ডেঙ্গি ছড়ানোর আশঙ্কা শহরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ চলতে থাকলেও রোগ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগই শুরু হয়নি জলপাইগুড়িতে। ফলত প্রতিদিনই শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি হিসেবে জলপাইগুড়ি এলাকায় ১০ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। যদিও বেসরকারি হিসেবে বুধবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ ছাড়িয়ে গিয়েছে। গত শুক্রবার সরকারি ভাবে শহরে ডেঙ্গির কথা জানানোর পাঁচ দিন পরেও রোগ সংক্রমণ রুখতে প্রাথমিক যে কাজ করা হয় সেই মশা মারার তেল ছড়ানো বা বাসিন্দাদের সচেতন করার কাজ শুরুই হয়নি জলপাইগুড়িতে। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, শহর এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপের কথা জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে পুরসভাকে জানানো হয়নি। পুরসভার দাবি, বুধবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে মশা মারার তেল চেয়ে পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে পাল্টা জানানো হয়েছে, মশা মারার তেল বর্তমানে তাদের কাছে নেই। তবে শহর এলাকায় রোগ নিয়ে সচতনতা প্রসারের কাজ বা বাসিন্দাদের সর্তত করার দায়িত্ব পুরসভার। |
অর্থাৎ শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ শুরু হওয়ার পাঁচ দিন পরেও সমণ্বয় গড়ে ওঠেনি স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভার। অভিযোগ পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে সমণ্বয়ের অভাবেই শহরে ডেঙ্গি নিয়ে কোনো নিয়ন্ত্রন মূলক কাজ শুরু হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে কোনও এলাকায় ডেঙ্গি সংক্রমণ শুরু হলে প্রথমেই তিনটে কাজ করতে হয়। প্রথমত এলাকায় তেল বা ধোয়া ছড়িয়ে মশা মারার কাজ শুরু করতে হয়। দ্বিতীয়ত, মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করতে এলাকাজুড়ে ব্যপক সাফাই অভিযান শুরু করা এবং মশার কামড় থেকে বাঁচতে বাসিন্দাদের নিয়মিত মশারি ব্যবহার করা বা অনান্য সাবধনতা গ্রহণ করার জন্য প্রচার অভিযান শুরু করা। যদিও জলপাইগুড়ির ক্ষেত্রে তিনটির কোনওটিই শুরু হয়নি বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১০। জলপাইগুড়ি পুর এলাকা ছাড়াও ময়নাগুড়ি, বেলাকোবা এবং শিলিগুড়ি পুর কর্পোরেশনে সংযোজিত এলাকায় ডেঙ্গি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। শহরের বিভিন্ন নাসির্ংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সপ্তাহে শহরে অন্তত ১৫ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। যাদের ৬ জন এখনও চিকিৎসাধীন। জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকার বুধবার বলেন, “জেলায় ডেঙ্গির প্রকোপ শুরু হয়েছে। জলপাইগুড়ি পুরসভা এলাকাতেই সংক্রমণের হার বেশি। গ্রামীণ এলাকাগুলিতে সচেতনতার কাজ স্বাস্থ্য দফতর করছে। |
তবে পুর এলাকায় এই কাজ পুরসভাকেই করতে হবে। স্বাস্থ্য দফতর থেকে পুরসভাকে জানানো হবে।” শহর এলাকায় ডেঙ্গি সংক্রমণের তথ্য পাঁচ দিন আগে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে জমা পড়লেও পুরসভাকে কেন কোনও ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়নি? মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন “পুরসভাকে আগেই জানানো উচিত ছিল। আমি গতকালকেই কলকাতা থেকে ফিরেছি। পুরসভাকে নির্দেশ দেওয়া হয়নি কেন খোঁজ নিয়ে দেখব।” অন্য দিকে শহরে ডেঙ্গির সংক্রমণের পরেও পুরসভা কেন সর্তকতামুলক প্রচার বা মশা মারার অভিযান শুরু করেনি তার জবাবে পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “স্বাস্থ্য দফতর আমাদের কিছুই জানায়নি। আমরাই বুধবার নিজেরা খোঁজ খবর শুরু করেছি। মশা মারার যে তেল স্বাস্থ্য দফতর থেকে দেওয়া হয়, সেই তেলও পাওয়া যাচ্ছে না। তার ফলে বাজারে যে তেল পাওয়া যায় তা দিয়েই কাজ শুরু হবে। শহর জুড়ে সাফাই অভিযানও শুরু হবে।” পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম কাউন্সিলর প্রমোদ মণ্ডল বলেন, “সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে লোক মুখে শহরে ডেঙ্গির খবর শোনা যাচ্ছে, আর পুরসভা সরকারি চিঠির অপেক্ষায় বসে! শহরবাসীর স্বার্থেই পুরসভার আগেই উদ্যোগী হওয়া উচিত ছিল।” |