প্রবল হুড়োহুড়ির ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ আব্দার, “একটা অটোগ্রাফ দেবেন স্যার।” কিছুটা থমকে গেলেন তিনি। আব্দারের কারণ একটাই। আগামী ডিসেম্বরে পাকাপাকি অবসর নেওয়ার আগে এটাই তাঁকে নাগালে পাওয়ার শেষ সুযোগ।
না, তিনি কোনও খেলোয়াড় নন। তিনি ৭৫ ছুঁইছুঁই ‘যুবক’, রতন টাটা। যিনি এক সময় বিলেতের ইস্পাত শিল্প সংস্থা কোরাস কেনার পরে সেখানে চরম বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন। পরে কোরাস-এরই ছাঁটাই কর্মীদের ফিরিয়ে নিয়ে কিংবা বিলিতি গাড়ির ‘ব্র্যান্ড’ জাগুয়ার ও ল্যান্ডরোভারকে ফিনিক্স পাখির মতো পুনর্জন্ম দিয়ে গোটা বিশ্বের চোখেই যিনি এক জন ‘হিরো’। তাই ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হওয়ার জোগাড় হলেও তাঁর অটোগ্রাফ নিতে দৌড়ন ভক্তরা। শুক্রবার টাটা গ্লোবাল বেভারেজেস-এর বার্ষিক সভার শেষে সংস্থার শেয়ারহোল্ডারদের ডাকে সাড়া দিয়ে সই দিলেন তিনি।
৪০ বছর আগে টাটা স্টিলের ‘শপ ফ্লোর’ থেকে কর্মজীবন শুরু করে রতননভল টাটা ১৯৯১-তে পৌঁছেছিলেন টাটা গোষ্ঠীর শীর্ষ পদে। তাঁর কর্মজীবনে একের পর এক নতুন শিখরে পৌঁছেছে টাটা গোষ্ঠী। ন্যানো গাড়ি তৈরি করে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে তারা। স্বদেশের মাটি ছাড়িয়ে খ্যাতি লাভ করেছে আন্তর্জাতিক দুনিয়াতেও। আর তামাম দুনিয়ার কুর্নিশ পেয়েছেন রতন টাটা।
এ দিন যথেষ্টই আবেগপ্রবণ ছিলেন তিনি। সে কথা স্বীকারও করেছেন। কারণ, টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান হিসেবে এটিই ছিল তাঁর শেষ বার্ষিক সভা। আবেগতাড়িত ছিলেন সংস্থার শেয়ারহোল্ডাররাও। |
তাঁদেরই এক জন যখন অতীতে জামশেদপুরে ক্রিকেট খেলায় তাঁর অংশ নেওয়ার স্মৃতিচারণা করলেন, রতন টাটা মাথা ঝাঁকিয়ে তাঁকে সমর্থন করলেন। এ দিন খোলাখুলি অনেক কথাই বললেন তিনি। যেমন টাটা স্টিলের অন্যতম ডিরেক্টর রুসি মোদির সঙ্গে এক সময়ে মতপাথর্ক্যের কথা অস্বীকার করেননি তিনি। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, মতপার্থক্য সরিয়ে ফের বন্ধুত্বের সম্পর্কটাই এখন রয়েছে তাঁদের মধ্যে।
আবেগ থাকলেও নিজের কর্তব্য ভুলে যাননি তিনি। উত্তরসূরি সাইরাস পালোনজি মিস্ত্রির সঙ্গে শেয়ারহোল্ডারদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। সাইরাসকে এই সংস্থায় ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব সভার কাছে পেশ করেছেন বিদায়ী চেয়ারম্যান নিজেই। কঠিন সময়েও পাশে থেকে টাটা গ্লোবাল বেভারেজেস-এর ব্যবসা বিস্তারের জন্য সর্বসমক্ষে কুর্নিশ জানিয়েছেন সহকর্মী কৃষ্ণকুমারকে।
শেয়ারহোন্ডাররা চেয়েছিলেন, তিনি বসেই বক্তৃতা দিন। কিন্তু বরাবরের মতোই দাঁড়িয়েই জবাবি বক্তৃতা দিলেন তিনি। বললেন, এটা তাঁর শেষ সভা নয়। আগামী দিনেও আসবেন। তবে মঞ্চে হয়তো আর বসবেন না। অন্য শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে বসেই প্রশ্ন করবেন উত্তরসূরি সাইরাসকে। রাতে মুম্বই ফিরে যাওয়ার আগে অবশ্য রাজারহাটে তাঁদের ক্যানসার হাসপাতালে ঘণ্টাখানেক কাটান রতন টাটা। সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি ও হাসপাতালের সম্প্রসারণ পরিকল্পনা তাঁকে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। |