অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৫.৫%। আর তাতেই অন্তত কিছুটা স্বস্তির শ্বাস ফেলছে কেন্দ্র। কারণ তাদের ধারণা, এ বার আগামী ত্রৈমাসিকগুলিতে হাল ফিরবে দেশের অর্থনীতির।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ মনে করেন, ফের ৯% বৃদ্ধির সড়কে ফেরার চেষ্টা পুরোদমে শুরু করা যেতে পারে এই বিন্দু থেকেই। তবে তার জন্য প্রয়োজন আর্থিক সংস্কার। যা নিশ্চিত করতে পারে একমাত্র রাজনৈতিক ঐকমত্যই।
সাড়ে ৫ শতাংশ বৃদ্ধিতে আশার আলো দেখছেন যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া-ও। তাঁর মতে, এই হার অবশ্যই সন্তোষজনক নয়। কিন্তু তা আগের ত্রৈমাসিকের ৫.৩ শতাংশের তুলনায় সামান্য হলেও বেশি। কিছুটা বেশি পূর্বাভাসের তুলনাতেও। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধি আরও কমে গেলে অর্থনীতির পা চোরাবালিতে ডুবে যেত বলে আশঙ্কা ছিল কেন্দ্রের। কিন্তু তা বাড়ায় সেই আতঙ্ক আপাতত কেটেছে। বরং মনে করা হচ্ছে যে, পড়তে থাকার প্রবণতা কাটিয়ে মুখ তুলতে শুরু করেছে অর্থনীতি। গত অর্থবর্ষের চতুর্থ ত্রৈমাসিকের বৃদ্ধির হার সংশোধন হয়ে বাড়তে পারে বলেও এ দিন ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
আর্থিক বৃদ্ধির হার সামান্য বাড়লেও, প্রথম ত্রৈমাসিকে উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধি মাত্র ০.২%। তাই এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, উৎপাদন শিল্পে গতি আনা জরুরি। আর সে জন্য দরকার নীতি তৈরি এবং অনুমোদন দেওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা। তুলনায় কিছুটা ভাল ফল করেছে কৃষি (২.৯%)।
বৃদ্ধির পরিসংখ্যানে কেন্দ্র কিছুটা স্বস্তি পেলেও, তা খুশি করতে পারেনি শিল্পমহলকে। বরং অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে কেন্দ্রকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে ফের আর্জি জানিয়েছে তারা। খুশি হয়নি শেয়ার বাজারও। দিনের শেষে ১৬১ পয়েন্ট পড়ে সেনসেক্স দাঁড়িয়েছে ১৭,৩৮০.৭৫ অঙ্কে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বাজার মনে করেছে এই পরিসংখ্যানের পর আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর ঋণনীতিতে সম্ভবত সুদ কমাবে না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আর এই আশঙ্কাই এ দিন পতন ডেকে এনেছে বাজারে। ওঠা-পড়ার এই বাজারে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভেল-এর বিলগ্নিকরণও পিছিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্র। এ দিনই এ কথা জানিয়েছেন ভারী শিল্পমন্ত্রী প্রফুল্ল পটেল।
অবশ্য, প্রায় সকলেই মনে করছেন আগামী দিনে অর্থনীতির গতিপথ নির্ভর করবে মূলত তিনটি বিষয়ের উপর
১) সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরিতে কেন্দ্রের সাফল্য
২) মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানা যাবে কি না
৩) আগামী কয়েক মাসে বিশ্বের আর্থিক পরিস্থিতি
এই তিনটির মধ্যে আবার প্রথমটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ। এসঅ্যান্ডপি বা ফিচ রেটিংস-এর মতো আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা তো বটেই, সংস্কারে জোর দিতে কার্যত আর্জি জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও। পরিকাঠামোয় বৃদ্ধি কমলো। জুলাইয়ে আটটি মূল পরিকাঠামো শিল্পে বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়াল ১.৮%। এর জন্য মূলত দায়ী অশোধিত তেল (০.৭%), প্রাকৃতিক গ্যাস (১৩.৫%) এবং সারের (২.২%) উৎপাদন সঙ্কোচন। এই ৮টি ক্ষেত্রের খারাপ ফলের প্রভাব শিল্প সূচকের উপরেও পড়বে বলে অনেকের আশঙ্কা। |