নেতৃত্ব বদলের ‘নীতি’ নিয়ে ক্ষোভ সম্মেলনেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও বাঁকুড়া |
নেতৃত্ব বদলের প্রক্রিয়া ‘মসৃণ’ হল না সিপিএমের যুব সংগঠনে।
রাজ্য সম্মেলন থেকে ডিওয়াইএফআইয়ের নতুন রাজ্য সম্পাদক হলেন সংগঠনের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা। বিদায়ী রাজ্য সম্পাদক আভাস রায়চৌধুরী প্রত্যাশিত ভাবেই হলেন নতুন রাজ্য সভাপতি। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী, রাজ্য কমিটি এবং সংগঠনের মুখপত্রের কমিটি থেকে বাদ পড়লেন অনেকে। এই গোটা প্রক্রিয়া নিয়ে সম্মেলনের মধ্যেই ক্ষোভ ব্যক্ত করলেন প্রতিনিধিদের একাংশ। চল্লিশোর্ধ্ব নেতাদের ‘অব্যাহতি’ দেওয়ার নীতির কথা বলেও আভাসবাবুকে কী ভাবে নতুন পদে রেখে দেওয়া হল, প্রশ্ন উঠল তা নিয়ে। বিক্ষুব্ধেরা তাঁদের এই অসন্তোষের কথা জানিয়ে দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুকেও।
বাঁকুড়ায় বুধবার ডিওয়াইএফআইয়ের ১৬তম রাজ্য সম্মেলনের শেষ দিনে ২০ জনের যে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী তৈরি হয়েছে, তাতে ১৪ জনই নতুন। আগে সম্পাদকমণ্ডলী ছিল ২৫ জনের। রাজ্য কমিটির কলেবর ১১১ থেকে কমিয়ে ৯৫ করা হয়েছে, তার মধ্যেও একগুচ্ছ নতুন মুখ। নতুন কমিটি তৈরির সময় যুব সংগঠনের নেতৃত্বের তরফে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, চল্লিশোর্ধ্বদের সাধারণ ভাবে যুব দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। জেলা থেকেই এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। কিন্তু এই সূত্রেই প্রতিনিধিদের একাংশের ক্ষোভ, বয়সের নীতির কথা বলে এমন বেশ কয়েক জনকে বাদ দেওয়া হল, যাঁরা যুব সংগঠনে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ দায়িত্ব পালন করছেন। আবার সিপিএমের ‘বর্ধমান লবি’র চাপে ওই বয়সের নীতি উপেক্ষা করেই আভাসবাবুকে দায়িত্বে রেখে দেওয়া হল! সুজয় মিত্র, অর্পণা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুজিত রায়চৌধুরীর মতো যুব নেতাদের বাদ পড়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংগঠনের অন্দরে। এমনকী, সুজয়-অপর্ণারা এ দিন বিদায়ী ভাষণে ক্ষোভের কথা জানিয়ে দিয়েছেন বলেও ডিওয়াইএফআই সূত্রের খবর।
বিমানবাবুকে সামনে পেয়েও এই ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন প্রতিনিধিদের একাংশ।
সদ্যই এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক পদ থেকে বিদায় নেওয়া সায়নদীপ মিত্রকে যুব সংগঠনের মুখপত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মতোই জামিরকে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তিনি আগে সংগঠনের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে ছিলেন না। মদন ঘোষ, নৃপেন চৌধুরীদের মতো সিপিএম রাজ্য নেতাদের ‘সমর্থনে’ই রাজ্য কমিটি থেকে জামিরকে একেবারে রাজ্য সম্পাদক পদে নিয়ে আসা হল কি না, তা নিয়ে চর্চা হচ্ছে দলের মধ্যে।
নতুন রাজ্য সভাপতি আভাসবাবুর বক্তব্য, প্রয়োজন বুঝেই কমিটির আয়তন ছোট করা হয়েছে। তিনি এ দিন বলেছেন, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, কোচবিহার ও কলকাতা এই ৬টি জেলায় ডিওয়াইএফআইয়ের সদস্যসংখ্যা অর্ধেক হয়ে যাওয়ার জন্য তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’র পাশাপাশি সাংগঠনিক দুর্বলতাও দায়ী। তাঁর কথায়, “যুবক-যুবতীদের কাছে পৌঁছতে না-পারার ক্ষেত্রে যে যে কারণগুলি আছে, তার মধ্যে সাংগঠনিক সীমাবদ্ধতা অন্যতম। তবে তা সামান্য।” পাশাপাশিই আভাসবাবুর ‘হুঁশিয়ারি’, আগামী বছর রাজ্য যুব উৎসবে বারাক ওবামাকে আনা হলে তাঁরা ‘গোটা রাজ্য স্তব্ধ’ করে দেবেন! নতুন রাজ্য সম্পাদক জামিরের বক্তব্য, ‘কাজ, অর্জিত অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রাম’ই তাঁদের লক্ষ্য। |