উইম কোভারম্যান্স বসেছিলেন স্টেডিয়ামে। গোমড়া মুখে। কপালে চিন্তার বলিরেখা স্পষ্ট। সুনীল ছেত্রী-সুব্রত পালরা জেপি গ্রিনের রিসর্টে রীতিমতো টেনশন নিয়ে বসেছিলেন টিভির সামনে! মোবাইল সুইচ অফ করে।
ভারতীয় দলের সব টেনশনই উধাও হয়ে গেল ক্যামেরুন-মলদ্বীপ ম্যাচের পঞ্চাশ মিনিটে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর রেফারি হাসমি হামেদ মলদ্বীপের বিরুদ্ধে পেনাল্টি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। কেন পেনাল্টি? সেই তর্ক করতে গিয়ে লালকার্ড দেখলেন আলি আহাদা। ম্যাচের ফল ৩-১। নিট হিসাব, ভারতের মতোই সাত পয়েন্ট নিয়ে, ভারতের সঙ্গে ফাইনালে চলে গেল রজার মিল্লার দেশ। বিদায় নিল মলদ্বীপ।
ফাইনালের প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে দু’দলই। শুক্রবার গ্রুপের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি ভারত এবং ক্যামেরুনই। তবে ম্যাচটা দু’দলের কোচ প্রস্তুতি ম্যাচ হিসাবে নেবেন না শুধুই নিয়মরক্ষার ম্যাচ হিসাবে, সেটা কোটি টাকার প্রশ্ন। কোভারমান্স মাঠ ছাড়ার সময় ধোঁয়াশা রেখে গেলেন, “আগে হোটেলে যাই। ফুটবলারদের ফাইনালে ওঠার অভিনন্দন জানাই। তার পর ঠিক করব স্ট্র্যাটেজি। দেখি নির্মল ছেত্রীর চোটের অবস্থাটা।”
সাধারণত এ রকম ম্যাচে নিজেদের তাস দেখাতে চায় না কোনও দল। তবে ক্যামেরুন জেতায় কোভারম্যান্সের মুখে ফিরেছে চওড়া হাসি। সঙ্গে আশঙ্কাও? বুধবার নেহরু স্টেডিয়ামে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ম্যাচে ইমানুয়েল বোসোর দল যা খেলল তাতে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। জোড়া গোল করা কিংগু পন্ড, মাকন থিয়েরিরা দেখালেন আফ্রিকান ফুটবলের বর্ণচ্ছটা। ক্যামেরুন তাদের দ্বিতীয় দল এনেছে নেহরু কাপে। সেরা ফুটবলাররা ইউরোপে খেলতে ব্যস্ত। যাঁরা এসেছেন তাঁরাই দেখালেন কী দ্রুত গতির ফুটবল খেলতে হয় চাপের ম্যাচ জিততে! পন্ডদের ভাল খেলার সুযোগ করে দিল প্রকৃতিও। সকালে সামান্য বৃষ্টি হলেও দুপুর থেকে রোদ ওঠায় শুকনো মাঠ পেল ক্যামেরুন। তবে কোভারম্যান্সের ল্যাপটপে নিশ্চয়ই উঠে এল বোসোদের রক্ষণের ফাঁকফোকর। যেখান দিয়ে ১-১ করে দিয়েছিল মলদ্বীপ। যা কোনও দিন করেন না তা এ দিন করলেন ভারতের কোচ। কোচিং টিম নিয়ে বিরাশি মিনিট পর্যন্ত ম্যাচ দেখলেন।মলদ্বীপ জিতলে ভারতে বিপদে পড়তে পারত। তা সত্ত্বেও এ দিন সকালে ইন্ডোর প্র্যাকটিসে ক্লিফোর্ড-মেহতাবদের উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন কোভারম্যান্স। সাধারণত ফুটবলারদের সব সময় খেলার পজিটিভ দিক দেখান উৎসাহ বাড়াতে। বব হাউটন দেখাতেন ভুলগুলো। ডাচ কোচ সেটা করেন অন্য ভাবে। প্রথমে সুনীল-গৌরমাঙ্গীদের ভাল দিকগুলো দেখান। যাতে তাঁরা উদ্বুদ্ধ হন। কোভারম্যান্স এ দিন বললেন, “মাঠের জন্য নেপালের বিরুদ্ধে নিজেদের খেলাটা খেলতে পারিনি। পরের ম্যাচে ভাল খেলতে হবে।” কোচের মনোভাবে খুশি ফুটবলাররা। ম্যাচের পর ফোনে ধরা হলে এক সিনিয়র ফুটবলার বললেন, “জানি না কোচের স্ট্র্যাটেজি কী হবে। তবে আমরা চাপমুক্ত হয়ে ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে খেলতে নামব।” কোভারম্যান্স এ দিনই অবশ্য গেয়ে দিয়েছেন, “ক্যামেরুন আমাদের থেকে চেহারার দিক থেকে অনেক শক্তিশালী।” |