লাগাতার গুলির আওয়াজ আর ত্রস্ত পায়ের ছুটোছুটি। এই শব্দ শুনেই আজ ঘুম ভাঙল নিউ জার্সির।
এক সপ্তাহ পেরোতে না পেরোতেই আবার বন্দুকবাজের কবলে আমেরিকা। তখনও ভোরের আলো ফোটেনি ঠিক মতো। ঘড়ির কাঁটায় সবে চারটে। বুলেটপ্রুফ পোশাকে শরীর ঢেকে আচমকাই ওল্ড ব্রিজের ‘পাথমার্ক সুপার-মার্কেটে’ হানা দেয় এক বন্দুকবাজ। এক হাতে একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল, অন্য হাতে স্বয়ংক্রিয় বন্দুক।
বাজার খোলার কথা সকাল ৬টায়। তাই ৪টে থেকেই গোছগাছ শুরু করছিলেন বিভিন্ন দোকানের কর্মচারীরা। কিন্তু সেই কাজ আর শেষ হয়নি তাঁদের। তার আগেই ছুটে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি। এর পর বন্দুক থেকে নিজেকে লক্ষ্য করেই গুলি চালান ওই বন্দুকবাজ।
পুলিশ জানিয়েছে, নৌ-বাহিনীর প্রাক্তন কর্মী পাথমার্ক সুপার-মার্কেটেরই এক দোকানের কাজে যোগ দিয়েছিলেন। গোটা কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন তিনিই। অন্যান্য দিনের মতোই কাল রাতেও কাজ সেরে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। আজ ভোর হতে না হতেই বন্দুক নিয়ে আবার চলে আসেন দোকানে।
গুলির শব্দ পেয়ে মুহূর্তের মধ্যেই গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ। কর্মীদের পাশেরই এক রেস্তোরাঁয় সরিয়ে নিয়ে গিয়ে ফাঁকা করে দেওয়া হয় সুপার-মার্কেট চত্বর। রুট-৯ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় গাড়ি চলাচল।
ওল্ড ব্রিজের মেয়র ওয়েন হেনরি জানিয়েছেন, বন্দুকবাজ-সহ মারা গিয়েছেন মোট তিন জন। তবে আহতের সংখ্যা এখনও নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। |
ওল্ড ব্রিজ থেকে ২৫ মাইল দূরে নিউ ইয়র্ক। সেখানে গত শুক্রবার সকালটাও ঠিক এ রকম আতঙ্কের মধ্যে দিয়েই শুরু হয়েছিল। শহরের সদাব্যস্ত প্রাণকেন্দ্র এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের সামনে সে দিন এলোপাথাড়ি গুলি চালায় এক বন্দুকবাজ। পরে জানা যায়, ওই ভবনেরই এক অফিসের প্রাক্তন কর্মচারীর কীর্তি এটা। চাকরি হারানোর আক্রোশে নিজের দুই সহকর্মীকে গুলি করে হত্যা করেন তিনি।
শুধু এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংই নয়, গত এক মাসে বন্দুকবাজের হামলার তালিকায় জুড়েছে মার্কিন মুলুকের একের পর এক জায়গার নাম। গত ২০ জুলাই কলোরাডোর এক সিনেমা হলে ‘ডার্ক নাইট রাইজেস’ চলাকালীন আচমকাই ঢুকে পড়ে এক আততায়ী। হাতের বন্দুক থেকে নাগাড়ে গুলি চালিয়ে হলের মধ্যেই মেরে ফেলে ১২ জনকে। এর কিছু দিনের মধ্যেই উইসকনসিনের গুরুদ্বারে হামলা চালায় নয়া নাৎসি মাইকেল ওয়েড পেজ। মৃত্যু হয় ছয় শিখের। একের পর এক এই ঘটনায় দেশের অস্ত্রআইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুই পদপ্রার্থী বারাক ওবামা ও মিট রোমনির কাছেও অস্ত্র আইনে পরিবর্তন চেয়ে আবেদন করেছেন কিছু স্বজনহারা। তবে এ নিয়ে এখনও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেননি তাঁদের কেউই। আপাতত বন্দুকের নল থেকে রেহাই মিলবে কবে, সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে গোটা দেশে। |