কেউ ফুঁপিয়ে উঠলেন। কেউ মুখে আঁচল চাপা দিলেন। কেউ কান্নায় ভেঙে পড়লেন। সকলেরই একটাই আর্জি, “আমরা বাড়ি ফিরতে চাই। যে ভাবেই হোক ভিটেয় ফেরার ব্যবস্থা করে দিন।” বুধবার ডুয়ার্সের শামুকতলা, ফালাকাটার শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত অসমের কোকড়াঝাড়ের মানুষের কাতর অনুরোধ শুনে বিচলিত হয়ে পড়লেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। কখনও ফিরোজ আলির হাত ধরে সান্ত্বনা দিলেন মন্ত্রী। আবার কখনও আকবর মোমিন, আমিনুল হকদের পিঠে হাত দিয়ে ভরসা জোগানোর চেষ্টা করতে দেখা গেল তাঁকে। শরণার্থীদের বক্তব্য, “অসম সরকারের তরফে কেউ একবারের জন্যও শিবিরে আসছেন না কেন? আপনি একটু দেখুন। মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলুন কিছু করতে।” |
শরণার্থী শিবিরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। বুধবার ছবিটি তুলেছেন নারায়ণ দে। |
ঘরছাড়া শরণার্থীদের সকাতর অনুরোধে সেখানে দাঁড়িয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করতে দেখা গেল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে। তাঁকে বলতে শোনা গেল, “এখানে শরণার্থীরা নিরাপদে থাকলেও সকলেই বাড়ি ফিরতে চাইছেন। কেন অসম সরকারের কেউ যোগাযোগ করছে না সেই প্রশ্ন তুলছেন। আমাদের তরফে কিছু করা যায় কি না একটু দেখবেন।” পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বললেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই শিবিরে এসেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রীকে সব জানিয়েছি। শরণার্থীদের যাতে কোনও অসুবিধে না-হয় সেটা আমরাদের সরকার দেখছে। আগামী দিনে যা করণীয় তা করা হবে।” এ দিন সকালে যশোডাঙ্গার মোমিনপাড়া, ফালাকাটার নয় মাইল ও মাদারিহাট হাইস্কুলে যান মন্ত্রী। তাঁদের দিনযাপনের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না সেই ব্যাপারে খোঁজ নেন তিনি। পরে ফালাকাটার নয় মাইল এলাকায় যান মন্ত্রী। সেখানেও দুদিনের মধ্যে বেশ কয়েকজন শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন। পরিদর্শনের পরে মন্ত্রী বলেন, “১ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত রিপোর্ট পেশ করব। ওই দিন জলপাইগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। সেখান থেকে মুখ্যমন্ত্রী রিমোটের মাধ্যমে উত্তর বঙ্গের প্রথম কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে ফ্লাড লাইট উদ্বোধন করবেন। এদিন ফালাকাটার বিধায়ক অনিল অধিকারীও ৯ মাইল ও মাদারিহাট এলাকায় শরণার্থী শিবিরে যান। ইতিমধ্যে মাদারিহাটের এক স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন ৯২ জন। সোমবার কোকড়াঝাড় থেকে ফালাকাটার ছোট শালকুমার গ্রাম পঞ্চায়েতের ন’মাইল গ্রামে আসেন আরো ১৪ জন শরণার্থী। প্রশাসনের পক্ষে একটি বাড়ি সংলগ্ন জায়গাতে ত্রিপল টাঙিয়ে তাদের আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী ওই পরিবার গুলিকে পার্শ্ববর্তী দুটি অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। মন্ত্রীর কথায়, “অসম থেকে এখানে আসা পরিবারগুলির সদস্যদের খোঁজ নিতে এবং তাদের ভরসা যোগাতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শিবিরগুলিতে গিয়েছি। তাদের যাতে কোনও রকম অসুবিধা না হয় তা দেখতে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” |