ঘরের ভেতর আগুন জ্বালিয়ে বসে আছি। এই অন্ধকারে ফায়ার প্লেসই সম্বল।
কিন্তু আগুনে হাত সেঁকেও কিছুতেই শীত কাটছে না। তবে সেটা ঠান্ডায় না ভয়ে বুঝতে পারছি না। গত ক’দিন ধরেই শুনে যাচ্ছি আইজ্যাক আসছে। এবং তাতে নাকি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে আমাদের এই শহর ব্যাটন রুজেরই। সেই ভয়টাই তিন দিন ধরে জাঁকিয়ে ছিল। এখন তার সঙ্গে ধৈর্য্যের পরীক্ষাও। কবে কাটবে এই অবস্থা? আর কতক্ষণ থাকতে হবে এই অন্ধকারে? কেউ জানে না।
প্রায় ৮০ মাইল বেগে হাওয়া দিচ্ছে। জানলা শক্ত করে বন্ধ করা। কিন্তু বাতাসের তীক্ষ্ন আওয়াজে কানে তালা লাগার উপক্রম। কখনও কখনও মনে হচ্ছে যেন দরজা-জানলা ঝড়ে উড়ে যাবে। সাত বছর আগে হারিকেন ক্যাটরিনা ঠিক যে ভাবে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছিল নিউ অর্লিয়েন্সকে!
এ বারও সে রকম কিছু আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে কি না, সেই আশঙ্কায় ব্যাটন রুজ যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। শহরের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস সব কিছুই বন্ধ। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন না কেউ। পেট্রোল পাম্পে তেল নেই। সুপারমার্কেটে জিনিসে টান।
তবে অদ্ভুত লাগছে প্রশাসনিক তৎপরতা দেখে। টিভিতে, রেডিওতে বার বার বলা হচ্ছে, প্রচুর বৃষ্টি হতে পারে। হতে পারে বন্যাও। ইতিমধ্যেই কিছু কিছু অঞ্চল জলের তলায় চলে গিয়েছে। তবে এখানে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে কিন্তু প্রস্তুত প্রশাসন। ন্যাশনাল গার্ড, স্টেট পুলিশ, শহর প্রশাসন সবাই হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। |
এ মুহূর্তে লুইজিনিয়া প্রদেশে প্রায় সাত লক্ষ বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। ফলে চলছে না বাতানুকূল যন্ত্রও। ঘরের মধ্যেও প্রচণ্ড গুমোট। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করতে অন্য রাজ্য থেকে দশ হাজার কর্মী ইতিমধ্যেই লুইজিনিয়ায় এনে হাজির করেছে রাজ্যের সব চেয়ে বড় বিদ্যুৎ সংস্থা ‘এন্টার্জি’। প্রত্যেকের একটাই লক্ষ্য কিছুতেই যেন সাত বছর আগের পরিস্থিতি ফিরে না আসে।
তবে বাদ সাধছে আইজ্যাকই।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, হাওয়ার বেগ ৩৫ মাইলের নিচে না নামলে কোনও ভাবেই বিদ্যুৎ ফেরানো যাবে না। অগত্যা এই অন্ধকারেই পড়ে থাকতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে জেনারেটরের শব্দ, টিমটিমে আলো, আর হাওয়ার শোঁ শোঁ আওয়াজ। একটানা।
কবে পরিস্থিতি পাল্টাবে কেউ জানে না। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, খুবই আস্তে এগোচ্ছে আইজ্যাক, মাত্র আট মাইল প্রতি ঘণ্টায়। এর গতিমুখ দেখে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পূর্ব দিকের চেয়ে পশ্চিম দিকের শহরই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনিতে এই শহরে বাঙালির সংখ্যা খুবই কম। যে ক’জন রয়েছি, বার বার পরস্পরকে ফোন করছি।
লুইজিয়ানায় ‘আপতকালীন পরিস্থিতি’ ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। লুইজিয়ানার গভর্নর, ভারতীয় বংশোদ্ভূত ববি জিন্দলও শুনিয়ে চলেছেন আশার কথা, “হোপ ফর দি বেস্ট, প্রিপেয়ার ফর দি ওয়ার্স্ট। ” কিন্তু সেই ‘বেস্টটা’ যে কবে হবে, আর ‘ওয়ার্স্টটা’ ঠিক কতটা খারাপ, সেই ভাবনাতেই দিন কাটছে।
আশা শুধু একটাই। সে বার ক্যাটরিনার সময়ে অনভিজ্ঞতার দাম দিয়েছিল প্রশাসন। এ বার আর সেই দাম দিতে রাজি নয় কেউ। প্রাণে বাঁচতে বা বাঁচার আশাটুকু বাঁচিয়ে রাখতে ভরসা সেই জেদই। |