রাজ্যে টাটা মোটরস ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করতেই পারে। তবে সে জন্য চাই রাজনৈতিক স্তরে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ। টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর কর্মজীবনের শেষ বার্ষিক সভায় এসে শুক্রবার এ কথা বলেন রতন টাটা।
সিঙ্গুর সমস্যার পরেও রাজ্যে টাটা গোষ্ঠীর বিনিয়োগ নিয়ে সব সময়েই ইতিবাচক থেকেছেন রতন টাটা। কিন্তু যে সংস্থার বিনিয়োগ ঘিরে অশান্তি রাজ্যের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক স্তরে বিবাদের বিষয় হয়েছিল, সেই টাটা মোটরস-এর ফের এ রাজ্যে বিনিয়োগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা থেকে এত দিন বিরত ছিলেন তিনি। এই প্রথম সেই নীরবতা ভেঙে তিনি জানিয়ে গেলেন, এই বিনিয়োগ যদি হয়, তা হলে তা রাজ্যের যে কোনও জায়গাতেই হতে পারে।
তার মানে কি টাটাদের বিনিয়োগ মানচিত্র থেকে সিঙ্গুর বাদ?
এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি রতন টাটা। শুধু বলেছেন, “কে জানে, কোনও এক দিন হয়তো এ রাজ্যের কোথাও টাটা মোটরস-এর কারখানা গড়ে উঠবে। এবং সকলেই তাকে স্বাগত জানাবে।” এর মধ্যে শিল্পমহল অবশ্য সাধারণ সৌজন্যের বাইরে এই মুহূর্তে অন্য ভাবে দেখতে নারাজ।
তবে তিনি এ-ও স্পষ্ট করে দেন, টাটারা বরাবরই রাজ্যবাসীর কাছ থেকে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার পেয়েছেন। এবং এই পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি সরকারের ইচ্ছে এবং সৌহার্দ্যমূলক রাজনৈতিক পরিবেশের উপর জোর দিয়েছেন।
আগামী ডিসেম্বর মাসে টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধারের পদ থেকে অবসর নেবেন রতন টাটা। এ দিন টাটা গ্লোবাল বেভারেজেস (আগেকার টাটা টি)-এর বার্ষিক সভায় যোগ দিতে উত্তরসূরি সাইরাস পালোনজি মিস্ত্রিকে নিয়ে বৃহস্পতিবার শহরে পৌঁছন তিনি।
নির্দিষ্ট আলোচ্যসূচির বাইরে এ দিন সভায় ওঠে সিঙ্গুর কিংবা টাটাদের লগ্নির প্রসঙ্গও। এক শেয়ারহোল্ডার তাঁর কাছে আর্জি জানান, টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পদ থেকে অবসরের আগে সিঙ্গুর সমস্যার সমাধান করে দিয়ে যান তিনি। কারণ সিঙ্গুরে টাটাদের লগ্নি শুধু কর্মসংস্থানই নয়, স্থানীয়দের কাছে চিকিৎসা ব্যবস্থার সুযোগও পৌঁছে দিয়েছিল।
টাটা বলেন, “সিঙ্গুরের ঘটনা আমার মনে কোনও উষ্মার উদ্রেক করে না। বরং এটা একটা দুঃখের অনুভূতি জাগায়। আমরা যা করতে চেয়েছিলাম তা করতে পারিনি। তবে বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। তার ফল যাই হোক না কেন, আমরা তা মেনে নেব।
কারণ আইনকে আমরা শ্রদ্ধা করি। যেমন শ্রদ্ধা করি রাজ্য সরকারের ইচ্ছেকেও।” রাজ্য সরকারের ইচ্ছে প্রসঙ্গে তাঁর এই বক্তব্য অবশ্য নতুন নয়। তবে জমি ফেরতের প্রসঙ্গে টাটাদের অবস্থান হল, ক্ষতিপূরণের বিনিময়েই জমি ফেরত দিতে পারেন তাঁরা। কারণ ওই জমিতে ইতিমধ্যেই তাঁরা প্রচুর টাকা ঢেলেছেন।
লগ্নির গন্তব্য হিসেবে এ রাজ্য কখনওই তাঁদের কাছে ব্রাত্য নয়, এ দিন ফের তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “শিল্পগোষ্ঠী হিসেবে বা ব্যক্তিগত ভাবে এ রাজ্য থেকে চলে যাওয়ার কোনও ইচ্ছে আমাদের নেই।”
প্রথম যে দিন এ রাজ্যে বিনিয়োগ করার কথা বলেন, তখন থেকেই পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে তাঁর সহানুভূতির কথা গোপন করেননি টাটা। এ দিনও তাঁর গলায় ছিল সেই সুর।
টাটা জানিয়েছেন, জামশেদপুরে ছ’বছর থাকার সূত্রে প্রায়ই কলকাতায় আসতেন তিনি। তাই এ রাজ্যে গাড়ি তৈরির করতে চেয়েছিলেন তিনি। তেমনই উল্লেখ করেছেন, রাজারহাটে তাঁদের হাসপাতালের মাধ্যমে ক্যানসার আক্রান্তদের সেবা করার কথাও। পূর্ব ভারত থেকে প্রচুর ক্যানসার আক্রান্ত মুম্বইয়ে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে যান বলে এ রাজ্যেই সে রকম একটি হাসপাতাল গড়ার কথা ভেবেছিলেন তাঁরা। আগামী দিনে এই হাসপাতালটি রাজ্যের একটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলেই বিশ্বাস তাঁর। |