লগ্নিকারীদের ২৪ হাজার কোটি
ফেরাতে সহারাকে নির্দেশ কোর্টের
শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে যারা, সেই ‘সেবি’ অনুমতি দেয়নি। তবু তিন বছর ধরে দু’কোটি তিরিশ লক্ষ মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলেছে সহারা গোষ্ঠী। অঙ্কটা কম নয়, ১৭ হাজার ৪০০ কোটি। সেই টাকা সুদ সমেত আবার ওই আমানতকারীদেরই ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। যা ২৪ হাজার কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে মূলত গ্রাম ও মফস্বল থেকে এই বিপুল পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করে সুব্রত রায়ের সহারা গোষ্ঠীর দুই সংস্থা সহারা ইন্ডিয়া রিয়েল এস্টেট কর্পোরেশন এবং সহারা হাউসিং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন। কিন্তু লগ্নির নিরাপত্তা না-থাকার অভিযোগে তা নিয়ে আপত্তি তোলে সেবি। গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে সেবি-র সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা লড়েছে সহারা গোষ্ঠী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টও আমানতকারীদের কাছে টাকা ফিরিয়ে দিতেই নির্দেশ দিয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে সহারা গোষ্ঠীর ওই দুই সংস্থাকে ১৫% সুদ-সহ টাকাটা ফিরিয়ে দিতে হবে। আমানতকারীরা যাতে লগ্নির টাকা ঠিকঠাক ফিরে পান, তা নিশ্চিত করতে সেবি-কে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। এ দিনের রায়ে আরও বলা হয়েছে, নির্দেশ না মানলে সংস্থা দু’টির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করা হবে। এমনকী, সেবি তখন আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ইচ্ছে করলে ওই দুই সংস্থার সম্পত্তিও নিলাম করতে পারে। এখানেই থেমে না থেকে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, এই ভাবে টাকা তোলার ‘জাল’ কত দূর ছড়ানো, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করুক সেবি। এ জন্য যাবতীয় তথ্য এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খুঁটিনাটি তাদের কাছে জমা দিতে সংস্থা দু’টিকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি দেখাশোনার জন্য নিয়োগ করেছে প্রাক্তন বিচারপতি বি এন অগ্রবালকে।
সহারার মতো যে সব সংস্থা ‘অনুমোদন ছাড়া’ টাকা তুলছে, এই রায় তাদের প্রতিও কড়া বার্তা দেবে বলে মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, এ ধরনের আর্থিক অনিয়মকে কড়া হাতে দমন করা জরুরি। না-হলে তা থেকে ফের বড় মাপের কেলেঙ্কারি জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা।
মামলানামা
জানুয়ারি, ২০১১
জুন-জুলাই, ২০১১
নভেম্বর, ২০১১
অগস্ট, ২০১২
সহারা অবশ্য জানিয়েছে, কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের কাছে আইন মেনে অনুমোদন নেওয়া সত্ত্বেও অকারণে এত বড় শাস্তি পেল তারা। একই সঙ্গে তাদের দাবি, গত ৩৩ বছরে বারবার অভিযোগ তোলার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কখনও বেনামী টাকা রাখা বা টাকা ফেরত না দেওয়ার কোনও ঘটনা সামনে আসেনি। বরং ব্যাঙ্ক পরিষেবার সুবিধা যাঁরা পান না, তাঁদের দরজাতেই বরাবর পৌঁছনোর চেষ্টা করেছেন তাঁরা।
এ দিন শীর্ষ আদালতের রায়ের পরে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এত লোকের কাছ থেকে এত বড় অঙ্কের টাকা কী ভাবে তুলল সহারা গোষ্ঠী? এর পিছনে কি তা হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগই কাজ করেছে? ভারতে প্রথম বার শেয়ার ছেড়ে সব থেকে বেশি টাকা তোলার নজির এখনও পর্যন্ত কোল ইন্ডিয়ার। কিন্তু সহারার ক্ষেত্রে তো সেবি-র অনুমোদনই ছিল না! তা হলে?
অনেকেই মনে করছেন, গ্রামগঞ্জের যে মানুষের কাছ থেকে এই ভাবে টাকা তুলেছে সহারা, তারা বেশির ভাগই সেবি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। বরং তাদের অনেক বেশি প্রভাবিত করতে পারে সহারার সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেট দলের যোগ। গত প্রায় এক দশক ধরে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান স্পনসর সহারা। টিভি-তে ধোনি বাহিনীর খেলা মানেই বারবার সহারার ‘লোগো’ ভেসে উঠবে চোখের সামনে। নিয়মিত তা দেখতে দেখতে সংস্থা সম্পর্কে আস্থা জন্মেছে বহু মানুষের। তাই সম্ভবত টাকা ঢালতে দ্বিধা করেননি তাঁরা। এখন ভারতীয় হকি দলের স্পনসরও সুব্রত রায়ের সংস্থা। এ দেশের একমাত্র ফর্মুলা-ওয়ান রেসিং দল ‘ফোর্স ইন্ডিয়া’-র অন্যতম মালিক তারা। সম্প্রতি নিউ ইয়র্কের বিখ্যাত প্লাজা হোটেলের মালিকানা হাতে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে সহারা। কিনে নিয়েছে লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী গ্রসভেনর হাউস হোটেলও। ফলে, সব মিলিয়ে ব্র্যান্ড-সহারার ‘ঔজ্জ্বল্য’ বাজারে তার প্রতি আস্থা বাড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তিন মাসের মধ্যে ২৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ ফিরিয়ে দিতে হবে আমানতকারীদের। অনেকেরই প্রশ্ন, এত অল্প সময়ের মধ্যে এই বিপুল অঙ্কের টাকা কী ভাবে জোগাড় করবে তারা? সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, সংগ্রহ করা টাকার একটা বড় অংশ অ্যাম্বি ভ্যালির মতো বিলাসবহুল আবাসন প্রকল্প তৈরিতে ঢেলেছে সহারা। কিন্তু ওই সমস্ত প্রকল্প আদপে কতটা লাভজনক হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকেরই মনে।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি সহারার এই আমানত প্রকল্প নিয়ে লগ্নিকারীদের সতর্ক করতে প্রথম বিজ্ঞপ্তি জারি করে সেবি। বাজার নিয়ন্ত্রক জানায়, তাদের অনুমোদন ছাড়াই ঋণপত্রের মাধ্যমে ওই টাকা তুলছে সহারার দুই সংস্থা। ফলে সেখানে লগ্নির ঝুঁকি পুরোদস্তুর টাকা ঢালা ব্যক্তির উপরেই বর্তাবে বলে স্পষ্ট জানায় তারা। নির্দেশ দেয় আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার। এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যায় সহারা। শীর্ষ আদালত শেয়ার বা ঋণপত্র সংক্রান্ত বিবাদ মীমাংসার ট্রাইব্যুনাল (এসএটি)-এ পাঠায়।
এসএটি-ই জানায়, লগ্নির নিরাপত্তা নিয়ে সেবির উদ্বেগ যুক্তিগ্রাহ্য। লগ্নিকারীদের টাকা ফিরিয়ে দিতে বলে তারা। টাকা না-মেটানো পর্যন্ত শেয়ার বাজারের মাধ্যমে টাকা তোলার পথ বন্ধ করে দেয় সেবি-ও। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ফের সুপ্রিম কোর্টে যায় সহারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টাকা ফেরতের রায় বহাল রাখল শীর্ষ আদালতও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.