এক দিকে চা, অন্য দিকে রেশম। লাগাতার গোষ্ঠী সংঘর্ষ যে অসমের এই দুই ‘ভূমিপুত্রে’রও যারপরনাই ক্ষতি করে চলেছে, তার খোঁজ রাখছে ক’জন?
অসমের আর্থিক বৃদ্ধির অনেকটাই চা-শিল্প এবং রেশম শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে। কিন্তু রাজ্যে আগুন জ্বলতে শুরু কররার পর থেকেই গোটা ব্যাপারটাই জোর ধাক্কা খেয়েছে। আর ঘুরে-ফিরে এক অর্থে ধাক্কাটা তো বাঙালিরও। একে বাঙালি চা-রসিক। তার ওপর পুজোরও বেশি দেরি নেই। কেনাকাটা শুরু হয়েছে পুরোদমে। কিন্তু আশঙ্কা থাকছে, ‘অসম-সিল্ক’ মিলবে তো!
আসলে চা হোক বা রেশম, দুই শিল্পের ক্ষেত্রেই নামনি অসম, বিশেষ করে বড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল এরিয়া ডিস্ট্রিক্টস্ (বিটিএডি) বা বড়োভূমির ভূমিকা অনেকটাই। রাজ্যে মোট উৎপাদিত চায়ের ৩০ শতাংশই আসে বড়োভূমি থেকে। রেশম শিল্পের ক্ষেত্রেও এই ‘অংশীদারী’ প্রায় ৪০ শতাংশের কাছাকাছি। কিন্তু গত দেড় মাসের লাগাতার গোষ্ঠী সংঘর্ষে চা ও রেশম উৎপাদন কার্যত বন্ধ। কবে উৎপাদন স্বাভাবিক হবে সে সম্পর্কেও নিশ্চিত নন উৎপাদকরা। |
বড়োভূমি এলাকায় কয়েক হাজার ছোট ছোট চা-বাগান। উৎপাদকরাও ছোট হলেও অন্যান্য বছর এই সময়টায় দম ফেলার ফুরসত পেতেন না তাঁরা। কিন্তু এ বছর সংঘর্ষের জেরে ভরা মরশুমেই সব বাগান খাঁ-খা। বড়োভূমির যে চা বাগানগুলো বছরে গড়ে ১.৫০ লক্ষ কেজি সবুজ পাতা সরবরাহ করে, তারা এ বছর এক লক্ষ কেজিও ছুঁতে পারবে না বলে আশঙ্কা। ছোট বাগানে মাস মাইনের স্থায়ী শ্রমিক থাকে না। আশপাশের গ্রাম থেকে লোকে দিনমজুর খাটতে আসে। কিন্তু লাগাতার সংঘর্ষ আর কার্ফুর মধ্যে প্রাণ হাতে নিয়ে কাজ করার ঝুঁকি কে নেবে?
বাগানের অবস্থা যখন এই, তখন চা পাতা প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। গোটা কোকরাঝাড়ে এমন কারখানা আছে মাত্র তিনটি। যে সব বাগানে কাজ চলছে, তাদেরও পাতা কারখানা অবধি নিয়মিত পৌঁছচ্ছে না। কারণ, অশান্ত এলাকা দিয়ে কারখানায় চা পাতা নিয়ে যাওয়ার পথে ইতিমধ্যে ভাঙচুর হয়েছে কিছু গাড়ি। পশ্চিমবঙ্গের সীমা পার করে সবুজ চা-পাতা পাঠানোর চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি। কেন? এক কারখানা ম্যানেজার জানান, অবরোধে আটকে থেকেছে গাড়ি। শুকিয়েই গিয়েছে চা-পাতা। চা-উৎপাদকদের এখন আশঙ্কা, নিয়মিত ব্যবধানে পাতা তোলা না হলে গাছের উপরে তার প্রভাব পড়বে। আগামী মরশুমে ভাল চা-পাতা মেলা সমস্যা হতে পারে।
কাজেই চা-শিল্পে কার্যত বিনা মেঘে বজ্রাঘাত। রেশম উৎপাদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় কিন্তু ছিল এটাই। কিন্তু সেখানেও হিংসার ছোবল। দেড় মাস কাজ বন্ধ থাকায় বড়োভূমির রেশম উৎপাদন ইতিমধ্যেই ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছে। অথচ দেশে এই মুহূর্তে রেশম উৎপাদনে অসম তিন নম্বরে। রাজ্যের মোট বার্ষিক উৎপাদনের মধ্যে এরি রেশমের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ১৯৭৬ টন। এর পর রয়েছে মুগা (১১৫ টন) ও মালবেরি (১৮ টন)। আগামী বছর উৎপাদন আরও বাড়ানোর সঙ্কল্প নেওয়া হয়েছিল। সেই সম্ভাবনা এখন বিশ বাঁও জলে। রেশম উৎপাদনের মত, রেশম বয়নও বড়োদের পারিবারিক সংস্কৃতি। প্রতি ঘরে তাঁত। প্রায় সাড়ে ৫০ হাজার বড়ো পরিবার রেশম উৎপাদন ও বয়নশিল্পে যুক্ত। এরি রেশম বয়নে বড়োদের কার্যত একছত্র মৌরসিপাট্টা। কিন্তু রাজ্য রেশম ও বয়ন বিভাগের মতে, সেপ্টেম্বর মাসেও পুরোদমে উৎপাদন শুরু হবে কি না সন্দেহ। ‘পরিচয়ের’ এমন সঙ্কট কি আগে দেখেছে অসম? |