|
|
|
|
বাসস্ট্যান্ডের দাবি বৈঠকে, হাসিমুখে সম্মতি মুখ্যমন্ত্রীর |
সুস্মিত হালদার • কৃষ্ণনগর |
বিডিওরাই যেন জনপ্রতিনিধি। এক জন বললেন, “ম্যাডাম, আমার এলাকায় বাসস্ট্যান্ড চাই।” আর এক জন বললেন, “আমার এলাকার দু’টো রাস্তা বেহাল, দু’টোই ঠিক করতে হবে ম্যাডাম।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে তখন মৃদু হাসি। হাসিমুখেই সম্মতি জানালেন এমনই নানা প্রস্তাবে। বিডিওদের কাছ থেকে শুনে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বেহাল রাস্তার তালিকা তৈরি করতে শুরু করেন।
কখনও মৃদু ধমক, কখনও বা উপদেশ। আবার কখনও বিডিও থেকে শুরু করে জেলাশাসক, সকলের কাছ থেকেই শুনলেন জেলার বিভিন্ন সমস্যার কথা। তাঁদের কাছ থেকেই জানতেও চাইলেন সমাধানসূত্র। বুধবার কৃষ্ণনগর সার্কিট হাউসে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী এভাবেই হয়ে উঠলেন কখনও বা কড়া প্রশাসক, কখনও আবার কাছের মানুষ। তারই মাঝে জেলার প্রশাসকদের কাজের প্রশংসা করতেও ভুললেন না। তিনি জেলার উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী মুকুল রায় সহ রাজ্যের তিন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও উজ্জ্বল বিশ্বাস। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিব সহ রাজ্যের বাইশটি দফতরের কর্তাব্যক্তিরা। এদিন তিনি বৈঠক করেন জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, বিডিও সহ জেলার প্রতিটি দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলার পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে বিভিন্ন থানার আইসি ও ওসিরা। বৈঠকে তিনি বিদ্যুৎ, রাস্তা, পানীয় জল, একশো দিনের কাজের প্রকল্প সহ সাধারণ মানুষদের সঙ্গে জড়িয়ে প্রকল্পগুলোর উপরে গুরুত্ব দেন। এদিন তিনি জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। |
|
সকালে কৃষ্ণনগর সার্কিট হাউসে। —নিজস্ব চিত্র। |
আলোচনা করেন জেলার কোন তহবিলে কত টাকা পড়ে, তা নিয়েও। একটি ‘অ্যাসেট ফান্ড’ তৈরি করতে বলেন তিনি। তিনি বলেন, “সমস্ত তহবিলের টাকা একটি ‘ছাতার’ তলায় নিয়ে আসতে হবে, কারণ অনেক সময় একাধিক বিধায়ক একই প্রকল্পে টাকা দেন, যাতে সেই টাকা দিয়ে একাধিক রাস্তার কাজ করা যায় সেটা দেখতে হবে।” তিনি বিডিওদের কাছ থেকে তাদের এলাকার কোন কোন রাস্তা বেহাল তা জানতে চান। তার তালিকা তৈরি করে পূর্ত দফতরকে দিতে বলেন। ওই তালিকা যাতে দ্রুত রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয় সে ব্যাপারে পূর্ত দফতরের কর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি। বিভিন্ন বিডিও উঠে দাঁড়িয়ে তখন তাদের এলাকার বেহাল রাস্তার কথা জানান। পুলিশের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন বেহাল রাস্তার কথা জানানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা একটি স্টেট হাইওয়ে অথরিটি তৈরি করেছি। বিভিন্ন রাস্তা তৈরির পাশাপাশি রাস্তা সার্ভের কাজও চলছে। বিডিওদের বলছি আপনাদের এলাকার যে যে রাস্তা খারাপ সেগুলো আমাদের জানান।”
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বেহাল অবস্থা নিয়ে উপস্থিত স্টেট হাইওয়ে অথরিটির কর্তাদের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “জাতীয় সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। হরিণঘাটা, জাগুলিয়া, শান্তিপুর ও কৃষ্ণনগরে ঢোকার আগে পাঁচ ছয় জায়গার অবস্থা খুবই খারাপ। আমার গাড়িও দুলছিল। যে কোনও মূহুর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। উত্তরবঙ্গের গাড়িগুলোও এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করে। অন্তত প্যাচ ওয়ার্ক করুন।” বৈঠকের প্রথমেই জেলার বিভিন্ন প্রকল্পে পিছিয়ে থাকার কারণ জেলাশাসকের কাছে জানতে চান তিনি। বৈঠকে তিনি জানতে চান কত শতাংশ বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কাজ শেষ হয়েছে? মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয় ৭২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, বাকি ২৮ শতাংশ কাজ তিনি একমাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি একশো দিনের কাজের প্রকল্প নিয়েও জানতে চান। এ পর্যন্ত নদিয়া জেলায় গড়ে ২২ দিন করে কাজ হয়েছে শুনে তিনি প্রশ্ন করেন, “এর বেশি কাজ হল না কেন?” মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রশ্নের উত্তরে বেশিরভাগ বিডিও জানান, পোস্ট অফিসে অ্যাকাউন্ট খোলা নিয়ে সমস্যা এর অন্যতম কারণ। মুখ্যমন্ত্রী বিডিওদের উদ্যোগ নিয়ে দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেন।
পাশাপাশি সাংসদ তাপস পাল ও মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস কৃষ্ণনগরে একটি উন্নতমানের বড় আকারে একটি বাসস্ট্যান্ড তৈরির দাবি জানান। কৃষ্ণনগর-করিমপুর রাজ্যসড়ক সংস্কারেরও দাবি ওঠে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে ঢেলে সাজতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। নবদ্বীপধামকে আন্তর্জাতিক পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার নির্দেশ দেন। |
|
|
|
|
|