ভাদু গান সংরক্ষণের দাবি শিল্পীদের
পেটের জন্য বা পেশার তাগিদে নয়। পুরুষানুক্রমিক হাতে হাত ধরে আসা লোকসংস্কৃতিকে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্যই তাঁদের গ্রাম-শহরে ঘোরা। নাচের সঙ্গে গাইতে হয় গানও। এখানেই শেষ নয় চিরাচরিত প্রথা মেনে লোকসংস্কৃতির ধ্বজা তুলে ধরার পাশাপাশি জনপ্রিয় বাংলা ও হিন্দি গান জুড়ে দিয়েছেন ভাদুর সঙ্গে। তবে শিকড়কে ভুলে নয়। এ ভাবেই ভাদ্র মাসে গ্রাম-শহরে ঘুরে বেড়ান ভাদুর শিল্পীরা।
লাভপুর থানা এলাকার ইন্দাসের ১১-২১ বছরের ছেলেরা ৮-৯ সদস্যের দলে ভাগ হয়ে ভাদুর গানে মাতিয়ে দেন দর্শকদের। শুধু বীরভূমের এ-প্রান্ত বা ও-প্রান্ত নয়, আশপাশের জেলাতেও তাঁদের সমান সমাদর। ভাদুর বার্তা নিয়ে বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া-সহ আশপাশের কয়েকটি জেলায় তাঁরা ঘুরে বেড়ান। সেই দলে থাকে যেমন স্কুল পড়ুয়া তেমনি স্কুলছুট হয়ে সংসারের হাল ধরা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের শ্রমিকেরাও। ‘আমরা ভাদুর পুজো করি কোন গো, সোনার বাংলাতে। মহালক্ষ্মী ভাদু মুনি গো, অকালে এই শরতে.....’ এমন লাইনগুলো আউড়ে ঘুরেবেড়ায় ইন্দাস-ভরতপুরের দাসপাড়ার বালক, কিশোর, তরুণের দল।
ভাদুর দল। বোলপুরে ছবিটি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
যাঁরা এলাকায় ছোট দল বলে পরিচিত। দলের মূল গায়ক মিঠুন দাসের কথায়, “আমরা চাষের কাজ করি। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পেও কাজ করি। কিন্তু ভাদুর মাস এলে মন কেমন করে। ঢোলের শব্দ কানে এলে চেষ্টা করেও থাকতে পারি না। দল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি ভাদুর বার্তা দিতে।” বিপ্রটিকুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র বিশ্বজিৎ দাস দলে নাচে। তার কথায়, “পড়াশোনার ফাঁকে গ্রামে কাকা-দাদাদের কাছে নাচ শিখেছি। তালের সঙ্গে সঙ্গে নাচা ইংরেজি পড়া থেকে কঠিন মনে হত। কিন্তু ইদানিং অনেক সহজ হয়েছে। টিভিতে বিভিন্ন মনোরঞ্জনের অনুষ্ঠান দেখে বাংলা ও হিন্দি গানের নাচও ভাদুতে যোগ করা হয়।”
এ ভাবেই আধুনিকতার সঙ্গে চিরাচরিত লোকসংস্কৃতিকে মিশিয়ে দর্শকদের সঙ্গে তুলে ধরেন ভাদুর দল। তবে লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যকে খাটো করে নয়। দলের অন্য সদস্যরা যারা পাঁচালি, দুয়ারি করেন যেমন বুদ্ধদেব, বাদল, স্বাধীন, খোকন, সুমন্তরা বলে, “এক সময় ভাদু রোজগারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হত বলে বাবা-ঠাকুরদার কাছে শুনেছি। এখন নিছক লোকসংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরতে ভাদুল দলে আসা।” দলের ঢোল বাদক কালীশঙ্কর দাসের কথায়, “এই সময়ের জন্যই তো অপেক্ষা করা। কাজের ফাঁকে রেওয়াজ করার আনন্দটাই আলাদা। এমনও দিন গিয়েছে, সাইকেলের পিছনে ঢোল বেঁধে কাজের সরঞ্জামের মতো সানন্দে নিয়ে যেতাম। একটু ফাঁক পেলেই রেওয়াজ করতাম। তবে গ্রাম শহরে ইদানিং ভাদুর কদর কমেছে।”
এ তো গেল ছোট দলের কথা। বরিষ্ঠ সদস্য তথা ভাদু গানের লেখক বঙ্কিমচন্দ্র দাস, হারাধন দাস, চন্দ্রশেখর বাগদিরা বললেন, “ভাদুর গান নিয়ে এখন খুব একটা মাতামাতি চোখে পড়ে না। কিন্তু পূর্বপুরুষদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তরুণদের প্রচেষ্টা প্রশংসার দাবি করে।” তাঁদের দাবি, “পেশা না হলেও এই সংস্কৃতিকে বাঁচানোর জন্য প্রশাসন উদ্যোগী হলে ভাল হয়।” বোলপুর মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক সূর্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ভাদু গান সংগ্রহ করে রাখা অবশ্য প্রয়োজন। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আসেনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.