|
|
|
|
সার নিয়ে প্রশ্নেও এ বার সহিষ্ণু মমতা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কৃষ্ণনগর |
শিলান্যাস, সরকারি ঘোষণা, গাঁ-গঞ্জ উজিয়ে আসা ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন বৃত্তি প্রদান পর্ব শেষ। মিনিট পঁচিশের বক্তব্যের প্রায় শেষ পর্বে তখন তিনি। কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় বাঁশের ব্যারিকেড আঁকড়ে দাঁড়িয়ে থাকা জনা পনেরো দলীয় কর্মী আচমকাই হাত নেড়ে কিছু বলতে থাকেন।
অস্পষ্ট, যেটুকু শোনা যায়, সারের ক্রমবর্ধমান দাম নিয়ে কিছু বলতে চান তাঁরা। নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ, মঞ্চেও দলীয় নেতাদের মধ্যে চাপা উসখুস শুরু হয়ে গিয়েছে। আড় চোখে ব্যাপারটা দেখে এ বার বক্তব্য থামিয়ে দিলেন মমতা। এক লহমায় স্তব্ধ স্টেডিয়াম। চটে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী?
দিন কয়েক আগে, বেলপাহাড়ির ব্লক ময়দানে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় সারের দাম নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই এক যুবককে ‘মাওবাদী’ বলে চিহ্নিত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে দিন তাঁকে ধরা হলেও মাওবাদী-যোগাযোগের হদিস না পাওয়ায় ছেড়ে দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু দু-দিন পরে বিনপুরে তাঁর গ্রাম থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে শিলাদিত্য চৌধুরী নামে নিছকই বাস-কর্মী ওই যুবককে। প্রায় দু-সপ্তাহ জেল হাজতের পরে শেষে জামিন মেলে তাঁর।
ফের সেই সারের দাম নিয়েই প্রশ্ন? বুধবার অবশ্য অন্য মুখ্যমন্ত্রীকে দেখল কৃষ্ণনগর। অনেক সহিষ্ণু। সবাইকে অবাক করে মমতা এগিয়ে গেলেন মঞ্চের এক কোণায়। সেখান থেকেই তিনি ওই গ্রামবাসীদের বলেন, “জোরে বলুন।” অতি উৎসাহে তাঁরা সমস্বরে বলতে থাকেন, সারের দাম কমানোর কথা। মন দিয়ে তাঁদের কথা শুনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বেশ বুঝতে পেরেছি, আসলে কী জানেন সারের দাম ঠিক করে কেন্দ্রীয় সরকার। আমি এ ব্যাপারে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলেছি।” তারপর খানিক চুপ থেকে ফের তাঁদের দিকে ফিরে বলতে থাকেন, “তবে একটা ব্যাপারে সতর্ক করে দিচ্ছি, সারের দাম বেশি নিলে কিংবা সারের সঙ্গে অন্য কিছু নিতে বাধ্য করলে আপনারা বিডিও-কে জানাবেন। উনিই ব্যবস্থা নেবেন।”
নাঃ, রেগে যাননি মুখ্যমন্ত্রী। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন নেতা-পুলিশ সকলেই।
বস্তুত এ দিন বিশেষ সহিষ্ণু ছিলেন তিনি। কৃষ্ণনগরে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকেও দেখা গেল বিডিওদের কথা মন দিয়ে শুনছেন। বিভিন্ন সমস্যার কথা জানতে চাইছেন। নিঃসঙ্কোচে অনেক কর্তাই ‘আব্দার’ করছেন, ‘‘ম্যাডাম, আমার এলাকায় একটা বাসস্ট্যান্ড চাই।’’ কারও দাবি, ‘‘আমার এলাকার দুটো রাস্তা খুব বেহাল। একটু দেখবেন ম্যাডাম।’’ আচমকাই সাদা কাগজ চেয়ে নিয়ে খস খস করে লিখতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী, “বলুন তো কোন এলাকায় রাস্তার কী হাল।” তারপর নিজেই যোগ করেন, “বাব্বাঃ যা দেখলাম, জাতীয় সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। হরিণঘাটা, জাগুলিয়া, শান্তিপুর আর কৃষ্ণনগরে ঢোকার আগে পাঁচ-ছয় জায়গার অবস্থাও খারাপ। আমার গাড়িও দুলছিল। যে কোন মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। আপনারা একটু নজর দিন ভাই!”
সহিষ্ণুতা দেখে মুগ্ধ জেলা কর্তারাও। |
|
|
|
|
|