মাদক ব্যবসা নিয়ে প্রশ্ন
চোর সন্দেহে মার হাসপাতালে, গণপিটুনিতে প্রাণ গেল মাদকাসক্তের
স্বপ্নদীপ যে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছেন, তা টের পেয়ে নানা ভাবে তাঁকে ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন বাড়ির লোকজনেরা। ডাক্তার দেখিয়েছেন। পাখি পড়ার মতো করে বুঝিয়েছেন। তবুও মাঝেমধ্যেই রাত-বিরেতে অভিভাবকদের চোখে ধুলো দিয়ে পালাতেন বছর ছাব্বিশের ওই যুবক। মঙ্গলবার রাতে তেমন ভাবেই বেরিয়েছিলেন বাড়ি থেকে। বুধবার দুপুরে ফিরল স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃতদেহ। মোবাইল চোর সন্দেহে এ দিন ভোরে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে স্বপ্নদীপকে পিটিয়ে মারে জনতা।
ঘটনার পরে জলপাইগুড়ি শহর ও লাগোয়া এলাকায় মাদকের ‘রমরমা’র বিষয়টি ফের সামনে এসে পড়েছে। দলমত নির্বিশেষে এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসন মাদকের রমরমা রুখতে ততটা

নিহত স্বপ্নদীপ কুণ্ডু
সক্রিয় নয় বলেই ছাত্র-যুবদের একাংশকে মাদকের জালে জড়িয়ে ফেলছে একটি চক্র। তিস্তা কিংবা করলা নদীর ধারে সন্ধ্যার পরে তো বটেই, ইদানীং ভরদুপুরেও নেশার আসর বসতে দেখা যাচ্ছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, মাদকাসক্ত হয়ে পড়া তরুণদের সুস্থ জীবনে ফেরাতে যে ধরনের উদ্যোগ প্রয়োজন তা নিয়ে পুলিশ-প্রশাসন, নেতা-কর্তারা কতটা ভাবছেন সেই প্রশ্নও উঠেছে। জলপাইগুড়ির ডিএসপি প্রভাত চক্রবর্তী বলেন, “যা ঘটেছে, তা মর্মান্তিক। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই যুবক মাদকাসক্ত ছিলেন। কিন্তু আইন এ ভাবে হাতে নেওয়া যায় না।” শহরে মাদকের কারবার রুখতে পুলিশ নজরদারি বাড়িয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
ঠিক কী ঘটেছিল বুধবার ভোরে?
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে’ চিকিৎসাধীন রয়েছেন কুচলিবাড়ির বাসিন্দা পবিত্র রায়। সেখানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন নারায়ণ রায়। অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষীদের নজর এড়িয়ে ঢোকেন স্বপ্নদীপ। পবিত্রবাবুর অভিযোগ, “নারায়ণবাবুর সঙ্গে নানা গল্প করে ভাব জমায় ওই যুবক। ভোরের দিকে নারায়ণবাবু শৌচাগারে যান। সেই সময়ে বিছানার স্ট্যান্ড থেকে ঝোলানো ব্যাগ থেকে মোবাইল নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে ছেলেটি।”
হাসপাতাল সূত্রের খবর, পবিত্রবাবু ‘চোর-চোর’ বলে চিৎকার করেন। হইচই শুরু হয়। বাইরে স্বপ্নদীপকে ধরে ফেলে জনতা। আধো-অন্ধকারের মধ্যে শুরু হয় বেধড়ক মার। হাসপাতালে পুলিশ থাকার কথা। কিন্তু কারও দেখা মেলেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বপ্নদীপের দেহ নেতিয়ে পড়ে। কোতোয়ালি থানা থেকে পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। মিনিট দশেকের মধ্যেই চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
জলপাইগুড়ির ডিএসপি বলেন, “যে মোবাইলটি চুরি হয়েছিল বলে সন্দেহ, সেটি স্বপ্নদীপের পকেট থেকেই পাওয়া গিয়েছে বলে মোবাইলের মালিক আমাদের জানিয়েছেন। তবে পাশাপাশি তিনি দাবি করেছেন, মারধরে জড়িত নন। কারা ওই গণপ্রহারে জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
জলপাইগুড়ি হাসপাতালের সুপার ব্রজেশ্বর মজুমদার বলেন, “মনে হয়, গেটে যে নিরাপত্তা রক্ষী ডিউটি করছিলেন, তাঁকে কোনও রকমে ঠকিয়ে ছেলেটি ওয়ার্ডে ঢুকেছিল। রাতে হাসপাতালের মধ্যে পুলিশের থাকার কথা। ঘটনার সময় পুলিশ ছিল না।” জলপাইগুড়ির ডিএসপি জানান, হইচইয়ের খবর পেয়ে পুলিশই ছেলেটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়।
জলপাইগুড়ি শহরের শক্তিনগরে এ দিন স্বপ্নদীপের বাড়িতে গেলে তাঁর বাবা স্বপন কুণ্ডু বলেন, “দশম শ্রেণি পেরনোর পরেই কেমন হয়ে গিয়েছিল ছেলেটা। কুসঙ্গে পড়েছিল। শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ওকে আমাদের বুক থেকে কেড়ে নেওয়া হল! কারা এমন করল, তা পুলিশ খুঁজে বার করুক। এমন যেন আর কোনও পরিবারে না হয়!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.