রক্তে অনুচক্রিকার পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই নীচে। এই অবস্থায় শুক্রবার সকালে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে বর্ধমান শহরের বামচাঁদাইপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন এক বধূ। হাসপাতালের তৎপরতায় স্বাভাবিক ভাবেই সন্তান প্রসব করলেন তিনি। সুস্থ হয়ে মা ও শিশু দু’জনেই বাড়ি ফিরে গিয়েছেন বলে ওই হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।
কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান তরুণকুমার ঘোষ বলেন, “প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ শুরু হলে তা বন্ধ করা কঠিন। তার জেরে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তবে জেলাস্তরে এই ধরনের প্রক্রিয়া সফল হওয়া প্রশংসনীয়।”
অনুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। শরীরে স্বাভাবিক অনুচক্রিকার সংখ্যা দেড় থেকে দু লক্ষ। কিন্তু শুক্রবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময়ে বর্ধমান শহরের ভাতছালার বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা সিংহ নামে ওই বধূর শরীরে অনুচক্রিকা বা প্লেটলেটের পরিমাণ ছিল ৪৭ হাজার। ফলে তিনি কী করে স্বাভাবিক বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেবেন তা নিয়ে ধন্ধে পড়েন চিকিৎসকেরা।
হাসপাতালের অন্যতম ডিরেক্টর সৌমেন্দ্রমোহন সাহা শিকদার বলেন,“এই পরিস্থিতিতে প্রসূতির শরীরে প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া কোনও উপায় থাকে না। অনকে চেষ্টা করে জোগাড় করা হয় প্রায় ১৮ ইউনিট প্লেটলেট। কিন্তু তা দেওয়ার পরেও ওই বধূর শরীরে অনুচক্রিকার সংখ্যা ৫৮ হাজারের বেশি বাড়ানো যায়নি। ফলে তাঁর সন্তান প্রসবের ব্যাপারে আমরা ঝুঁকি নিতে পারছিলাম না। কারণ রক্ত তঞ্চন বা জমাট না বাধলে রক্তপাতের কারণেই বধূটির মৃত্যু হতে পারত।”
শেষে সোমবার রাতে প্রিয়াঙ্কাদেবীর প্রসব বেদনা শুরু হয়। ঝুঁকি না নিয়ে তাঁর শরীরে অনুচক্রিকা প্রবেশ করানো হতে থাকে। সেই সঙ্গে চলতে থাকে স্বাভাবিক উপায়ে প্রসব করানো। প্রসবের পরে দেখা যায়, তাঁর শরীরে অনুচক্রিকার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ২৭ হাজারে।
সৌমেন্দ্রমোহনবাবুর দাবি, “ওই বধূর গর্ভে থাকা সন্তানের শরীরে তৈরি হচ্ছিল এক ধরনের অ্যান্টিবডি। সেই অ্যান্টিবডিই মায়ের শরীরের প্লেটলেট বা অনুচক্রিকাগুলিকে ভেঙে দিচ্ছিল। ফলে প্রসব হওয়ার পরেই অনুচক্রিকার পরিমাণ বেশ কিছুটা বেড়ে যায়।”
বধূটির স্বামী সুজয় সিংহ বলেন, “আমাকে অনেকে বলেছিলেন স্ত্রীকে প্রসবের জন্য কলকাতার কোনও নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে। কিন্তু যে তৎপরতা বর্ধমানের ওই বেসরকারি হাসপাতাল দেখিয়েছে, তাতে আমি মুগ্ধ। আমার স্ত্রী ও ছেলে দু’জনেই ভাল আছে।” |