সল্টলেক উপনগরীতে ডেঙ্গি পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করা সত্ত্বেও বুধবার বিধাননগর পুরসভার বোর্ডের আলোচ্যসূচিতে রাখাই হল না ডেঙ্গিকে! যদিও শেষ পর্যন্ত কাউন্সিলরদের চাপে পড়েই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কিছু পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করতে বাধ্য হল পুরসভা। বিরোধীদের সঙ্গে এ দিন ডেঙ্গি নিয়ে আলোচনার দাবি তোলেন তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশও। তাঁদের অভিযোগ, ঠিক সময়ে পুরসভা ডেঙ্গি সংক্রমণের বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হলে পরিস্থিতি এতটা ভয়ঙ্কর হত না। |
এ দিন বোর্ডের সভায় সিপিএমের সদস্যেরা পুরসভার ভূমিকা নিয়ে সরব হন। পুর-কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় রাজি না হওয়ায় সিপিএমের কাউন্সিলরেরা বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান। পুরসভার বিরোধী নেত্রী ইলা নন্দীর অভিযোগ, “আজকের বৈঠকে ডেঙ্গি নিয়ে আলোচনা করাটা জরুরি ছিল। কিন্তু শাসক দল আলোচ্যসূচিতে ডেঙ্গির প্রসঙ্গই রাখেনি। প্রতিবাদ জানাতে আমরা ওয়াক-আউট করি।” এর পরে সিপিএম কাউন্সিলরদের ঢঙেই ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে সরব হন তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলরেরা। আলোচ্যসূচিতে বিষয়টি না-থাকলেও শেষ পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলরদের শান্ত করতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ডেঙ্গি প্রতিরোধে কী কী করা দরকার, তা নিয়ে পরিকল্পনা তৈরি হয়।
কেন আলোচ্যসূচিতে ছিল না ডেঙ্গি? এ প্রশ্নের জবাবে বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “আমি কাগজে বিশ্বাসী নই। মানুষের মাঝখানে থেকে কাজ করার পক্ষপাতী। সিপিএম স্বাস্থ্য নিয়ে রাজনীতি করছে, তাই এ ধরনের কথা বলছে।” ডেঙ্গি-আক্রান্তের সংখ্যা নিয়েই বা বিভ্রান্তি কেন? তাঁর জবাব, “স্বাস্থ্য দফতরের এই নিয়ে তথ্য দেওয়ার কথা। তারা কিছু জানায়নি।” পুর-কর্তারা ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে বিভ্রান্তিকর বয়ান দিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছেন বলে তৃণমূল কাউন্সিলরদের কারও কারও অভিযোগ। ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার পরে তৃণমূলের অন্দরে শুরু হয়ে যায় চাপান-উতোর।
এ দিনের বৈঠকে পুরসভার ঘোষণা, ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে এলইডি বোর্ড ব্যবহার করা হবে। দূর থেকে যাতে তা মানুষের চোখে পড়ে। এ ছাড়া, বিশেষজ্ঞদের নিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে আলোচনাচক্রের ব্যবস্থা করা হবে। সাধারণ মানুষ সেখানে নিজেদের বক্তব্য জানাতে পারবেন। পরামর্শ নিতে পারবেন। এ দিন থেকেই বাড়ির ভিতরে গিয়ে ব্লিচিং পাউডার ও কীটনাশক ছড়ানো শুরু করেছে পুরসভা। |
ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে পুরসভার ভূমিকায় বিস্মিত সল্টলেকের বাসিন্দারা। বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “যখন বিভিন্ন ব্লকের বাসিন্দারা আলাদা আলাদা করে ডেঙ্গির কথা পুরসভাকে জানিয়েছিলেন, তখনই পুর-কর্তৃপক্ষ সক্রিয় হলে পরিস্থিতি এত ভয়াবহ হত না। তাঁরাও গাফিলতি দেখিয়েছেন। বাসিন্দাদের দাবি মানতে চাননি। সুখের খবর, দেরি হলেও কিছু একটা করার চেষ্টা হচ্ছে।”
সল্টলেকের পাশাপাশি দমদম এবং রাজারহাট এলাকাতেও ক্রমেই ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ছে। দমদম এলাকায় তবু মশার তেল দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু রাজারহাটের অবস্থা তথৈবচ। কেষ্টপুরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাগজোলা এবং কেষ্টপুর, দু’টি খালেই জল জমে রয়েছে। মশা হচ্ছে। অথচ, মশার তেল দেওয়া হচ্ছে না। কেষ্টপুর এলাকার অনুরূপা পল্লি, ঘোষপাড়া, গৌরাঙ্গনগর, জগৎপুরের মতো এলাকায় অনেকেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত সেখানে লিফ্লেট বিলি করা ছাড়া আর বিশেষ কিছুই হচ্ছে না বলে অভিযোগ। |