মন্ত্রীকে অবজ্ঞাই, অটোর মন্ত্র ‘চলো বে-নিয়মমতে’ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পরিবহণমন্ত্রীর নির্দেশকে উড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা ক্রমেই ছড়াচ্ছে কলকাতা ও শহরতলি এলাকার অটোচালকদের মধ্যে। কোথাও অটোর ভাড়া বাড়িয়ে, কোথাও বাড়তি ভাড়া দিতে না চাওয়া যাত্রীদের অটো থেকে নামিয়ে, কোথাও আবার মন্ত্রীর নির্দেশ অগ্রাহ্য করে পাঁচ-ছ’জন যাত্রী তুলে যেমন খুশি চলছে অটো-পরিষেবা।
অটোচালকদের শৃঙ্খলায় বাঁধতে সম্প্রতি কয়েক দফা দাওয়াই দেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। নির্দেশ ছিল, কোনও অটোয় চার জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না। নির্দিষ্ট একটি রুটকে একাধিক ভাগে ভাঙা যাবে না। বাস-মিনিবাস-ট্যাক্সির মতো নিয়ন্ত্রণ না-থাকলেও সরকার যে অটোর ভাড়া বাড়ানোর বিরোধী, তা-ও স্পষ্ট বলে দেন মন্ত্রী। ইউনিয়নগুলির আন্দোলন রুখতে বেআইনি অটোর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থারও হুঁশিয়ারি দেন। পাশাপাশি, অটোর শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে ব্যাপক তল্লাশিরও নির্দেশ দেন তিনি।
কিন্তু পরিবহণমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন শহরের অটোচালকেরা। শিয়ালদহ-বেলেঘাটা রুটের মতো কিছু এলাকায় এক টাকা-দু’টাকা করে ভাড়া বেড়েছে। যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিতে না চাইলে তাঁদের অটো থেকে নামিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। বিধাননগরের ১৩ নম্বর ট্যাঙ্ক থেকে উল্টোডাঙা রুটের মতো অনেক জায়গায় মন্ত্রীর নির্দেশ না-মেনে পাঁচ-ছয় জন করে যাত্রী তোলা হচ্ছে। গড়িয়া-গড়িয়াহাট বা রুবি-গড়িয়াহাট রুটে মন্ত্রীর ‘কাটা ট্রিপ’ বন্ধের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে ইচ্ছেমতো জায়গায় যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একই রুটকে ভাঙা হচ্ছে তিন-চারটে রুটে। যখন-তখন অটো বন্ধের ‘ট্র্যাডিশন’ও বহাল রয়েছে। বুধবারই ফুলবাগান-করুণাময়ী রুটে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর গোলমালে অটো বন্ধ হয়ে যায়। দুই গোষ্ঠীই একে অপরের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেছে।
পরিবহণমন্ত্রী অবশ্য সব শুনে বলছেন, “ভাড়া বাড়ানো হয়েছে বলে শুনিনি। খবর নিচ্ছি। তবে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, রুটের অটোকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যেতে হবে। না-হলে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোথাও চার জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না।” মন্ত্রী জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অটোর ইউনিয়নগুলির সঙ্গে ফের বসার ব্যাপারেও ভাবা হচ্ছে। তবে পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, “অটো নিয়ন্ত্রণে রাস্তায় যত পুলিশ দরকার, তা নেই। রাতারাতি অটোকে শৃঙ্খলায় বাঁধা যাবে না।”
তবে উল্টো চিত্রও আছে। গত সোমবার রাত ন’টা নাগাদ এন্টালি-পদ্মপুকুর এলাকায় চার জনের অতিরিক্ত যাত্রী নিতে অস্বীকার করেন মহেশ সাউ নামে এক অটোচালক। অভিযোগ, সেই কারণে কয়েক জন যাত্রী তাঁকে খুরের কোপ মারেন। জখম মহেশকে উদ্ধার করে ন্যাশনাল মেডিক্যালে নিয়ে যায় পুলিশ। তবে, ওই ঘটনায় এখনও কেউ ধরা পড়েনি।
বুধবার মদনবাবু জখম মহেশ সাউকে দেখতে তপসিয়ায় তাঁর বাড়ি যান। দলের তরফে আর্থিক সাহায্যও দেন তিনি। মন্ত্রী অটোচালকদের ফের সরকারি নির্দেশ মানতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, “অটোচালকদের ফের অনুরোধ করছি, সরকারি নির্দেশ মেনে চলুন। আপনাদের বিষয়টিও আমরা ভাবছি।” স্থানীয় অটোচালকেরা পুলিশের সামনেই মন্ত্রীকে তাঁদের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানান। তাঁদের অভিযোগ, স্থানীয় যুবকদের একাংশ রাত বাড়লেই অটোচালকদের উপরে জুলুম করে। বেআইনি ভাবে যাত্রী তুলতেও বাধ্য করে। তাদের ফিরিয়ে দিলে হামলার আশঙ্কা রয়েছে। মাসখানেক আগে এলাকারই শেখ হায়দার নামে এক অটোচালককে মারধর করেছিল কিছু যুবক। মন্ত্রী পুলিশকে নিরাপত্তার দিকটি দেখতে বলে অটোচালকদের আশ্বস্ত করেন। |