|
|
|
|
আতঙ্কের মেট্রোয় প্রশ্ন সেই দেখভালেরই |
অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় |
মেট্রো বলল চাকা আটকে গিয়েছিল। রেলমন্ত্রী বললেন, কিছুই না। সামান্য ঘটনা। আর যাত্রীরা জানালেন দমবন্ধ আলো-আঁধারিতে তাঁদের আতঙ্কের বৃত্তান্ত।
মহাত্মা গাঁধী রোড স্টেশনে আসলে কী হয়েছিল বৃহস্পতিবার রাতে?
স্টেশনের বাতানুকূল যন্ত্রের পাইপ থেকে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল খুলে পড়েছিল লাইনে। তা থেকে শর্ট সার্কিট হয়েই বিভ্রাট ঘটে মেট্রো চলাচলে। যা থেকে আরও এক বার আঙুল উঠছে মেট্রোর রক্ষণাবেক্ষণ বা দেখভালের খামতির দিকেই।
স্টেশনের বাতানুকূল যন্ত্রের পাইপের মাথায় আটকানো ছিল অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েল। প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তের কাছে তারই একটি বড় টুকরো খুলে পড়েছিল নীচে। সুড়ঙ্গের মধ্যে।
রাত ন’টা দুই। দমদমমুখী ট্রেন প্ল্যাটফর্ম থেকে এগোতেই হাওয়ায় উড়ে সেই ফয়েল বিদ্যুৎবাহী তৃতীয় লাইনের সংস্পর্শে আসে। তাতেই শর্ট সার্কিট হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ট্রেনটিও কিছুটা এগিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। তত ক্ষণে চারটি কামরা সুড়ঙ্গে ঢুকে গিয়েছে। শর্ট সার্কিটের শব্দ, আলোর ঝলকানি এবং ধোঁয়ায় যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। |
|
এক মেট্রো কর্তা জানান, ফয়েলের টুকরো পড়েছিল প্ল্যাটফর্মেই। ফলে দুর্ঘটনা প্রায় প্ল্যাটফর্মেই হয়েছে। প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে সুড়ঙ্গের অনেক ভিতরে ওই ঘটনা ঘটলে আতঙ্ক বাড়ত। ঘুটঘুটে অন্ধকার, দমবন্ধ পরিবেশে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করতেন। ফলে পদপিষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা থাকত। প্রাক্তন রেলকর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুরও একই কথা বললেন, “এই ধরনের ঘটনায় ভয়ে এক সঙ্গে বেরোতে গিয়ে পদপিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।”
রেলমন্ত্রী মুকুল রায় অবশ্য এই ঘটনাকে কিছুই হয়নি বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি শুক্রবার সকালে বলেন, “কিছুই তো হয়নি। ধোঁয়া, আগুনের ফুলকি বা শব্দ কিছুই হয়নি। একটু অসুবিধা হয়েছিল এটা ঠিক। মোটরম্যান নিজেই ট্রেনটিকে পিছনে এনে যাত্রীদের ট্রেন থেকে প্ল্যাটফর্মে নামিয়ে দিয়েছেন। কুড়ি মিনিটের মধ্যে ট্রেনও আবার চলেছে।”
রেলমন্ত্রী যাই বলুন, মেট্রোর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার অবশ্য নিজেদের ত্রুটি স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, “ফয়েলের টুকরো লাইনে পড়ে যাওয়ায় এই গোলমাল হয়েছে। তদন্ত কমিটি প্রাথমিক রিপোর্টে এই কথাই বলা হয়েছে। তবে ঘটনার সময় ট্রেনের মধ্যে
আলো নেভেনি।”
মেট্রো কর্তাদের একাংশই কিন্তু মনে করছেন, এটাকে নিছক দুর্ঘটনা বলে ধরে নেওয়া যায় না। মূল ত্রুটি রক্ষণাবেক্ষণের। শুধু বাতানুকূল যন্ত্র নয়, স্মার্ট গেট থেকে শুরু করে কামরার দরজা বন্ধ না হওয়া রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটি রয়েছে মেট্রোর সর্বত্র।
অভিযোগের অন্ত নেই মেট্রোর রেক নিয়েও।
ট্রেনের ব্রেক আটকে যাওয়া থেকে শুরু করে আগুনের ফুলকি ঝরাও হয়ে উঠছে প্রায় নিত্যকার ঘটনা।
মেট্রোর প্রথম ৮টি রেক এসেছিল ১৯৮০ সালে। পরে আসে আরও ১০টি। মোট ১৮টি রেক নিয়েই ১৯৮৪ সালের অক্টোবরে যাত্রা শুরু করেছিল মেট্রো। এর পরে আর একটিও সাধারণ রেক আসেনি কলকাতা মেট্রোতে। ফলে রেকগুলির বয়স নয়-নয় করে প্রায় ৩০ বছরের বেশি হয়ে গিয়েছে।
রেল কর্তারা জানিয়েছেন, যে রেকগুলি মেট্রোতে চলে, তাদের আয়ু মোটের উপর ২৫ বছর। সেই সময়ও পেরিয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। সুভাষবাবুর কথায়, “নতুন রেক না আনা পর্যন্ত এই ভোগান্তি কমানো সম্ভব নয়।”
কিন্তু নতুন রেক এলেই যে ভোগান্তি কমবে সে কথাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ গত দু’বছরে যে ৮টি বাতানুকূল রেক এসেছে মেট্রোতে। সেগুলিতেও রয়েছে যান্ত্রিক ত্রুটি। ফলে সেগুলি দিয়েও ঠিক মতো চালানো যাচ্ছে না মেট্রো। আর তাতেই বাড়ছে যাত্রীদের ভোগান্তি।
ফলে শুধু রেকের সমস্যা নয়, দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি যে মেট্রোর সর্বাঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে তারই নমুনা দেখলেন ঘরমুখো শহরবাসী।
রেলমন্ত্রীর বয়ানে যা, ‘একটু অসুবিধা’! |
|
|
|
|
|