প্রশিক্ষণ ফার্স্ট এইড-এরও |
পড়ুয়াদের নিখরচায় অস্ত্রোপচার সর্বশিক্ষায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
ঠোঁট কাটা বা অন্য কোনও বিকৃতি রয়েছে এমন ছাত্রছাত্রীদের নিখরচায় অস্ত্রোপচারের দায়িত্ব নিল সর্বশিক্ষা দফতর। এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য দফতর থেকেই করা হবে বলে জানা গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে হাওড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর, এই দুই জেলায় অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুর সদর, এই দু’টি মহকুমার ছাত্রছাত্রীদের এই অস্ত্রোপচার করা হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরে সর্বশিক্ষা অভিযানের প্রকল্প আধিকারিক শাশ্বতী দাস বলেন, “যে ছাত্রছাত্রীদের এই সমস্যা রয়েছে শীঘ্রই তাদের তালিকা তৈরি করা হবে। তারপর কলকাতায় অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হবে।”
ঠোঁটে বিকৃতি নিয়ে বহু শিশু জন্মায়। কারও বা ঠোঁটের মাঝের কিছুটা অংশ কাটা থাকে। চিকিৎসকদের মতে, অল্প বয়সে অস্ত্রোপচার করিয়ে নিলে কোনও সমস্যাই থাকে না। কিন্তু এই ব্যয় ভার বহন করা গরিব মানুষের পক্ষে কঠিন। সরকারি হাসপাতালেও এই জাতীয় অস্ত্রোপচার হয় না বললেই চলে। যদিও বর্তমানে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যে শিবির করে এই ধরনের অস্ত্রোপচার করছেন। তবে প্রত্যন্ত এলাকায় এই পরিষেবা অধরাই থেকে যায়। শিশুরা বিকৃতি নিয়েই বড় হয় এবং শুনতে হয় কটূক্তি। যাতে আহত হয় শিশুমন। সর্বশিক্ষা অভিযানের মাধ্যমে এ বার সেই সমস্যা সমাধানেই উদ্যোগী হল সরকার।
প্রশাসন জানিয়েছে, ‘স্মাইল ট্রেন্ড’ নামে এক সংস্থার সহযোগিতায় এই অস্ত্রোপচার করা হবে। প্রতিটি স্কুলকে ছাত্রছাত্রীদের তালিকা তৈরি করতে জানানো হবে। অস্ত্রোপচারে ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীর পরিবার আবেদন জানাতে পারবে। কলকাতায় অস্ত্রোপচারের সময় সংশ্লিষ্ট ছাত্র-ছাত্রীর পরিবারের একজন সদস্য যেতে পারবেন। দু’জনের থাকা-খাওয়ার খরচই দেবে সর্বশিক্ষা দফতর। প্রশাসন জানিয়েছে, ক্রমে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় এই অস্ত্রোপচারের বন্দোবস্ত করা হবে।
পাশাপাশি, সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পে এবার প্রাথমিক চিকিৎসার টুকিটাকি শেখাতে উদ্যোগী হল সরকার। শুধুমাত্র সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীদেরই এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় স্কুলে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সঙ্গে দেওয়া হবে ‘ফার্স্ট এইড বক্স’ও। পুজোর আগেই এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থার জন্য উদ্যোগী হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। সর্বশিক্ষার জেলা প্রকল্প আধিকারিক শাশ্বতী দাস বলেন, “প্রাথমিক ভাবে ৪০০ ছাত্রীকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পুজোর আগেই যাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় তার জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
হঠাৎ কেন এই প্রশিক্ষণ? প্রায় প্রতিটি স্কুলেই প্রাথমিক চিকিৎসার কিছু সরঞ্জাম থাকে। খেলতে খেলতে কেউ পড়ে গিয়ে হাত, পায়ে চোট লাগলে শিক্ষকেরাই প্রাথমিক চিকিৎসা করেন। তারপর প্রয়োজন হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়। এ বার স্কুলের পড়ুয়ারাই সেই ভূমিকায় হাজির হতে পারবে। চিকিৎসা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই প্রশিক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে দাবি প্রশাসনিক কর্তাদের। এই প্রশিক্ষণ সমাজ সেবার প্রতি ছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করে তুলবে বলেও আশাবাদী সর্বশিক্ষা দফতর। এর ফলে সেবা করার মানসিকতার পাশাপাশি হারিয়ে যেতে বসা মূল্যবোধও ফিরে আসবে। ভবিষ্যতে কেউ নার্স হতে চাইলে এখান থেকে অনেকেই উৎসাহও পাবে। সব মিলিয়ে এই ধরনের উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে বলেই প্রশাসনিক কর্তাদের আশা। |