শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দাদের জমির পাট্টা দেখিয়েই এ বার ঘরে ফিরতে হবে।
নামনি অসমের পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ মন্ত্রী গোষ্ঠীর বৈঠকে এই সিদ্ধান্তই নেওয়া হল। আজ দিসপুরে মন্ত্রী গোষ্ঠীর বৈঠকে ঠিক হয়, কোকরাঝাড় ও চিরাং জেলার জেলাশাসক এবং রাজ্যের রাজস্ব সচিব শরণার্থীদের কাছে থাকা জমির পাট্টা পরীক্ষা করে দেখবেন। বড়ো স্বশাসিত পরিষদের প্রধান হাগ্রামা মহিলারি জানান, যে শিবিরবাসীরা এখনও জমির পাট্টা বা অন্য পরিচয়পত্র জমা দেননি, নিজের জমি বা বাড়ি ফেরত পেতে হলে তাঁদের ৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেই সব তথ্য জমা দিতে হবে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, যাঁদের ঘর পুড়েছে, গ্রাম পুড়েছে, যাঁরা প্রায় এক বস্ত্রে কোনও রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা পালানোর সময় জমির পাট্টা নিতে পেরেছেন কী? ওই পরিস্থিতিতে সেটা আদৌ কি সম্ভব? সরকারি কর্তারা অবশ্য এই প্রশ্নে এখনও নীরব।
আজ মন্ত্রী গোষ্ঠীর বৈঠকে অংশ নেন পৃথ্বী মাজি, নজরুল ইসলাম, হিমন্ত বিশ্বশর্মা, চন্দন ব্রহ্ম, টংকবাহাদুর রয়, নীলমণি সেন ডেকা, প্রদ্যোৎ বরদলৈ, অকণ বরা। বৈঠকে ঠিক হয়, শিবিরে থাকা ‘প্রকৃত ভারতীয়’কে নিজ ভিটেয় পুনঃস্থাপিত করা হবে। ৬ সেপ্টেম্বর কোকরাঝাড় ও চিরাং-এর জেলাশাসক ও রাজস্ব বিভাগের সচিব, শরণার্থীদের পরিচয়পত্র, জমির পাট্টা এবং সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পরীক্ষা করে দেখে দরকারমতো ব্যবস্থা নেবেন। কোকরাঝাড় ও চিরাং থেকে যে সব পরিবার ধুবুরিতে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ সাপেক্ষে ফিরিয়ে আনা হবে। বড়োল্যান্ড স্বশাসিত পরিষদের উপ-প্রধান খাম্পা বড়গোয়ারি বলেন, “বড়োল্যান্ডের অধীন কোন এলাকায় ভূমিপুত্ররা রয়েছেন আর কোন এলাকায় জবরদখলকারীরা রয়েছে তা নিশ্চিত করা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। বিলাসিপাড়া, চাপড়, বাগরিবাড়ি, ধুবুরি ও গোলকগঞ্জ এলাকায় কোন কোন জমি জবরদখল করা হয়েছে তা আমরা বলতে পারব না। সেগুলি রাজস্ব দফতরের বিষয়।” সরকারি হিসেবে এখন ২১৬টি শিবিরে রয়েছেন মোট ২,৪০,০৯০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৭৩৭ জন শিবিরবাসী নিজেদের গ্রামে ফিরে গিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কমিশনার (খাদ্যের অধিকার) হর্ষ মন্দার দু’দিন ধরে ধুবুরি, কোকরাঝাড় ও চিরাং-এর ত্রাণ শিবির ঘুরে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। তিনি শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টির বিষয়ে জোর দেন। তাঁর মতে, যেহেতু এতদিন ধরে শিবির চলছে এবং শরণার্থীদের ফেরার কোনও নিশ্চয়তা নেই, তাই প্রতিটি শিবিরে একটি করে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থাকা খুব প্রয়োজন। তাঁর কথায়, “হাতে সামান্য কিছু টাকা দিয়েই সরকারের দায়িত্ব শেষ হয় না। অনেক বেশি মানবিকভাবে বিষয়গুলি ভাবতে হবে, ব্যবস্থা নিতে হবে।”
আজ অসম গণ পরিষদ বড়োভূমির সমস্যা নিয়ে জেলাশাসকের মাধ্যমে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকলিপি পাঠায়। অগপ সভাপতি প্রফুল্ল মহন্ত রাজ্যের পরিস্থিতি সামলাতে প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “এত দীর্ঘ, জটিল জনজাতি সমস্যা ও হিংসা আগে দেখেনি অসম। ২৭ বছর আগে অসম চুক্তি স্বাক্ষর হলেও তা এতদিনেও রূপায়ণ করতে না পারার ফলেই রাজ্যে অস্তিত্বের সংকট দেখা দিয়েছে।”
এ দিকে, গতকাল ৪৩ জন বিদেশিকে চিহ্নিত করার পরে আজও চিহ্নিতকরণ অভিযান চালাচ্ছে মণিপুর পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, খোদ ইম্ফল শহরে থাকা বহু অন্য রাজ্যের মানুষের কাছে হয় কোনও পরিচয়পত্র নেই অথবা জাল পরিচয়পত্র রয়েছে। এদের অধিকাংশই ঠেলা চালক, রিক্সাচালক, দিন মজুর বা কুলি। আজ ৬ জন বাংলাদেশিকে শনাক্ত করা হয়েছে। বহু ব্যক্তি ভুয়ো লাইসেন্স বা ভোটার পরিচয়পত্র দেখিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। সন্দেহ হলেও হাতে হাতে শংসাপত্র বা লাইসেন্সগুলি পরীক্ষা করার কোনও পরিকাঠামো পুলিশের কাছে নেই।
বাড়িওয়ালারা ভাড়াটেদের সম্পর্কে যে তথ্য পুলিশে কাছে জমা দিয়েছেন, মেলাতে গিয়ে দেখা গিয়েছে বাস্তবে ভাড়াটের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে ইনার লাইন পারমিট চালু করার দাবি ফের জোরদার হচ্ছে। |