বাড়ি। মাস দুয়েক কাজ করেছেন ওই জেলারই চন্দ্রপুরে, জনৈক সঞ্জু দাসের বাড়িতে। অমরবাবুর অভিযোগ, ঘর-গেরস্থালির কাজ করার কথা বলে তাঁকে কাজে লাগানো হয়েছিল। পরে তাঁকে দিয়ে এলপিজি সিলিন্ডার থেকে গ্যাস চুরি করানো হত। সঞ্জুকে ‘গ্যাসের কারবারী’ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অসুস্থতার কথা বলে আমি ওই বেআইনি কাজ ছেড়ে দিতে চাই। বছর পাঁচেক আগে আমার স্ত্রী মারা যায়। এক ছেলে ও এক মেয়েকে দেখভালের পুরো দায়িত্ব আমারই।” অমরবাবুর বক্তব্য, এই অবস্থায় ভর্তি সিলিন্ডার থেকে গ্যাস চুরি করতে গিয়ে কোনও অঘটন ঘটলে ছেলেমেয়েরা অনাথ হয়ে যাবে। কিন্তু সঞ্জু তাঁকে ছাড়তে নারাজ। ক’দিন কাজে না যাওয়ায় ৬ জুলাই ধোয়ারবন্দ থানার আইরংমারায় অমর পালের বাড়িতে হাজির হন সস্ত্রীক সঞ্জু। অমরবাবু বলেন, “আমি যে আর কাজে যাব না তা স্পষ্ট করে সঞ্জুবাবুকে জানাই।” অমরবাবুর অভিযোগ, সঞ্জুবাবুরা ফেরার সময় রাস্তায় তাঁর নয় বছরের ছেলে বিরাজকে সামনে পায়। তাকেই ওরা গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায়। পরে তিনি ছেলেকে আনতে গেলে তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।
বিষয়টি ধোয়ারবন্দ থানায় জানানো হলেও গত দেড় মাসে শিশুপুত্রটিকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি পুলিশ। পরে অমরবাবু চাইল্ডলাইন নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দ্বারস্থ হন। সংস্থার শিলচর সেন্টারে কো-অর্ডিনেটর আবুল হোসেন বড়ভুইয়া ২২ অগস্ট শিলচর সদর থানায় সঞ্জু দাসের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ এনে এফআইআর দায়ের করেন। তাঁরা এই মামলায় পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ ব্যক্ত করেন। চাইল্ডলাইনের স্থানীয় কর্মকর্তা শংকর দাস বলেন, “এক দিকে অপহরণের মামলা, অন্য দিকে শিশুশ্রমিক। তা সত্ত্বেও পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।”
পুলিশের বক্তব্য, তদন্ত চলছে। ধোয়ারবন্দ থানার ইনচার্জ এন কোঁয়র জানিয়েছেন, “অমর পালের অভিযোগ শিলচর সদর থানায় জানানো হয়েছে। তাঁরা ব্যবস্থা নিচ্ছেন।” অন্য দিকে, সদর থানার রাঙ্গিরখাড়ি ফাঁড়ির ইনচার্জ ডি গোস্বামী জানান, তিনি বিষয়টি দেখছেন। প্রাথমিক তদন্তে তাঁর মনে হয়েছে, অমরবাবুই ছেলেকে সঞ্জু দাসের বাড়িতে ফেলে যান। তাকে ফিরিয়ে দিতে সঞ্জু দাসের কোনও আপত্তি নেই। তাই তিনি অমরবাবুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। শীঘ্রই বিরাজকে উদ্ধার করে তাঁর পিতার হাতে তুলে দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
সঞ্জু দাসও অপহরণের অভিযোগ অস্বীকার করে অমর পালের বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দেগেছেন। তাঁর বক্তব্য, “বাবা কাজ করার সময় ছেলেকে নিয়ে আসে। অসুস্থতার কথা বলে কাজে আসা বন্ধ করে দিলেও ছেলেটিকে সে নিয়ে যাননি। প্রতিবন্ধী শিশু। সোজা হয়ে হাঁটতে পারে না। মানবিক কারণেই আমরা তার ভরণপোষণ করছি।” তাঁর আরও অভিযোগ, “অমর পাল আমার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ধার নিয়েছেন। ওই টাকা যাতে শোধ দিতে না হয়, সে জন্যই এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ আনছেন অমর।”
তবে শেষ পর্যন্ত আর বাচ্চাটিকে নিজের কাছে রাখতে সাহস পাননি সঞ্জুবাবু। জানা গিয়েছে, এই ঘটনার তদন্তকারি অফিসার ডি গোস্বামীর সঙ্গে আলোচনার পর, গোস্বামীরই পরামর্শে সঞ্জুবাবু বিরাজকে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছেন। কিন্তু বাবা অমর পালের হাতে কেন ছেলেকে তুলে দেওয়া হল না তা নিয়ে পুলিশও নীরব।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.